সীতাকুণ্ড টাইমস ডেস্ক ঃ
সীতাকুণ্ড কুমিরার পাহাড়ের পাদদেশে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষ সকল প্রকার রাজনৈতিক মিছিল,সভা,সমাবেশ,কর্মকান্ডও মিটিং সম্পূর্ন রুপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) কুমিরা ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত আইআইইউসি’র এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে আইআইইউসি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর কে. এম. গোলাম মহিউদ্দীন এর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রেজিস্ট্রার কর্নেল মোহাম্মদ কাশেম পিএসসি (অবঃ)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. আবদুল হামিদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডীন প্রফেসর ড. মোঃ দেলাওয়ার হোসাইন, কলা অনুষদের ডীন ড. মোহাম্মদ রিয়াজ মাহমুদ, হাদীস বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড, নাজমুল হক নাদভী এবং নবনিযুক্ত প্রক্টর মোস্তফা মুনির চৌধুরী। প্রেস ব্রিফিং সঞ্চালনা করেন সহকারী পরিচালক, জনসংযোগ মোসতাক খন্দকার।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একটি বহুল নন্দিত এবং সফল উদ্যোগ এর নাম, যা জাতির জন্য ব্যাপক কল্যান বয়ে এনেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সেশনজট, অপরাজনীতি ও অপতৎপরতা মুক্ত উচ্চ শিক্ষা প্রদানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
সমূহ সারাদেশে একটি বিপ্লব সাধন করেছে। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এই বিপ্লবের প্রথম সারির অংশীদার।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ১৯৯৫ সালে তার যাত্রা শুর” করে অল্প সমযরে মধ্যে দেশ-বিদেশে সুনাম ও সুখ্যাতি লাভ করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় বার হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে যার মধ্যে প্রায দুই শত বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছ। এ বিশ্ববিদ্যালয থেকে ডিগ্রী প্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটগণ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিতে অনেক গুর”ত্বপূর্ণ পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থা ও গবেষণায এ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে বর্তমানে পঞ্চম ও চট্টগ্রামে প্রথম স্থানে রয়েছ। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন ৩৫০ জন শিক্ষকসহ প্রায পাঁচ শতাধিক শিক্ষক রযেেছন, তন্মধ্যে ১০১জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। এই বিশ্ববিদ্যালযরে গ্রাজুয়েটদের সংখ্যা প্রায চল্লিশ হাজার।
লিখিত বক্তব্যে ভিসি বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানাধীন কুমিরায় নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে ৪৩ একর জমির উপর প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষের অধিক বর্গফুট জায়গায় চল্লিশটি ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, আইআইইউসির সুন্দর শ্যামল সাজানো নিজস্ব ক্যাম্পাস ২০১২ এবং ২০১৫ সালে সারাদেশে ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে “প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার” লাভ করে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিগত ২৫ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটের শিকার হতে হয়নি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয বন্ধ থাকে নি। গুণগতমান ও নৈতিকতার সমন্বিত শিক্ষা প্রদানে সুদৃঢ থাকায় আমরা কেবল সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে এই সামনে চলায় হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। বিগত কিছুদিন যাবত আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, আমাদের সন্তানতুল্য কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ছাত্রসুলভ নয এমন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে । তাদের বির”দ্ধে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ডীন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট নানা অনৈতিক, অযৌক্তিক, অবৈধ ও অন্যায় দাবির অভিযোগ আসতে থাকে। এসকল দাবির মাঝে রয়েেেছ- ফেল করা ছাত্রকে পাস করিয়ে দেয়া, বিরাট অঙ্কের বকেযা টাকা মওকুফ করে দেয়া, নকলের অভিযোগে অভিযুক্তকে শাস্তির আওতামুক্ত করা, বকেয়া পরিশোধ না করে সনদপত্র উত্তোলন করতে চাওয়া, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিকট চাঁদা দাবি করা, পরীক্ষার হলে অনৈতিক সুবিধা দাবি করা ইত্যাদি।
কিন্তু নিয়মের পরিপন্থী এ সকল দাবি পূরণ করা সম্ভব না হলে তারা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী এবং দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের নামে পেশী শক্তির মাধ্যমে দাবি আদায়ে অন্যায্য চাপ দিতে থাকে। একইসাথে, তাদের কর্মকাণ্ডে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অনেক নজির ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান হয়। এর মাঝে রয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে শিক্ষকবৃন্দের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন, পিতৃতুল্য শিক্ষকবৃন্দকে শিক্ষার্থীদের সম্মুখে অকথ্য ভাষায গালিগালাজ ও হেনস্থা করা, হুমকি দেয়া, অফিস কক্ষ ভাঙচুর করা, শিক্ষকদের বাসভবনে বিশৃঙ্খলা করা ইত্যাদি।
প্রফেসর গোলাম মহিউদ্দীন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মাঝে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয চট্টগ্রাম এর একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ আবাসিক হল। এই হলের কারণে দূর-দূরান্ত হতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতেন এই ভরসায যে, তাদের সন্তানেরা এত দূরে হওয়া সত্ত্বেও অভিভাবক শূন্য থাকবে না; বরং শিক্ষকবৃন্দের তত্ত¦াবধানে তাদের সহপাঠীদের সাথে এক নিরাপদ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে নিজেদেরকে জীবনের পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুত করবে। এসকল পরিবেশ নিশ্চিত কল্পে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয চট্টগ্রাম এর আবাসিক হলগুলো বরাবর আস্থার পরিচয দিযেেছ। অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হয, আমাদের কিছু সন্তানের বির”দ্ধে আমাদের এ স্বনামধন্য হলগুলোর পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগ পাওযা গিয়েছে। এ সকল অভিযোগের মাঝে রয়েছে, হলে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ অবস্থান, বহিরাগতদের আশ্রয় প্রদান, হল প্রশাসনের সাথে অসহযোগিতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ, ডাইনিং-এ ফ্রি খাওয়া, ডাইনিং ম্যানেজারের নিকট হতে জোরপূর্বক টাকা ছিনতাই ইত্যাদি। এছাড়াও র্যাগিং এর নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং নেশাজাতীয দ্রব্যের বহুল ব্যবহারের মতো গুর”তর অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালযরে মূল কাজ জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ করা। এই কাজের মাধ্যমে আমরা সৎ এবং দক্ষ ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ তৈরি করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় যে সকল শিক্ষার্থী পড়তে আসে তারা তাদের অভিভাবকবৃন্দের পক্ষ হতে আমাদের নিকট আমানত। বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবক হিসেবে আমরা এ সকল শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিতে পারিনা, তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে নষ্ট হতে দিতে পারি না। আমাদের বিপথগামী শিক্ষার্থীরা যাতে ফিরে আসে, সেজন্য অভিভাবক হিসেবে আমরা বারবার তাদের সতর্ক করার চেষ্টা করেছি, সংশোধিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি এবং উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতিকে আমাদের সন্তানদের ভুল হিসেবে গ্রহণ করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। আজ এই সাংবাদিক সম্মেলন হতে আমার অত্যন্ত স্নেহের এ সকল সন্তানদের আবার অনুরোধ করতে চাই, তারা যেন এই উচ্ছৃঙ্খল আচরণগুলোকে অনুধাবন করে জ্ঞানচর্চায় মনোযোগী হয এবং সকল নেতিবাচক আচরণ পরিহার করে ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের মূল্যবান সময়কে ব্যবহার করে সুশৃংখল শিক্ষা জীবনে ফিরে আসে। আশা করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা এই উপদেশ এর গুর”ত্ব অনুধাবন করে অচিরেই তাদের জীবন গঠনে মনোযোগী হবে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী ও একজন শিক্ষক হিসেবে শুধু আমার কাছেই নয়, বিবেকবান সকলের জন্যই দুঃখজনক। প্রায বার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন, আট শতাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কর্মজীবন এবং তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় আপনাদের মাধ্যমে তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ হতে আপনারা অবগত আছেন যে, সর্বশেষ গত ২৭ শে জানুযারি ২০২০ তারিখে হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থীর উপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এই হƒদয় বিদারক ঘটনা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করে এবং তারা ক্লাস ছেড়ে প্রতিবাদে যোগ দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ শে জানুযারি ২০২০ তারিখে জর”রি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ এবং শ্রেণি কার্যক্রম অনিদিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিগত ৮ই অক্টোবর ২০২০ তারিখে আমাদের মাননীয প্রধানমন্ত্রী একটি বক্তব্য উল্লেখ করেন, “বিশ্ববিদ্যালয কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাইলে সরকার তাতে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না”। মাননীয প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয আইন ২০১০ এর ধারা ১৮ এবং ধারা ৩৭ অনুযাযী বিগত ২২৯ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুষ্ঠু ও সুন্দর শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে আজ হতে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয চট্টগ্রাম এর ক্যাম্পাসে র্যাগিং ও সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমনঃ সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।
তিনি বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা জ্ঞানের চর্চা কর”ক ও প্রতিভার বিকাশ ঘটাক। যা কিছু আমাদের আমানততূল্য সন্তানদের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে, সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ আমাদের এই আমানতের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের পরিচায়ক। আমরা আশা করি, আমাদের পরম স্নেহের সন্তানতূল্য ছাত্ররা এই বিশ্ববিদ্যালযরে সুনাম রক্ষায় জ্ঞানমুখি হবে। ছাত্র হিসেবে মানানসই নয় এমন কর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যস্ত না করে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মহারথীদের কাতারে নিজেদের শামিল করতে তাদের প্রতিটি মুহূর্তকে ব্যবহার করবে। আমাদের এই সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে গৃহীত। প্রিয় শিক্ষার্থীদের আহ্বান করব, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তারা যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। আমরা আশা করি, দেশবাসীর নিকট আমরা এমন এক বিশ্ববিদ্যালয উপহার দেব যা কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বে এই দেশের নাম উজ্জ¦ল করবে। পাশাপাশি, সকল এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবক, এলামনাই সহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবাযনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করছি।