সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / সীতাকুন্ড কুমিরা জেলেপাড়ায় আসামী ধরতে গিয়ে পুলিশ জনতা সংঘর্ষ,গুলি ঃ পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক,১১ জেলে আটক

সীতাকুন্ড কুমিরা জেলেপাড়ায় আসামী ধরতে গিয়ে পুলিশ জনতা সংঘর্ষ,গুলি ঃ পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক,১১ জেলে আটক

সীতাকুণ্ড টাইমস ডেস্ক ঃ
সীতাকুণ্ড কুমিরায় জেলে পাড়ায় এক যুবককে আটক করতে গিয়ে পুলিশ ও জেলেদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনার সময় ওই জেলেপাড়ায় এক বৃদ্ধা মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টা গুলি। এক পর্যায়ে জেলেরা পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে ঘিরে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আনা হয় চট্টগ্রাম থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স। ঘটনার পর রাতেই বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ১২টি দোকানঘর ও ৮টি বসতঘর ভাংচুর করা হয়েছে বলে জেলে সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। এছাড়া জেলে পল্লি থেকে ১২জনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে দাবী করেন জেলে সর্দাররা। তবে পুলিশ ১১জনকে আটকের কথা স্বীকার করেছেন।
ঘটনায় এক ইন্সপেক্টর, তিন এসআইসহ ১০ পুলিশ সদস্য রক্তাক্ত জখম হয়েছে। আর গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন জেলে সম্প্রদায়ের অর্ধশত নারী-পুরুষ। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, সোমবার রাত ১২টার দিকে সীতাকু-ের কুমিরা ইউনিয়নের বড় কুমিরা ঘাটঘর জেলেপাড়ায় রুবেল জলদাশ নামক এক যুবককে ঘূম থেকে তুলে আটক করেন সীতাকু- থানার এস.আই জাহেদ হোসেন জসীম। এসময় এলাকার এক বৃদ্ধা নারীসহ অন্যান্য যুবকরা তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চেয়ে বাধা দিলে জসীম ও সাথে থাকা ফোর্স তাদেরকে মারধর করে বলে জেলেরা জানান। এসময় বিলাম্বু দাসী (৬৫) নামক এক মহিলার আকস্মিক মৃত্যু হলে পুলিশের হামলায় ঐ বৃদ্ধা নিহত হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ফলে জেলেরা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে এস.আই জসীমসহ সঙ্গীয় অন্তত ৫ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে সীতাকু- থানা থেকে ফোর্স গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। শেষে কারা কারা এ হামলা চালিয়েছে তা জানতে জেলেদের সাথে আলোচনা শুরু করে সীতাকু- থানার ওসি (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেনসহ পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু আলোচনায় উভয় পক্ষের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ শুরু হলে পুলিশের সাথে জেলেদের সংঘর্ষ শুরু হয়। জেলেরা বিভিন্নরকম বোতল, ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকলে পুলিশও গুলি চালাতে থাকে। এসময় অন্তত শতাধিক রাউন্ড গুলি চলে বলে এলাকাবাসীর অভিমত। এতে ওসি (তদন্ত) আফজাল হোসেন ও দুই পুলিশ সদস্য জখম হন। আহত হন জেলে সম্প্রদায়ের পক্ষের অর্ধশত নারী-পুরুষ।
আটককৃত জলদাশরা হল পরিমল ,কৃষান চন্দ্র দাশ,সৌরভ ,সাজু,রুপম,বাসন, সঞ্জয় দাশ,সমীর শীল ,হৃদয় দাশ রাজীব দাশ
খবর পেয়ে সেখানে সীতাকু- মডেল থানা ওসি মো. দেলওয়ার হোসেন ও চট্টগ্রাম থেকে আরো অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে উপস্থিত হয়। পাশাপাশি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী ও ইউপি সদস্যসহ অন্যরা সেখানে পৌঁছান। কিন্তু রুবেলকে আটক ও বিলম্ব দাসীর মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজিত জেলেরা পুলিশকে ঘিরে অবরুদ্ধ করে রাখে। রাত ১টার পর পুলিশের বিশাল বাহিনী অস্ত্র নিয়ে আর অন্য পাশে শত শত জেলেরা লাঠি-সোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। রাত ২টার পর পুলিশ ও বহিরাগত কিছু লোক জেলে সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ঘরে হামলা শুরু করে। ভাংচুর করে একের পর এক বসতঘর ও দোকানপাট।
স্থানীয় বাসিন্দা জেলে সুবল দাশ জানান, পুলিশ নিরপরাধ রুবেল জলদাশকে ঘর থেকে নিয়ে যাচ্ছিল। অথচ তার বিরুদ্ধে থানায় কোন জিডিও নেই। এ কারণ জানতে চাইলে বৃদ্ধা মহিলাটিকে মারধর করে। এতে তিনি মারা যান বলে জানা যায়। ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে। তবে পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যান দাবী করছে মহিলাটি স্ট্রোকে মারা গেছে।
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ী রুবেলকে গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়ায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। এসময় একটি বৃদ্ধ নারী পুলিশের হামলায় নিহত হয়েছে-এমন গুজব ছড়িয়ে পুলিশের উপর চড়াও হয় জেলেরা। জেলেদের হামলায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালিয়েছে। তবে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছে তার জানা নেই। তিনি বলেন, ঐ নারী বয়স্ক। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান। কিন্তু জেলেরা তাঁর কথাও মানছেন না। পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা আহত সীতাকু- সীতাকু- মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আফজাল হোসেন বলেন, ৩০ হাজার পিচ ইয়াবা সন্দ্বীপে চালান হবে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে সন্দেহবাজন কুমিরা জেলেপাড়ার বাসিন্দা রুবেল দাসকে আটক করে পুলিশের একটি টিম। এসময় জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা এস.আই জসীম ও সঙ্গীয় ফোর্সের উপর হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে তারা সেখানে গেলে জেলেরা তিনিসহ অন্তত ২৫ জন পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ব্যাপক হামলা চালায়। সেসময় রাস্তার লাইট নিভিয়ে দেয় তারা। ফলে অন্ধকারে তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। জেলেদের মদের বোতল, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এস.আই আলীম ও সেকেন্ড অফিসার সুজায়েত হোসেন আহত হন। এছাড়া তিনি ওসি (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেন, কনস্টেবল কামরুলসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই আহত হয়েছেন বলে জানান। পরে চট্টগ্রাম ও থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন। তবে ওসি তদন্ত দাবি করেন ঐ মহিলার মৃত্যুর সাথে পুলিশের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ, আসামি গ্রেপ্তার করতে যাবার আগেই তার মৃত্যু হয়েছিলো। এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করে জেলেরা ইয়াবা ব্যবসায়ী রুবেলকে ছিনিয়ে নেওয়ায় এসব ঘটনা ঘটেছে।
সীতাকু- মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় কুমিরা জেলেপাড়া এলাকা থেকে ১১জনকে আটক করা হয়েছে। তবে বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুরের বিষয়টি তার জানা নেই। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুইটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
কুমিরা জেলে পাড়ার সর্দার বাচা দাস বলেন, রুবেল ইয়াবা ব্যবসার সাথে কখনো জড়িত ছিলো না। তার বিরুদ্ধে থানায় জিডিও নেই। অথচ পুলিশ তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজানোর চেষ্ঠা চালায়। আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন প্রতিরোধ করে। এতে জেলে সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ থেমে থেমে ব্যাপক গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ একজনসহ অর্ধশত জেলে নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। রাতে পুলিশ ও বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী জেলেপাড়ার তান্ডব চালিয়ে দোকান ও বসতঘর ভাংচুর করে বলে দাবী করেন তিনি । এছাড়া পুলিশ জেলে পল্লীর বিভিন্ন ঘর থেকে ১২জনকে আটক করে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *