সংবাদ শিরোনাম
Home / আইন আদালত / সীতাকুণ্ডে ইয়াবা কেলেঙ্কারিঃ বারআউলিয়ায় হাইওয়ে থানার ২ এসআই সহ ৫ পুলিশ প্রত্যাহার

সীতাকুণ্ডে ইয়াবা কেলেঙ্কারিঃ বারআউলিয়ায় হাইওয়ে থানার ২ এসআই সহ ৫ পুলিশ প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক,সীতাকুণ্ড টাইমসঃ
পাচারকালে চালান ধরে ইয়াবা রেখে আসামী ছেড়ে দিয়ে ৬৬ লাখ টাকা মূল্যের ২২ হাজার পিস ইয়াবা আত্মসাতের চেষ্টার ঘটনায় সীতাকুণ্ডে হাইওয়ে পুলিশের দুই সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) সহ ৫ পুলিশকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যাহার হওয়া ৫ পুলিশ হলেন-হাইওয়ে পুলিশের বার আউলিয়া থানার এসআই মহিউদ্দিন, এসআই আদম আলী।, কনস্টেবল মামুন, ইমাম হোসেন, ও মোস্তফা।

হাইওয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৭ মে সোমবার বিকালে বারআউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের এসআই মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের পুলিশ দল মহাসড়কে দায়িত্বরত অবস্থায় ২১ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ ( যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৬ লাখ টাকা।) গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর থানার বারান্ডা গ্রামের তসলিম উদ্দিন খোন্দকারের পুত্র মো. মোস্তাকিম (৩৬) নামক এক যুবককে আটক করেন।

কিন্তু অভিযোগ উঠে এসআই মহিউদ্দিন ইয়াবা পাচারকারীকে থানায় না এনে ছেড়ে দেন এবং জব্দ ইয়াবা আত্মসাত করেন।

অপরদিকে মোস্তাকিমের ইয়াবা পাচারের তথ্যটি পূর্ব থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম পর্যবেক্ষণ করছিল। হাইওয়ে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেলেই বাসটি ঢাকায় পৌছলে গোয়েন্দা পুলিশের টিম বাসটিতে তল্লাশী চালিয়ে কোন ইয়াবা না পেয়ে মোস্তাকিমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হাইওয়ে পুলিশ ইয়াবা আটক করে তাকে ছেড়ে দিয়েছে বলে জানায়।

এ তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি তদন্তের জন্য কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানায়। একই দিন রাতে পাচারকারী মোস্তাকিমকে নিয়ে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানায় আসেন কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লার ডিআইজি আতিকুল ইসলাম, হাইওয়ে এসপি কুমিল্লা নজরুল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকতারা। তারা সঙ্গে আনা মুস্তাকিমকে বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের মুখোমুখি করলে ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে। এবং এসআই মহিউদ্দিন, এসআই আদম আলী।সহ অভিযুক্ত ৫ পুলিশকে সনাক্ত করে মোস্তাকিম।

এর পর তাৎক্ষনিকভাবে এসআই মহিউদ্দিন প্রত্যাহার করে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

কিন্তু ইয়াবা বাণিজ্যের এই তথ্য হাইওয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে বলে গোপনে ব্যবস্থা নিলেও এ তথ্য প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চাননি সীতাকুণ্ড হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।

ওই দিন হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম এসআই মহিউদ্দিনকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, আসলে এ ধরণের জিনিসপত্র উদ্ধার করলে কিছু নিয়ম মানতে হয়। এসআই মহিউদ্দিন সেসব প্রসিডিউর মেনটেন না করায় আমরা তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কুমিল্লা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেছি।

এদিকে অভিযুক্ত এসআই আদম আলী ৩ কনেস্টেবলের বিরুদ্ধে ৩দিন ধরে তদন্ত শেষে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তাদের হাইওয়ে থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে এসআই আদম আলী পাঠক ডট নিউজের সীতাকুন্ড প্রতিনিধিকে বলেন, সেদিনের ইয়াবা আটকের ঘটনায় জন্য আমাদেকে দায়ী করেছে। তাই আমরা আজ হাইওয়ে থানা থেকে জেলা পুলিশ লাইনে চলে যাচ্ছি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি আহসান হাবিব পাঠক ডট নিউজকে বলেন, ঘটনার সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না আমি ছুটিতে ছিলাম পরে কাজে যোগ দিয়ে জেনেছি। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের এখান থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

এদিকে আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, গত সোমবার গভীর রাত তিনটার সময় উপজেলার মাদাম বিবির হাট এলাকায় ঢাকামুখী শ্যামলী পরিবহন (চট্টমেট্টো ব ৫১-২১৫৫) বাসে অভিযান চালিয়ে হাইওয়ে পুলিশ ২১ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মুন্তাকিন (৩৬) নামের এক যুবককে আটক করে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার এসআই মহিউদ্দিন ভুঁইয়ার নেতৃত্বে বাসে তল্লাশী করে এসব ইয়াবা উদ্ধারের খবর পেয়ে পরদিন মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকরা হাইওয়ে থানায় গিয়ে জানতে পারেন, বাস থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে তবে কোন আসামী আটক করা যায়নি।

বেলা ১২ টার দিকে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানায় আসেন হাইওয়ে থানার কুমিল্লা রিজিওন এর এসপি নজরুল। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামীকে ঢাকায় আটক করা হয়েছে, তাকে নিয়ে আসা হচ্ছে। সকাল থেকে সাংবাদ কর্মীরা সারাদিনেও উক্ত ইয়াবা উদ্ধারের কোন তথ্য পাইনি।

তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে ২১ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট আটকের পর পুলিশ আসামীকে ছেড়ে দিয়েছে। তাকে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কুমিল্লা থেকে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানায় নেয়া হয়।

এসময় আটক মোস্তাকিম এর ছবি তুলতে গেলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি হলাম গাড়ির ড্রাইভার, গাড়িতে কে বা কারা ইয়াবা ট্যাবলেট রাখছে তা আমি জানিনা। আমাকে কেন আটক করা হলো? আমাকে আটকের পর ডিবি পুলিশ অনেক নির্যাতন করেছে। আমাকে তাদের শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *