সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / একটু বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিঃ সীতাকুণ্ড নামার বাজার ব্রীজটি পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে

একটু বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিঃ সীতাকুণ্ড নামার বাজার ব্রীজটি পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে

এল কে চৌধুরী, সীতাকুণ্ড টাইমসঃ

সীতাকুণ্ড পৌরসদরের নামারবাজার ব্রিজ। ব্রিজটির নিচের পাকা সড়কটি বছরের বেশির ভাগ সময় হাঁটুপানিতে তলিয়ে থাকে। ব্রিজটি নিয়ে চরম ক্ষোভ আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ ব্রিজটির নিচে সড়ক দিয়ে কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের চলাচলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার সময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে অপরিকল্পিতভাবে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নামারবাজার ব্রিজের নিচের অংশের সড়কটি নৌকা আকৃতির। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই দুই দিক থেকে পানি এসে ব্রিজের নিচের ঢালু অংশে জমতে থাকে। এতে সেখানে রীতিমতো গভীর জলাশয় সৃষ্টি হয়ে যায়। আর এ পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ না থাকায় অনেক দিন স্থায়ীভাবে জমে থাকে।
অথচ মুরাদপুর সি-রোড নামক সড়কটির সাথে পৌরসদরের সাথে দক্ষিণে কুমিরা থেকে উত্তরে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্বের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের হাবীব রোডের সংযোগ আছে। এছাড়া এটি পৌরসদরের বেশ কয়েকটি গ্রাম, মুরাদপুর ইউনিয়নে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাও। সব মিলে এই ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন ২০হাজার মানুষ চলাচল করে।
আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা তাপস নন্দী জানান, ব্রিজটির নিচের পাকা সড়ক বছরের বেশির ভাগ সময় হাঁটুপানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে তাদেরকে জামা-কাপড় ভিজিয়ে পার হতে হয়। এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে চায় তারা।
ব্রিজটি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন নামারবাজার এলাকার বাসিন্দা সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম হেদায়েত। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকায় নামারবাজার ব্রিজটি এখন পৌর এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষের ‘পথের কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ওই সড়কে শুধু যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে তা-ই নয়। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার সময় নামারবাজার ব্রিজটি উচ্চতা কম রাখায় ফায়ার সার্ভিসের একটি বড় গাড়িও ওই পথে প্রবেশ করতে পারে না। একদিন বৃষ্টি হলে গ্রামের নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী নির্বিশেষে সবাইকে কাপড় হাঁটুর ওপর তুলে চলাফেরা করতে হয়। মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা বন্ধের পর এ পথে অসংখ্য সিএনজি অটোরিকশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত শুরু করে। সেগুলোও এখানে এসে পানিতে তলিয়ে যায়। কার-মাইক্রোবাসের ভেতরে পানি ঢুকে যায়।
তাঁরা জানান, গ্রামবাসী এ সমস্যা নিয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধর্না দিলেও ব্রিজটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উল্ল্লেখ করে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে কোনো সমাধান হচ্ছে না।
পৌরসদরের নামারবাজার ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মো. মাসুদুল আলম বলেন, ব্রিজের নিচে সারাবছর পানি জমে থাকায় মানুষ আমাকে এবং মেয়র সাহেবকে পরিত্রাণের জন্য বারবার দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু এ অংশটি সওজের। তাই ইচ্ছে থাকলেও সেখানে হাত দিতে পারি না। তবে পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশে বিভিন্ন ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। কয়েক বছরে বহু টাকার কাজ করেছি। কিন্তু মূল অংশটুকু ঢালু হওয়ায় সেখানে পানি জমে থাকছেই।
পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুন্নবী বলেন, মহাসড়ক চার লেনে রূপান্ত রের সময় নামারবাজার ব্রিজটি অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। নিচের সড়কটি ও উপরের ব্রিজের মধ্যে দূরত্ব খুবই কম। জলাবদ্ধতা দূর করতে নিচের ঢালু সড়ক ঢালাই করে অনেক উঁচু করতে হবে। এর বিকল্প নেই। কিন্তু সড়ক উঁচু করলে কোনো যানবাহন চলার সময় উপরের ব্রিজে বাধাগ্রস্ত হবে। তাই যান চলাচল বন্ধই হয়ে যাবে একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তাতে এক সমস্যা সমাধান হয়ে আরেক সমস্যার জন্ম হবে।
সড়কটি যে অর্ধলক্ষ মানুষের দুর্ভোগের কারণ তা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বদিউল আলম। তিনি বলেন, নামারবাজারের উপর দিয়ে যাওয়া মহাসড়ক চার লেনের ব্রিজটি নির্মাণের সময় বেশি উঁচু না করায় এবং নিচের সড়কটি বেশি ঢালু হওয়ায় চারপাশের পানি গড়িয়ে সড়কের উপর চলে আসে। এ অংশ সওজের বলে আমি সেখানে কাজ করতে পারি না। এছাড়া প্রতিদিন মোটর চালিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হয়। কিন্তু এখানে পানির চাপ কমাতে বারবার লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ড্রেন তৈরিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। তবুও সমস্যার সমাধান হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *