সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / কালের সিঁড়ি ডিঙিয়ে বেঁচে থাকুক একজন দেবাশিস ভট্টাচার্য – আতাউল হাকিম আরিফ

কালের সিঁড়ি ডিঙিয়ে বেঁচে থাকুক একজন দেবাশিস ভট্টাচার্য – আতাউল হাকিম আরিফ

আতাউল হাকিম আরিফ,সীতাকুণ্ড টাইমসঃ

আশির দশকের দিকেই মূলত পাঠ্য বইয়ের বাইরেও কিছুকিছু পড়ালেখা করতে শুরু করেছি।যতটুকু মনে পড়ে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়,শরৎচন্দ্রের গল্প, উপন্যাস ছিল আমার প্রথম দিকের পড়া, এরপর-ই মীর মোশারফ হোসেনের বিষাদসিন্ধু,নজরুলের মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাস পড়েছিলাম।নব্বইয়ের দশকে এসে পড়া শুরু করি অনেক গল্প, উপন্যাস কবিতা।আখতারুজ্জামান ইলিয়াস,অদ্বৈত মল্লবর্মন, বিমল মিত্র, কায়েস আহমেদ,আবুল বাশার, বোরহানউদ্দিন খাঁন জাহাঙ্গীর, হাসান আজিজুল হক, আবু ইসহাক, সৈয়দ ওয়ালী উল্ল্যাহ,আব্দুল গাফফার চৌধুরী, শাহেদ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ, অন্নদা শংকর রায় সহ অসংখ্য লেখকের বই পড়া শুরু করেছি।তদ্রুপ নব্বইয়ের কয়েকজন গল্পকার / কথাসাহিত্যিক আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করেছে তাঁদের মধ্যে শহীদুল জহির, মামুন হোসাইন, নাসরিন জাহান, দেবাশীষ ভট্টাচার্য, হুমায়ূন মালিক, মহিবুল আজিজ, ইনতিয়ার শামীম প্রমূখ।কবিদের তালিকাও নেহায়েত ছোট নয়, মিনার মনসুর, টোকন ঠাকুর, ব্রাত্যরাইসু,চঞ্চল আশরাফ,মারুফ রায়হান,
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ প্রমুখ।সাহিত্যের প্রতি এই নেশাটি জাগিয়ে দিয়েছিল মূলত আমার বাবা এবং বড় ভাই ড. মনওয়ার সাগর।একই সাথে সীতাকুণ্ডের সন্তান আশির দশকের স্বীকৃত গল্পকার দেবাশিস ভট্টাচার্য আমাদের প্রেরণা ছিল।দাদার বই পড়তাম এবং ভীষণ ভালোলাগা অনুভব করতাম।অপেক্ষা করতাম কখন আসবে সাগর ভাই আর দেবাশীষ দাদার নতুন বই। আজ লেখার উদ্দেশ্যে মূলত দেবাশিস দাদা।দেবাশিস দাদাকে লিখতে যতটুকু পাড্ডিত্য দরকার ততটুকু আমার নেই। একজন দেবাশিস ভট্টাচার্যকে নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায় , বলা হয়ে উঠেনা কখনোই! তবুও নির্বাচিত গল্পের মূল্যায়নে যৎকিঞ্চিৎ বলছি…..
প্রজাপতিটা উড়ছে লাল সুতোয় বাঁধা, দুষ্ট ছেলের হাতের ইশারায়। কোমরে রেশমি ঘুনশি বাঁধা উলঙ্গ ছেলেটা, তার হাতে সুতা। তার হাতে আবার প্রজাপতি ঘুড়ির মতন, ভাবা যায় না, যেন বাঁদরের গলায় মুক্তার হার।আরেকটা প্রজাপতির ঘুড়ি বানাবো আমি। ছেড়ে দেবে সুতো, যতদূর যায়। আমার কুড়িয়ে পাওয়া মরা প্রজাপতিটার রঙে হবে তার ডানা। সেও ভাসবে বাতাস কাঁপিয়ে। সুতোয় থাকবে বাতাসের কাঁপন। সোঁ সোঁ শব্দে ঘুড়িটা এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চলে যাবে। আর সেই ন্যাংটা ডিগবাজি দেবে, লুটোপুটি খাবে আমার কাণ্ড দেখে।
দূরে কোথাও একটা আলো জ্বলছে। ক্রমশ জলের উপর দূরে দূরে আলোটা নিকটতর হচ্ছে। ঢেউয়ের ওপর আলো পড়লে মুকুট হয়ে যায়। গোল ডিমের মত সে আলো, হয়তো এবার মাছ ধরা শেষে শীত কুয়াশা ভেঙে জেলে নৌকাগুলো ফিরে আসছে। একদিন মানুষকে সব ত্যাগ করে দূরে চলে যেতে হয়। ছেড়ে যাওয়া…. এটাই পরম সত্য।
পেছনে পড়ে থাকে সে স্মৃতিময় দিন। আদরের প্রিয় আত্মীয় পরিজন। সবই পড়ে থাকে একা একা। কান্নার পর কান্না আসে। একসময় পরিবারের অন্য কেউ হাল ধরে এটাই পৃথিবীর নিয়ম…। কমলারাও সব নিয়ম ভেঙে এগিয়ে যায়।
সুধাংশু, কমলা, জ্ঞানদা এরাই প্রকৃত প্রাকৃতজন। দেবাশিস ভট্টাচার্য, প্রাকৃতজনদের ভাষা বোঝেন। তিনি অবলীলায় তুলে আনেন সেসব চরিত্র সুনিপুণভাবে তার গল্পে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া তার গল্পের মানুষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তাল তাল রক্তে তাদের হাড়গোড় মাংস এ মিছিলে চরিত্রগুলো উঠে আসে পরম মমতায় তার গল্পের ছত্রেছত্রে। আশির দশকে যে ক’জন শক্তিমান লেখক, কথাশিল্পের উঠোনে পদচারণায় মুখর ছিলেন দেবাশিস ভট্টাচার্য তাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর লেখায় বিমূর্ত হয়ে ওঠে প্রকৃতি, প্রেম, নিসর্গ এবং মানুষ। মানুষকে ভালোবেসে তিনি সৃষ্টির নেশায় বুঁদ হয়ে আছেন। মানুষই যেন তার আরাধ্য। তার কলম অপশক্তি ও সাম্প্রদায়িক ভন্ডামির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার।’ শব্দের খেলায় আত্মহারা হয়ে তিনি নিভৃতে এঁকে যান জীবনের জলছবি। জীবন এবং প্রকৃতির প্রতি তাঁর বিচিত্র উপলদ্ধি প্রতিটি গল্পই পাঠকদের মনে আনন্দ সঞ্চার করবে। দেবাশিস ভট্টাচার্য শুধু গল্প লেখেন না, গল্পে ছবিও লেখেন। তার এই বিচিত্র উপলদ্ধিকে আত্মস্থ করতেই আমাদের এই প্রয়াস। আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত তার ভালো গল্পগুলোকেই নির্বাচিত গল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হল। আশাকরি দেবাশিস ভট্টাচার্যের নির্বাচিত গল্প পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করবে।
পাঠককে আরো অবহিত করছি- দেবাশিস ভট্টাচার্য’র জন্ম ১ ডিসেম্বর ১৯৬২ সালে সীতাকুণ্ড উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে। পিতা মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন সাহিত্যানুরাগী ও সঙ্গীতজ্ঞ। দেবাশিস ভট্টাচার্য বর্তমানে উপ-ডাককর্তা হিসেবে কর্মরত । কবিতা, ছড়া, নাটক সহ সাহিত্যের সব মাধ্যমে সমানভাবে লিখলেও তিনি গল্পকার হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। আশি দশকের উল্লেখযোগ্য গল্পকার হিসাবে বাংলা একাডেমী ঢাকা, কলকাতা বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত নাসরিন জাহান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের গল্প আশির দশক’ গ্রন্থে তাঁর ‘পোকা জাতের মানুষ’ গল্পটি অন্তর্ভুক্ত হয়। তাছাড়া দুই বাঙলার শ্রেষ্ট গল্পে তাঁর লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।গত বৎসর৷ পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পদত্ত একুশের পদক।এখনও তিনি অনবরত লিখে চলেছেন।

দেবাশিস ভট্টাচার্যের প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহঃ
আনন্দ মৃত্যুর কাছে /পোকা জাতের মানুষ ও অন্যান্য গল্প/আলোকিত কফিন/বিনয় বাঁশি এক বায়েনের গল্প/জাদুর ঢোল/সুকান্ত দুঃখের বেহালা/দেবেন শিকদার : এক কমরেডের গল্প/পাখিঘর/মেঘপ্লাবন/জল জলেশ্বর।
চলতি বছর গ্রন্থমেলায় বেরিয়েছে দাদা “নির্বাচিত গল্প” গ্রন্থ। আশা করছি বোদ্দা পাঠক গল্পগ্রন্থটি সাদরে গ্রহণ করবেন।এটি প্রকাশ করেছে বলাকা প্রকাশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *