সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / কুমিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের নজির আহমদ চৌধুরী আমার শিক্ষাগুরু, আমার প্রেরণা- জয়নুল টিটো

কুমিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের নজির আহমদ চৌধুরী আমার শিক্ষাগুরু, আমার প্রেরণা- জয়নুল টিটো

জয়নুল টিটো, সীতাকুণ্ড টাইমস ঃ

সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক নজির আহমদ চৌধুরীর ২১ তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ।
মরহুম নজির আহমেদ চৌধুরু মহান গুরু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩২ সালের পয়লা জানুয়ারি চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায়। তার জীবন প্রবাহ ছিল বৈচিত্রময়তায় পরিপূর্ণ। আমার সীমিত জ্ঞানে এক নজরে স্যারের বর্ণনা এভাবে হতে পারে:

জন্ম: ১৯৩২ সালের জানুয়ারি, চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানা।

প্রথম স্কুল: শিলাইগড়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়।

১৯৪৪ সাল: আনোয়ারা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় বৃটিশ সামরিক বাহিনীতে স্বল্প সময়ের জন্য যোগদান।

১৯৪৫ সাল: পটিয়া এ.এস.রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্র।

১৯৪৬ সাল: নবম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় বি-সাব ডিভিশন মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন পান।

১৯৪৭: সাতকানিয়া মডেল হাইস্কুলে দশম শ্রেণীর ছাত্র।

১৯৪৮ সাল: সাতকানিয়া ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ।

১৯৪৯ সাল: কানুনগো পাড়া স্যার আশুতোষ কলেজ মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের ছাত্র শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন।

১৯৪৯-৫০ সাল: চট্টগ্রাম কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে অংক ও ইংরেজি শিক্ষক এবং ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা প্রশাসক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন।

১৯৫৮ সাল: সিনিয়র অংক ও ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে সীতাকুণ্ড থানার মছজিদ্দা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান যা তার তার শিক্ষকতা জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করে।

১৯৬৩ সাল: ১লা জুলাই কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

১৯৬৮ সাল: ১লা জুলাই আনোয়ারা থানার বশিরুজ্জামান মেমরিয়াল ইনস্টিটিউটে যোগদান। এখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসেবে নাজিরহাট কেন্দ্রে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন।

১৯৭০ সাল: নিত্যানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। চাকরিরত অবস্থায় সিটি কলেজ নৈশ শাখা হতে ২য় বিভাগে বিএ পাশ করেন।

১৯৭৩ সাল: তিনি ভর্তি হন ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে।

১৯৭৪ সাল: এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বি.এড পরীক্ষায় ১ম শ্রেণীতে প্রথম হন এবং University Awared লাভ করেন এবং একই সনের ২৩ আগস্ট পুনরায় কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

তার পরের ইতিহাস নজির আহমদ চৌধুরী ও কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাফল্যের ইতিহাস। এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ শিক্ষক জীবনের স্বীকৃতিস্বরুপ:

১৯৯৪ সালে: জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও বিশ্ব নাগরিকত্ব লাভ করেন।

নজির আহমদ চৌধুরী স্যারের বর্ণাঢ্য জীবনের কিছু অংশই এখানে উল্লেখিত। আসলে বড় মাপের মানুষদের লেখার কালিতে পুরোটা ধারণ করা যায় না। ধারণ করতে হয়ে মননে। স্যারকে আমি ভালবাসি। আমার এই ভালবাসা ইতোপূর্বে অনেককে করেছে ক্ষুব্ধ। তাতে আমার করার কিছুই নেই। প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কত শিক্ষককেই তো পেলাম। সবারই কমবেশি অবদান নিজের জীবনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। কিন্তু একজন নজির আহমদ হৃদয়ের মনিকোঠায় কেবল একজনই। স্যারের ছোঁয়ায় স্কুল জীবনের সেই দস্যি ছেলেটি আজ প্রস্ফুটিত। তিনি এমনই একজন মহান ব্যক্তি। যার যাদুস্পর্শে গুটিকয়েক ভাঙ্গা চেয়ার টেবিল নিয়ে শুরু করা কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় একদিন হয়ে যায় দেশের সেরা স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। মনস্তাত্ত্বিক সংশোধনীর পদ্ধতিতে পরিচালিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র স্কুল। আমরা শুনেছি বিবিসি ও রেডিও পিকিং হতে এই স্কুলের সাফল্যের বর্ণনা। আজ স্যার বেঁচে নেই। তার প্রতিষ্ঠানটি টিকে আছে মাথা উঁচু করে।

আমার সাথেও স্কুলের প্রত্যক্ষ কোনো যোগাযোগ নেই। তবে বিশ্বাস করি, নজির আহমদ স্যারের ছাত্ররাই কেউ কেউ এই স্কুলের শিক্ষক কিংবা পরিচালনায় আছেন। তাদের হাতে হাত ধরে স্কুলটি ধারাবাহিক সফলতায় আছে বোধ করি।

একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে যখন স্কুলের পাশ দিয়ে যাতায়াত করি, তখন চোখ বুজে সেই ফেলে আসা সময়কে ধারণ করি। আমি ঘ্রাণ পাই। হেঁটে যাচ্ছেন একজন নজির আহমদ চৌধুরী স্কুলের বারান্দা ধরে। কালো কোটপরা বয়সী সুন্দর শুভ্র পুরুষ। যার কপালের ভাঁজে খেলা করে স্কুল ঘিরে ভবিষ্যৎ প্রকল্প পরিকল্পনা। আমি আরও টের পাই-স্কুলের ইট-পাথরগুলো জপছে নজির আহমদ স্যারের নাম। আমি বিশ্বাস করতে চাই, স্কুলের বর্তমান শিক্ষাগুরুদের ভেতর নতুন নতুন নজির আহমদ চৌধুরীর জন্ম হবে। যাদের স্মরণ করবে তাদের ছাত্ররা বহুবছর পর এমনই করে। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত হতে।

কবির ভাষায়-
“চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়,
নয় সম্পর্ক ছিন্ন করা
চলে গেলে আরো অধিক কিছু
থেকে যায়,এই না থাকা জুড়ে….”

স্যার আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার এই না থাকাটা সম্পর্কের পরিসমাপ্তি নয়। আরো অধিক হয়ে তিনি রয়ে গেলেন আমার কিংবা আমাদের মাঝে এই না থাকার পরও। পরম করুণাময়ের কাছে আমার চির প্রর্থনা-হে আল্লাহ! আমার স্যার যেন জান্নাতবাসী হন (আমিন)।

– প্রাক্তন ছাত্র জয়নুল টিটো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *