সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / ‘ জ্বী, আমি আজাদীর হাসান আকবর

‘ জ্বী, আমি আজাদীর হাসান আকবর

সীতাকুণ্ড টাইমস ডেস্কঃ

অনেকসময় কোথাও ফোন করে ‘হ্যালো। ভাই, আমি হাসান আকবর বলছি, —’ অপর প্রান্ত থেকে অধিকাংশ সময়ই পাল্টা প্রশ্ন আসে, ‘আজাদীর হাসান আকবর?’ ‘জ্বী ভাই। আমি আজাদীর হাসান আকবর বলছি।’ অতপর কথা শুরু হয়। এগুতে থাকে। দৈনিক আজাদীর সাথে আমার এই একাত্ম হয়ে যাওয়ার কাহিনী নতুন নয়, বহু পুরানো। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও নানা জায়গায় এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। ‘উদ্দেশ্যহীন’ কিংবা ‘দূরের টানে বাহির পানে’র অগুনতি পাঠক একইভাবে প্রশ্ন করেন। মুখোমুখি কথা বলার সময়ও এমনতর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় আমাকে। কেউ কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে সাথে সাথে পাল্টা প্রশ্ন, ‘আজাদীর হাসান আকবর?’
হ্যাঁ, এভাবে দিনে দিনে আমার আমিত্ব আজাদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মিলিয়ে গেছে আমার পরিচয়। আমার জন্ম, বেড়ে উঠা সবই যেন আজাদী তার মোহনীয় ধারায় মিশিয়ে দিয়েছে। আমাকে, হ্যাঁ, আপাদমস্তকের এই আমাকে আজাদীর ‘আমি’ বানিয়ে ছেড়েছে!!
বহুদিন আগের কথা। ২৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মাত্র দশদিন পর ১৯৮৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীতে যোগ দিয়েছিলাম আমি। যোগ দিয়েছিলাম বলতে তেমন কোন পদ পদবী নিয়ে নয়, দৈনিক আজাদীর ‘সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি’ হিসেবে কাজ শুরু করার সুযোগ পেয়েছিলাম। দৈনিক আজাদীর সাবেক চিফ রিপোর্টার, চট্টগ্রামের কৃতি সাংবাদিক ওবায়দুল হক সাহেব সীতাকুণ্ডে বেড়াতে গিয়ে আমাকে পেয়েছিলেন। ভিতরের আগ্রহ দেখে তিনি আমাকে ‘ আজাদী প্রতিনিধি’ হওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার কিংবদন্তী, দৈনিক আজাদীর সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ সাহেবের কাছে এনে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সীতাকুণ্ড থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। অতপর সেই যে লেগে গেলাম। লেগে থাকলাম। আর কখনো কোথাও যাইনি। পেছনে ফেরারও সুযোগ হয়নি।
নববিবাহিত স্ত্রীকে সিনেমা দেখাতে প্রথমবার নিয়ে গিয়েছিলাম বাড়বকুণ্ডের পরাগ সিনেমা হলে। পৌঁছে দেখি দুইপক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষ। রক্তারক্তি, হানাহানী ব্যাপার। কাঁধের ব্যাগে থাকা ইয়াসিকা এমএফ-২ ক্যামেরায় মারামারির ছবি তুলে বউকে পরিচিত একটি জুতার দোকানে বসিয়ে রেখে ‘ আসছি’ বলে চলে এসেছিলাম শহরে। সিরাজউদ্দৌলা রোড়ের মল্লিকা স্টুডিওতে ফিল্ম ডেভলপড এবং গ্লোসি পেপারে সাদা কালো ছবি প্রিন্ট করিয়ে ছুটেছিলাম অফিসে। সেখানে মারামারির রিপোর্ট লিখে ছুটতে ছুটতে গিয়ে বাস ধরেছিলাম। জুতার দোকানে গিয়ে দেখি নববধূ বসেই আছে। মোবাইল পেজার কিছুই ছিল না তখন। কোথায় হাওয়া হয়ে গেলাম, কখন ফিরবো বা আদৌ ফিরবো কিনা তার কিছুই জানে না বেচারি। বিয়ের মাত্র কয়েকদিনের মাথায় জুতার দোকানে একা ফেলে রেখে নিউজের নামে স্বামীর শহরের অফিসে চলে যাওয়ার ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছিল বেচারি।তার সিনেমা দেখার বারোটা বাজিয়ে বেশ রাতে সেদিন বাড়ি ফিরেছিলাম আমরা। মারাত্মক রকমের মন খারাপের মাঝে সেদিনই সে বুঝে গিয়েছিল যে, তার চেয়ে আমার জীবনে ‘সাংবাদিকতাই’ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তাই সেও আর কোনদিন পিছু টানে নি। আমাকে আমার মতো ছুটতে দিয়েছে। সেই ছুটে চলার আনন্দই আমাকে আজাদীতে বিলীন করে দিয়েছে।
২৯তম বছর থেকে একটি একটি করে বছর পার হয়েছে। একটি একটি করে স্বপ্ন বুনেছি। একটু একটু করে এগিয়েছি। মফস্বলের কাদামাটি মাড়িয়ে শহরে এসেছি। ধীরে ধীরে শহুরে সাংবাদিকতায় অভ্যস্ত হয়েছি। অচিন নানা কিছুর মোকাবেলা করেছি। বহু ঝড় গেছে, ঝাপ্টা গেছে। দৈনিক আজাদী নানা ঘাত প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়েছে। আমরাও হয়েছি। কিন্তু সব প্রতিকুলতা কাটিয়ে দৈনিক আজাদী আজ ৬০ বছর পার করলো। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা ধরে রেখে এভাবে বছরের পর বছর কোন পত্রিকার টিকে থাকার নজির দুনিয়ায় খুব বেশি নেই। দৈনিক আজাদী দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে সেই নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। অগুনতি মানুষের ভালোবাসা, আস্থা এবং বিশ্বাসে দৈনিক আজাদীর ৬১তম বছরের পথচলা শুরু হলো আজ থেকে।
দৈনিক আজাদী একটি বছর পার করে, একই সাথে দশ দিন কম এক বছর পার করি আমিও। এতে করে দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সাথে সাথে আমার সাংবাদিকতায় টিকে থাকার ‘বছরের সংখ্যাও’ বাড়তে থাকে। ফেসবুকে সক্রিয় হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই এই দিনটিতে একটি ছবি পোস্ট দিই। দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেকের সাথে ছবিটি তুলি। আমার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় শুরু থেকে নানাভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা ওয়াহিদ ভাইর সাথে এই ছবিটি তোলার সুযোগ আমাকে অন্যরকমের আনন্দ দেয়। আমার কাছে এই ছবিটি শুধু একটি ছবিই নয়, অন্যকিছু। ছবির চেয়ে বেশিকিছু। আমার ‘আজাদীর হাসান আকবর’ হয়ে উঠার পেছনে ছবির এই মানুষটির ভূমিকা যে কতভাবে কতরূপে কাজ করেছে তা এই ছবিতে হয়তো বুঝা যাবে না, তবে হৃদয়ের ক্যানভাসে আঁকা লাখো ছবি বুঝি সযতনে তা ধারণ করে আছে।

লেখক ঃ হাসান আকবর,দৈনিক আজাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *