কাইয়ুম চৌথুরী, সীতাকুণ্ড টাইমস ঃ
দেশীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করে সেই পণ্য রপ্তানি দেখিয়ে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে রড প্রস্তুতিকারী প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম)। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকি দেয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছ থেকে প্রত্যর্পন (রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা) নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৫ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। ফাঁকি দেয়া সমুদয় রাজস্ব পনের দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ওই নির্দেশের পর দেড়মাস অতিবাহিত হলেও ওই অর্থ জমা দেয়নি কেএসআরএম।
মুসক বিধিমালা-১৯৯১ এর বিধি ২(৩২) এ বর্ণিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কেএসআরএম’র বিরুদ্ধে এমএস রড দেশের বাজারে বিক্রির অভিযোগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট পরিচালক মোহাম্মদ সামছুর ও সরকার পক্ষে প্রতিনিধি সীতাকু- সার্কেলের কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। শুনাতিতে ‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত এবং দালিলিকভাবে প্রতিষ্ঠিত’ হয় যে, প্রতিষ্ঠানটির ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৫ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী সীতাকুে-র বড়কুমিরার ঘোড়ামাড়া এলাকায় অবস্থিত মেসার্স কে এস আর এম স্টীম প্ল্যান্ট লিমিটেডকে সমুদয় রাজস্ব পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়ার আদেশ দেন চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এর সাবেক কমিশনার ও বতর্মানে এনবিআর এর সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া।
সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বিরুদ্ধে মিথ্যে তথ্য দিয়ে রাজস্ব ফাঁকির দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার জন্য ১৫ দিনে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করেনি। এখন এনবিআর বিভিন্ন ধাপে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সার্টিফিকেট মামলা করার এখতিয়ার রয়েছে।
রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে কেএসআরএম’র কোন কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি।
দাবীনামা (নং-৪২/২০১৯) তথ্য মতে, দেশিয় বাজারে কোন প্রতিষ্ঠান রড বিক্রি করলে টনপ্রতি সরকারকে ৪৫০ টাকার মূসক দিতে হয়। যদি প্রতিষ্ঠানটি এসব পণ্য রপ্তানি করে তাহলে মূসক মওকুফ পাওয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছে থেকে প্রতিটনে ১৩ হাজার ৩০০ টাকা প্রত্যর্পন সুবিধা পায়। এক্ষেত্রে কেএসআরএম দেশিয় বাজারে বিক্রি করে রপ্তানি সুবিধা নেয়ায় উভয় সুবিধা পায়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট হতে ইস্যু হওয়া দাবীনামার তথ্য মতে, জুন ২০১৭ সাল হতে আগস্ট ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি দেশের ভিতরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৮০ দশমিক ৫০ টন পরিমাণ রড দেশের বাজারে বিক্রি করে তা রপ্তানি হিসেবে দেখিয়েছে কেএসআরএম।এতে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি বাবদ মূসক ও প্রত্যর্পন বাবদ রাষ্ট্র থেকে তারা এক কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৫ টাকা ফাঁকি দেয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়কে বলেন, কেএসআরএম রড বিক্রি বাবদ সরকারকে রাজস্ব দেয়ার বদলে উল্টো সরকার থেকে রপ্তানি সুবিধা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৮০ দশমিক ৫০ টন রড দেশীয় বাজারে বিক্রি করে তা ‘রপ্তানি বলিয়া গণ্য’ সুবিধার অপব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, ইপিজেড এলাকায় পণ্য সরবরাহ করা হলে তা আইন অনুযায়ী ‘রপ্তানি বলিয়া গণ্য’ হয়। কিন্তু ইপিজেড বহিভূত এলাকায় পণ্য সরবরাহ করে তা ‘রপ্তানি বলিয়া গণ্য’ এর আওতায় এ প্রতিষ্ঠানটি এ অনিয়ম করে। এতে একদিকে তারা যেমন মূসক বাবদ ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২২৫ টাকা মূসক ফাঁকি দেয়, তেমনি অপর দিকে রপ্তানি দেখিয়ে সরকার থেকে উল্টো অবৈধভাবে এক কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৯০ টাকা প্রত্যর্পন সুবিধা নেয়। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মুসক ও প্রত্যর্পন সুবিধা দেখিয়ে এই টাকা ফাঁকি দেয়।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি সুবিধা নিয়ে দেশীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজস্ব ফাঁকি দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
Home / প্রথম পাতা / দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করে রপ্তানি সুবিধা নেয় কেএসআরএমঃ ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার নির্দেশ