সংবাদ শিরোনাম
Home / উপজেলা সংবাদ / ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ সীতাকুন্ড স্থানীয় প্রশাসন মোকাবেলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় বিকল্প চিন্তাধারা হচ্ছে

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ সীতাকুন্ড স্থানীয় প্রশাসন মোকাবেলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় বিকল্প চিন্তাধারা হচ্ছে

কাইয়ুম চৌধুরী,
১৫ মে ( সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম) –rough-sea-(9)20130514061657
যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় সীতাকু-ের প্রশাসন প্রস্তুত থাকলেও বেড়ীবাধ বিহীন এলাকা গুলোতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় দূর্যোগে উপকূলীয় বাসিন্দাদেরকে কোথায় নিরাপদ আশ্রয়ে জায়গা দিবেন এনিয়ে দুচিন্তা রয়েছেন। ৮৭০জন সদস্যের সেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে জীবন বাঁচাতে কিছু একটা করতেই হবে মহাসড়কের পাশে স্কুল ও পরিষদ গুলোই একমাত্র ভরসা বলে জানিয়েছেন ইউএনও মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
সূত্রে জানা যায়, সীতাকু-ের উপকূলীয় সীমানা রয়েছে ৩৭ কিলোমিটার। নগরীর সীমানা লতিফপুর থেকে মহালংকা পর্যন্ত বেড়ীবাধ রয়েছে মাত্র ২৬ কিঃ মিঃ। এর মধ্যে সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকু-, বাঁশবাড়ীয়া, কুমিরা আংশিক, সোনাইছড়ি আংশিক, সলিমপুর আংশিক অংশে বেড়ীবাধ নির্মান করা হয়। ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রানহানীর ঘটনা ঘটলে এই বেড়ীবাধ নির্মান করেন তৎকালিন পানি সম্পাদ মন্ত্রী এলকে সিদ্দিকী। এরপর বাকী অংশ নির্মান অতিবজরুরী বলে অনেক আবেদন-নিবেদন পত্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এরইমধ্যে নির্মানকৃত বেড়ীবাধের জোড়ামতল এলাকার কিছু অংশ, কুমিরা-বাশবাড়ীয়া মধ্যবর্তী আকিলপুরে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার বেড়ীবাধ সন্দ্বীপ চ্যানেলে বিলুপ্ত হয়ে সমতল হয়ে যায়। ফলে এই দুই জায়গা দিয়ে জোয়ারের পানি প্রতিনিয়ত প্লাবিত হয়ে থাকে। যার ফলে এইসব এলাকায় প্রায় দুই হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছেনা গত চার বছর ধরে।
বেড়ীবাধ বিলুপ্ত ও বেড়ীবাধ বিহীন এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের যে কোন দূযোর্গ মোকাবেলায় নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার। ফলে যারা উপকূলীয় বাসীর দুচিন্তার শেষ নেই। কখন ঘটে যায় ১৯৯১ সালের মত বড় ধরনের দূযোর্গ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানায়, দূর্যোগ মোকাবেলায় নিরাপদ আশ্রয়ের পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার নেই। শুধুমাত্র বিপদ জনক এলাকাগুলো থেকে উপকূলবাসীদের মধ্যেও প্রায় এক লক্ষ লোক হবে। এই একলক্ষ লোকের আশ্রয় দিতে হলে কমপক্ষে দেড় শতাধিক সাইক্লোন সেন্টার প্রয়োজন এর মধ্যে রয়েছে ৫৯টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতিনগন্য।
এদিকে স্থানীয় দূযোর্গ মোকাবেলায় কি ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে ইউএনও মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় স্থানীয় ভাবে সেচ্ছা সেবক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেচ্ছাসেবকরা নিরাপদে আশ্রয়ে লোকদের সহযোগীতা করবে। সেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ৮৭০জন বলে তিনি জানান। তাছাড়া ১০টি ইনিয়নে ১০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এর বাস্তবায়ন করবে। ঘূর্ণিঝড় কাছাকাছি এলে মাইকিং এর ব্যবস্থা করবে উপজেলা পরিষদ। সাইক্লোন সেন্টারের কাজ স্কুল গুলোর চাবি সংগ্রহ করে স্থানীয় লোকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শুকনো খাবারের ব্যবস্থাও করবে প্রশাসন থেকে। দূর্যোগ মোকাবেলায় কি ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের কাছে জানতে চাইলে সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানায়, তার ইউনিয়নে সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ৬টি উপকূলীয় এলাকায় ৬টি উপকূল থেকে দেড় থেকে চার কিঃ মিঃ দুরে। সীতাকু-ের সব কয়টি সাইক্লোন সেন্টার কাম প্রাইমারী স্কুল। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬/১০টি রুম রয়েছে। নিচের অংশ খোলামেলা এতে সর্বোচ্চ দুই শতাধিক লোক আশ্রয় নিতে পারে গাদাগাদি করে। দূরে সাইক্লোন সেল্টারগুলো কোন কাজে আসবে না দূর্যোগে। কারণ এত দূরে কেউ আশ্রয় নিতে যাবে না। সীতাকু-ের সর্বোচ্চ সাইক্লোন সেল্টার ১২টি সৈয়দপুরে থাকা এলাকার চেয়ারম্যানই জানান তার এলাকায় উপকূলে আরো ২০টি সাইক্লোন সেল্টার দরকার। ২নং বারৈয়াঢালা চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রেহান জানায়, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নে রয়েছে ৬টি সাইক্লোন সেল্টার। তবে তার এলাকা উপকূলীয় সীমানা না পাওয়ায় তার এলাকা মোটামুটি দুচিন্তামুক্ত রয়েছেন। এরপরও তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। সীতাকু- সদর পৌরসভা উপকূল থেকে কিছুটা ভিতরে থাকায় অনেকটা নিরাপদে রয়েছে। তারপরও পৌরসভা দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছেন পৌর মেয়র নায়েক (অব.) সফিউল আলম। ৪নং মুরাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জানায়, তার এলাকায় সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে ৭টি। এর মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে ৩টি, বাকী ৪টি রয়েছে উপকূল থেকে ২/৪ কিঃমি দুরে। ফলে ৩টি সেল্টারই প্রয়োজন। দূর্যোগ মোকাবেলায় তিনি মাইকিং ও উপকূল বাসিন্দাদের সরিয়ে স্কুলে আশ্রয় দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায়। বাড়বকু- ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লা মিয়াজী জানায়, তার এলাকায় সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে মাত্র ৩টি। এর মধ্যে ২টি উপকূল এলাকায় ১টি ৩ কি. মি. দুরে। ফলে ২টি সেল্টারে ৩/৪শত লোক আশ্রয় নিতে পারে। বাকী প্রায় ১০ হাজার লোক যার যার বাড়ীতে থাকতে হবে। কারণ আশপাশে তেমন কোন স্কুল নেই জায়গা দেয়ার। তবে বেড়ীবাধ থাকায় তার এলাকা পানি থেকে মোটামুটি নিরাপদ। তবে ঝড়ো হাওয়া ক্ষতি হতে পারে। এরপরও প্রতিটি এলাকায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিরাপদ থাকার পরার্মশ দেয়া হচ্ছে উপকূল বাসীদের।
বাঁশবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত জাহাঙ্গীর জানায়, তার এলাকায় সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে মাত্র ৪টি। ৪টিও কাজে আসবে ধরা হলেও এই এলাকায় প্রয়োজন ২০টি। এই ইউনিয়নের পুরোটাই উপকূল এলাকায় এর মধ্যে এক কিলোমিটার বেড়ীবাধ বিলুপ্ত হয়ে গেছে সাগরে। এই বিলিন হয়ে যাওয়ায় বেড়ী বাধ দিয়ে প্রতিদিন দুইবার জোয়ারের পানি প্লাবিত হয়ে থাকে। ফলে কোন চাষাবাদ হচ্ছে না কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে। চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর জানায়, বেড়ীবাধ একেবার না থাকলে তেমন চিন্ত নেই। জোয়ারের পানি সমানতালে প্রবেশ করবে তবে বেড়ীবাধ ভাঙ্গা থাকলে এই ভাঙ্গা দিয়ে প্রবল শ্রোতে পানি প্রবেশ করবে। ফলে ক্ষয়-ক্ষতি ভাঙ্গা এলাকার মুখেই বেশি হতে পারে। তিনি ঐ এলাকার লোকজনকে নিরাপদে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং তিনি নিজেও সজাগ রয়েছেন। ভাঙ্গা বেড়ীবাধ নির্মান দৈনিক আজাদীসহ অনেক পত্রিকায় লেখালেখি করেও কোন কাজ হয়নি বলে তিনি জানান, পানি সম্পদক প্রতিমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন। ব্যবস্থা নেবেন বলে আশস্থ করে গেছেন গত একবছর পূর্বে। তার এলাকায় খুব বেশী ঝুকিপূর্ণ  বলে তিনি জানান।
কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানায়, তার এলাকায় সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে ৬টি। এর মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে মাত্র ১টি। বাকী ৫টি রয়েছে মহাসড়কের আশপাশে। এই এলাকায় বেশকিছু অংশে বেড়ীবাধ ভেঙ্গে গেছে। এই ভাঙ্গা এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে। অনেক জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। প্রভাবশালীরা বেড়ীবাধ ভেঙ্গে শিপইয়ার্ড নির্মান করেছেন তাদের সুবিধার্থে। এই এলাকার জেলে পরিবারগুলো তাদের বাড়ীঘর জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত জোয়ারে ভাসছে আর শুকাচ্ছে ভাঙ্গার কারনে। তবে ঘূণিঝড়ে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করেছেন। তার এলাকায় ৫ কিঃ মিঃ জুড়ে উপকূল এলাকায়। এইসব এলাকায় আরো ১০টি সাইক্লোন সেল্টার প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
৮নং সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন মোঃ জাহাঙ্গীর জানায়, তার এলাকায় মাত্র ২টি সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। সবচেয়ে বিপদজনক এলাকা হচ্ছে সোনাইছড়ি কারণ মহাসড়ক থেকে মাত্র তিনশত ফুট কোয়াটার কিলোমিটার দুরে সাগর। এর মধ্যে নেই বেড়ীবাধ। দুটি সাইক্লোন সেল্টার কাম স্কুল কাজে আসলেও এই ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার লোক নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। এখানে সেল্টারের চেয়ে জরুরী প্রয়োজন বেড়ীবাধ নির্মান কারণ মহাসড়কের কাছাকাছি সাগর এসে যাওয়ায় মহাসড়ক হুমকীর সম্মুখীন। মহাসড়ক রক্ষায় বেড়ীবাধ জরুরী নির্মান প্রয়োজন। তিনি জানান, উপকূলীয়  থেকে মহাসড়ক খুব কাছে থাকায় কিছুটা নিশ্চিত যে একটু সর্তক থাকলে নিরাপদে মহাসড়কের উঠে যেতে পারবে তবে বেশী পানি হলে বিপদ হতে পরে। সেচ্ছাসেবক কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।
ভাটিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার জানায়, তার এলাকার সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে ৫টি। ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পুরোটাই উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত এই এলাকাতেও বেড়ীবাধ নেই গ্রাম ও সাগর প্রায় সমান সমান সমতল। বড় ধরনের ঘু্ির্ণঝড় হলে অনেক লোকের প্রাণহানী হতে পারে। এখানে আরো ৫টি সাইক্লোন সেল্টার প্রয়োজন তবে বেশী জরুরী বেড়ীবাধ নির্মান করা। তিনি উপকূলীয় বাসিন্দাদের সর্তক ও নিরাপদের ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছেন।
১০নং সলিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ জানায়, তার এলাকায় সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে মাত্র ৫টি। এরমধ্যে মাত্র ২টি উপকূলীয় এলাকায় নির্মিত। বাকীগুলো মহাসড়কের আশ পাশে। এই এলাকায় আশংশিক বেড়ীবাধ থাকলেও কর্ণফুলীর মোহনায় হওয়ায় ঘুণিঝড়ের আঘাতটা এই এলাকায় বেশী হতে পারে। এখানে সাইক্লোন সেল্টার প্রয়োজন আরো ১৫টি। তাছাড়া বাকী বেড়ীবাধ টুকু নির্মানও জরুরী প্রয়োজন। এই এলাকার উপকূল বাসিদের নিরাপদে থাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্কুল গুলোতে রাখা হতে পারে। অন্য কোন ব্যবস্থাও নেই এই এলাকায়। তবে সজাগ রয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সীতাকু- উপকুলবাসীদের আশ্রয় কেন্দ্র  হিসাবে সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ৯১ সারে ২৯শে এপ্রিলের প্রালংকিয় ঘূর্নিঝড়ের পর। এসব আশ্রয় কেন্দ্র কাম স্কুল নির্মান করেন সৌদি অর্থায়নে ফ্যাসিলিটিস বিভাগ বেশীর ভাগ। তাছাড়া জায়কা ৬টি, কারিতাস ৪টি, ওয়াল্ড ভিশন ২টি, রাঙ্গা ব্যাঞ্চ ২টি, রেডক্রিসেন্ট ২টি, গ্রামিন ব্যাংক ১টি, গনফূর্ত বিভাগ ১টি, নোরাড ১টি, এলজিইডি ৯টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *