এম কে মনির,সীতাকুণ্ড টাইমসঃ
ফুল-ফল ও ফসলের ঋতু হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে প্রকৃতিতে আসতে শুরু করেছে শীত।
সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে একটু একটু করে পড়ছে ঠাণ্ডা, বইছে হিমেল হাওয়া। সকালে সবুজ ঘাসের উপর বিন্দু বিন্দু শিশির কণা,দূরের পাহাড়টা হালকা কুয়াশায় ঢাকা।বাইরে বের হলেই দেহে কাঁপুনি দিচ্ছে দুয়েকটি শিশির বিন্দুর পতন।সূর্যটাও দেখা দিচ্ছে খানিকটা দেরিতে।গাছিরা যত্ন নিতে শুরু করেছে খেজুর গাছের।বাজারে দেখা মিলছে শীতকালীন সবজি শীম,মুলা,ফুলকপি, বাধাকপি ও লাউ।এ যেন শীতেরই উঁকি।ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু হেমন্তের পরই আগমন ঘটে চিরন্তর সৌন্দর্য্যের ঋতু শীত।শীত আসলেই প্রকৃতি নিজেকে সাজানোর ঢঙ্গে ব্যস্ত থাকে।শীতের সকালের রয়েছে অনন্য সৌন্দর্য ও মাধুর্য। শীতের সকাল মানেই এক অন্যরকম অনূভুতি।ভোরে ঘন কুয়াশার আবরণ আর হাঁড কাঁপানো কনকনে শীতের অনুভূতি। শীত আসলেই ঝরে যায় বৃক্ষের পত্রপল্লব। প্রকৃতিতে নামে শুষ্কতা, রিক্ততা।এজন্যই কবি আহসান হাবীব শীতকে বলেছেন বৈরাগ্যের ঋতু।হাঁডকাপানো শীতে জবুথুবু হলেও মূলত কনকনে শীতই মানুষের মাঝে ফিরিয়ে আনে প্রাণচাঞ্চল্যতা।মানবজীবনে শুরু হয় শীতের সাথে লড়াইয়ের এক প্রতিযোগীতা। শীতকে উপেক্ষা লোকজন বেরিয়ে পড়ে তার কাজে।মানুষ খুঁজে নেয় গরম অনুভূতির নানা উপায়।গায়ে জড়িয়ে নেয় নানা রকম শীতবস্ত্র।শীতের দিনে গ্রামে গ্রামে হয় নানা মেলা।জনজীবনে উৎসবের আমেজ শুরু হয়।ঘরে ঘরে পিঠা, পায়েস তৈরির ধুম পড়ে।শীতে পাওয়া যায় খেজুরের রস।গাছিরা ভোররাতে গাছ থেকে রসের হাড়ি নামায়।গাঁয়ের বধূরা সেই রস জ্বাল দেয়।চালের গুডো,কোরানারকেল আর গুড দিয়ে বানাই মজাদার ভাপা পিঠা।শিশুরা রোদে বসে খেজুরের রস দিয়ে ভাপা পিঠা খাই।শীতের সকালে রোদে বসে পিঠাপুলি খাওয়ার মজাই আলাদা।শীতকালে তাপমাত্রা নেমে আসে অন্যান্য ঋতুর চেয়ে একেবারে নিছে।সারাদিন একধরণের ঠান্ডা অনুভূত হয়।কোন কোন সময় সূর্যের দেখা মিলে না চার পাঁচদিন ধরে।রাতে শীত ঝেকে বসে শক্তভাবে।পৌষ আর মাঘ মাস নিয়ে শীতকাল হলেও শীত অগ্রাহায়ণ মাস থেকেই পড়তে শুরু করে।ইংরেজি নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে তীব্র হাঁডকাপানো শীত পড়ে।
মাঘ মাসের শীতের তীব্রতা বেঝাতে আমাদের দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে”মাঘের শীতে,বাঘও কাঁপে”।মূলত শীত হচ্ছে গ্রীষ্মের বিপরীত ঋতু।তবে শীতের আশীর্বাদ হচ্ছে প্রকৃতিতে নানারকম ফসলের আগমন। শীতকালীন সবজি সবচেয়ে মজাদার।শীতকালে শীম, কপি,পালংশাক, মূলাশাক, লাউ পাওয়া যায় বেশি পরিমাণে।শীতের শুরুতে বাংলাদেশের খাল বিল,হাওরে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা আসতে শুরু।ঝিলের পানিতে তাদের কলকাকলিতে প্রকৃতিতে এক অপরুপ দৃশ্যের দেখা মেলে।তবে শীত মানে যে শুধু আনন্দ আর সৌন্দর্য্যের উপভোগ তা নয়। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জীবনে শীত আসে অভিশাপ হয়ে।উপযুক্ত শীত বস্রের অভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে।তাই মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে আমাদেরকে তাদের কথা ভাবতে হবে।