সংবাদ শিরোনাম
Home / জাতীয় / প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যার দ্রুত চালুর নির্দেশও উপেক্ষিত চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্নেক্সের ফাইল চলছে কচ্ছপের গতিতে

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যার দ্রুত চালুর নির্দেশও উপেক্ষিত চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্নেক্সের ফাইল চলছে কচ্ছপের গতিতে

Sitakund Cemical Complex Photo-Kকাইয়ুম চৌধুর,২৯আগস্ট(সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম)- প্রধান মন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার দ্রুত চালুর নির্দেশ থাকা সত্বেও চার বছর পরেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় চালু হচ্ছে না চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স। ধীরগতিতে চলছে কেমিক্যাল কমপ্লেক্স চালুর কাজ। চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার বাড়বকু-ে অবস্থিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রি চালু হতে আলোর মুখ দেখেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় চালুর প্রক্রিয়া চলছে ধীর গতিতে। ঠিকাদার নিয়োগের সিদ্ধান্তেই কেটে গেছে সাড়ে চার বছর। চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স কারখানাটি চালুর পর থেকেই বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত উৎপাদিত পণ্য কাষ্টিক সোডা, লিকুইড ক্লোরিন, হাইড্রোজেন এসিড, ব্রিচিং পাউডার, ক্যালসিয়াম হাইপো দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ফার্টিলাইজার কারখানা, গ্যালভানাইজিং ফ্যাক্টরী, ওয়াসা, আর্মি ক্যান্টমেন্ট, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাবান ফ্যাক্টরী, পেপার মিল ও রোলিং মিলসহ বিভিন্ন কারখানায় পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাহিরে সরবরাহ করে যোগান দিয়েছে সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রনালয়কে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করে আসছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকারের মদদপুষ্ট কতিপয় স্বার্থান্বেষী মন্ত্রী ও একটি বেসরকারী কেমিক্যাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমলারা আতাত করে মিলটিকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়। এতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্তির পূর্বে চাকুরী থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয় মিলটিতে কর্মরত ৪ শত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। তাতে মুখ থুবড়ে পড়ে একটি প্রচুর লাভজনক কেমিক্যাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিসিসি’র উৎপাদন প্রক্রিয়া।
এ ব্যাপারে মিল সূত্রে জানা যায়, মিলটি বন্ধের ৯ বছর অতিবাহিতের পর ২০০৯ এর ২৪ এপ্রিল বর্তমান সরকারের শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া চালুর জন্য উদ্ভোধন করেন। উদ্বোধনের পর মিলটির এমডি, জিএম প্রশাসন, একাউন্টেন বাদে নিরাপত্তা রক্ষী ও আনসার সহ বিভিন্ন ক্যাটাগড়িতে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ও অনভিজ্ঞ ২৫ থেকে ৩৫ জন লোককে অস্থায়ী ভাবে নো ওয়ার্ক নো পে’র ভিত্তিতে কাজ করানো হচ্ছে। বর্তমান কর্মরতদের ক্যাটাগড়িনুযায়ী ক্যাজুয়েল হিসেবে বেতন প্রদান করা হচ্ছে। পুনরায় চালূ করতে শিল্প মন্ত্রী উদ্বোধন করে যাওয়ার পর সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মিলটি অবিলম্বে চালুর নির্দেশ প্রদান করেছেন। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সালে জাপানের সহায়তায় ১৩০ কোটি টাকা দিয়ে মূল্যবান যন্ত্রাংশ স্থাপনের মাধ্যমে বি.এম.আর.ই আওতায় পরিবেশ বান্ধব আয়ন এক্সচেঞ্জ মেমব্রেন সেল প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছিল। বন্ধকালীন সময়ে উক্ত কারখানায় বিসিআইসি’র অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিকট ৩৫ কোটি টাকা পাওয়া ছিল। নিজস্ব তহবিলে ২ কোটি টাকা জমা ছিল। কয়েককোটি টাকার বিক্রির জন্য পণ্য মজুদ ও উৎপাদনের জন্য ২ বছরের কাচামাল মজুদ ছিল। এতে দীর্ঘ দিন মিলটি বন্ধ থাকায় সর্বক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সমূহ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। মাননীয় প্রধান শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ১লা মে ও ২০১০ সালের ১লা মে দিবসে পল্টনের মহাসমাবেশে উক্ত কারখানাটি দ্রুত চালুর জন্য ঘোষণা দেয়। বর্তমানে তা মেরামতের জন্য বি.সি.আই.সি র্প্বূ থেকে ২০১১ এর ৩১শে মে তৃতীয় বারের মত আরো একটি টেন্ডার ঘোষণা করেছিল। এতে চায়না মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম. এম. এন্টারপ্রাইজ ৮০ কোটি টাকায় ও ইন্ডিয়ান মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নউ বার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ ৭৬ কোটি টাকায় মিলটির যন্ত্রাংশ পুন:স্থাপন ও মেরামতের কাজ সম্পন্ন করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়ে দরপত্র দাখিল করে। দরপত্র দাতা দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যাচাই বাচাই করে কন্ট্রাক্টর নিয়োগের মাধ্যমে মেশিনারী পার্টস এর কার্যক্ষমতা ও নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশ গুলোকে রিপেয়ার ও রিপ্লেসমেন্ট’র দ্বারা অথবা নতুন যন্ত্রাংশ সংেেযাজন করে কারখানাটি পুন:চালু করা সম্ভব হবে। তবে কবে চালু হবে তা তিনি বলতে পারেননি।
সি.সি.সি চালু সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোঃ নাছির জানান, বিসিআইসি’র নিয়ন্ত্রনাধীন দেশের একমাত্র সরকারী কেমিক্যাল উৎপাদনকারী লাভজনক প্রতিষ্ঠান সিসিসি দেশী-বিদেশী স্বার্থান্বেসী মহলের ষড়যন্ত্রে ২০০২ সালের ১৫ই ডিসেম্বর বন্ধ করে দেয়। বর্তমান সরকারের প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে ২৩/১/২০১০ হইতে ৩০/০৪/২০১২ইং পর্যন্ত ৪ বার আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। কোনটিই কারগরি দিক থেকে গ্রহণ যোগ্য হয়নি। টি ই সি এর অনুমোদনক্রমে গত ২৩/৭/১২ইং ৫ম বার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে দুটি দরপত্র পাওয়া যায়। তন্মমধ্যে গ/ঝ ঝঁনবৎম ঊহমরহববৎরহম ষঃফ. ওহফরধ এবং গ/ঝ ডঁযধহ অহুধহম ংপরবহপব ্ ঃবপযহড়ষড়মু পড়. ষঃফ. পযরহধ এ দু’টি দরপত্রের মধ্যে যাচাই বাছাইয়ের পর কারীগরি ও বাণিজ্যিক দিক থেকে চায়না কোম্পানীটি গ্রহণযোগ্য হওয়ায় ইন্ডিয়ান কোম্পানিটির দরপত্র বাতিল করে। বর্তমানে চায়না কোম্পানী চালুর প্রক্রিয়া করলেও কাজ চলছে খুব ধীরগতিতে। এলাকাবাসী এবং শ্রমিক কর্মচারীদের প্রশ্ন শিল্পমন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী, স্থানীয় এমপি চালুর ঘোষণা দেওয়ার পরও কারখানাটি নানা অজুহাতে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। জটিলতা কাটিয়ে কারখানাটি যদি চালুর মুখ দেখেন তাহলে সি.সি.সি. নামটি আবারও পুনঃজ্জীবিত হবে।
সূত্রে আরো জানা যায়, সিসিসি’র উৎপাদিত কস্টিক সোডার উৎপাদন মূল্য পড়ে টন প্রতি ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে কস্টিক সোডার বাজার মূল্য প্রায় ১লাখ ২০ হাজার টাকা। উক্ত কারখানাটি চালু হলে ৪’শ লোকের কর্মসংস্থান সহ সব খরচাদি মিঠিয়ে প্রতি বছর ৫ কোটি টাকা লাভের মুখ দেখবে বলে সম্প্রতি তদন্ত কমিটি রিপোর্ট পেশ করে। এ শুধু একটি পণ্য থেকেই আয় আসবে। তাছাড়া অন্যান্য পণ্য লিকুইড ক্লোরিন, হাইড্রোজেন এসিড, ব্লিচিং পাউডার, ক্যালসিয়াম হাই-প্রো উৎপাদিত হলে এ থেকেও আরো বিশাল আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া সরকারী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, সারকারখানা, পেপার মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এর উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে এসব পণ্যগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে ঐ সব প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। দেশে প্রচুর কস্টিক সোডার চাহিদা রয়েছে। নারায়নগঞ্জের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (গ্লোবাল কেমিক্যাল) নামমাত্র এসব পণ্য উৎপাদন করে আসছে। ফলে সরকার গড়ে প্রতিদিন ৪’শ মেট্রিক টন কস্টিক সোডা আমদানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে। এই গ্লোবাল কেমিক্যালের মালিকের ষড়যন্ত্রেই সিসিসি কারখানাটি বন্ধ করা হয়েছে বলে কারখানার শ্রমিকদের মুখে প্রচার রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবী সরকারের নির্বাচনী অঙ্গিকার পূরণ, ভাবর্মূতি রক্ষা ও প্রধান মন্ত্রী ঘোষণা ও প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উক্ত কারখানাটি অতিদ্রুত চালু করা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *