সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / বিলুপ্তপ্রায় সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

বিলুপ্তপ্রায় সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

প্রায় ৫০ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলার শতবছরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে লালন করে আসছে সীতাকুণ্ডের কুমারদের হস্ত তৈরি মৃৎশিল্প।

একসময় সীতাকুণ্ডের কুমারপাড়াগুলো ছিলো বেশ জাঁকালো।সেসময় ব্যস্ত সময় পার করতেন এখানকার কুমাররা। ঘরে ঘরে ধুম পড়তো মাটির হাঁড়ি,বাসনকোসন,কলসি,পুতুল,হাতি,ঘোড়া ও গৃহস্থালী হরেকরকম তৈজসপত্র তৈরির।

বংশানুক্রমে পালিত হতো পৈতৃক এ পেশা।সেসময় এসব জিনিসপত্র তৈরিতে নির্ঘুম রাত কাটাতেন কুমাররা। এঁটেল মাটির কাদাকে হাতের নিঁখুত শিল্পে দেওয়া হতো বৈচিত্র্যময় রুপ। প্রাচীন এ শিল্পের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে ছিলো এখানকার কুমোর পরিবারগুলোর ইতিহাস।

কুমোরেরা জীবন জীবিকার তাগিদে এ শিল্পকে তাদের আত্মীয়ের মর্যাদা দিয়েছিল বহুকাল আগে। অক্লান্ত পরিশ্রমে কাষ্ঠ চাকায় হাত ঘুরিয়ে শুধু এসব জিনিসপত্র তৈরি হতো না বুনা হতো নিজেদের স্বপ্ন।মাটিকে শৈল্পিক আকারে নিয়ে দেওয়া হতো আগুনের গর্তে।জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হতো ধানের শুকনো খড়।

নানা কৌশলে সেগুলো হয়ে ওঠতো রঙিন বৈচিত্র্য,ধারণ করতো লালচে রং।এরপর বিভিন্ন রঙ দিয়ে আঁকা হতো হরেকপ্রজাতির ফুল।আর কুমোরদের তৈরি এসব জিনিসপত্র বেচার জন্য নেওয়া হতো গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন হাটে।সেসময় মেলায় এসব জিনিসপত্রের কদর ছিলো বেশ।

তখনকার দিনে বিয়ের আসবাবপত্র হিসেবে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের প্রচলন ছিলো অহরহ।স্বাধীনতার পূর্ব ও পরে এ শিল্প সারা বাংলায় রাজত্ব করেছিল।৯০ এর দশকেও এ শিল্প ছিলো লক্ষণীয়। কিন্তুু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার দাপটে সে শিল্প এখন হারতে বসেছে।বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে এসে পড়েছে বাঙালির এ শিল্প।

এখন আর এসব জিনিসপত্রের সহজ নাগাল পাওয়া ভার।অধিকাংশ কুমোররা এখন ভিন্ন পেশায় সামিল হয়েছে।আধুনিক সিলফার,প্লাস্টিকই এ শিল্পের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাই পরিবারগুলো দৈন্যদশায় জীবন কাটাচ্ছে। এ পেশার অনেকেই ভবলীলাসাঙ্গ করেছেন।কেউ কেউ কাটাচ্ছেন বেকার ও অলস সময়।

চারিদিকে মানুষের আবাদ হওয়ায় কমে এসেছে কৃষি জমি । গ্রামের পুকুরগুলোও সব ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে সুবিশাল অট্টালিকা। ফলে এ শিল্পের মূল উপাদান মাটি এখন আর পাওয়া যায় না।তাই বাধ্য হয়ে কুমোররা এ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ চালাচ্ছেন রিকশা,ভ্যান।অনেকে অন্য কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন।যদিও হাতে গোনা দুয়েকজন এ শিল্পকে জিইয়ে রেখেছেন অনেকটা অনিচ্ছায়।

সীতাকুণ্ড উপজেলার পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত কুমারপাড়ার কুমার অঞ্জন পালের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের তৈরি জিনিসের এখন আর চল নেই।বাজারে নিলেও বেচা বিক্রি একেবারেই কম।আগেকার দিনে মানুষ আমাদের খোঁজ করে এসব জিনিস কিনতো।এখন আর সেই অবস্থা নেই।

ইদিলপুরের বেশ কয়েকজন কুমোরের সাথে কথা বলে একই মতামত পাওয়া গেলেও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের ইচ্ছা নিতান্তই কম নয়।

এ শিল্পের বিষয়ে সমাজকর্মী লিও আরাফাত বলেন মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য। ডিজিটালের বাতাসে সে শিল্প এখন নিখোঁজ প্রায়।মৃৎ শিল্পের সেই সোনালী অতিত ফিরিয়ে আনতে দেশী-বিদেশী উদ্যোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ডের একটি বেসরকারি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের চেয়ারম্যান সরওয়ার হোসাইন লাভলু বলেন কুমোরদের এই পেশাতে আগ্রহী করতে প্রয়োজন ক্ষুদ্র ঋণের। মৃৎ শিল্পীদের ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করলে এ শিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *