সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সবার জন্যেঃ এম. এন মোস্তফা নূর

রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সবার জন্যেঃ এম. এন মোস্তফা নূর

সীতাকুণ্ড টাইমস ঃ
রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সবার জন্যে

– এম. এন মোস্তফা নূর

রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সবার জন্যে। সুখ-শান্তি, দুঃখ, কষ্ট, হাসি, কান্না, রোগ-শোক, আনন্দ-উল্লাস,জাতীয় উৎসব, মহামারি, অগ্নিকাণ্ড, ভূ-কম্পন, দুর্যোগ, সুনামী, ঝড়-তুফান, বাণ-বণ্যা যেমন সবার জন্যে, কাউকে বাদ দেয়না। ঠিক তেমনি ভাবেই রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সবার হতে হয়। নতুবা অংশগ্রহনমূলক হয়না। আর অংশগ্রহনমূলক না হলে রাষ্ট্র থাকেনা। অংশগ্রহনমূলক না হলে রাজনীতিও থাকেনা। অর্থনীতিও থাকেনা। সমাজ কাঠামোও থাকেনা। পরিবারও থাকেনা। একটি পরিবারে কেবল (আপনি) পরিবার প্রধানের পছন্দ মতো বাজার-সওদা করবেন আর রান্ন-বান্না হতে থাকবে আপনার ফরমায়েশ মান্য করেই! আপনার রসনারুচি অনেক উচ্চমানের হতে পারে কিন্তুু আপনি পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্যের রুচির প্রতিনিধিত্ব করেননা। মনে রাখবেন, এভাবে আপনি সকল ক্ষেত্রে যখনি নিজের মতামত চাপিয়ে দেবেন আর সেটা যতই ভাল হোকনা কেন তা ক্রমান্বয়ে মান্যতা হারাবে। এভাবে একটি পরিবার, সমাজ, রাজনীতি, রাষ্ট্র বেশিদিন একান্নবর্তী থাকবেনা।

এখানে ধর্ম, বর্ণ, মত, মতবাদ, ভাষা, লিঙ্গ নির্বিশেষে মানুষের মূল্যায়নে বিশ্বাসী। আমরা নানান ভেদ উতরে গিয়ে রাষ্ট্রের প্রশ্নে মানবতার প্রশ্নে এক হই। আমি তোমার হই। তুমি আমার হও। আমি, তুমি না থেকে সবাই আমরা হয়ে যাই। তখন মানুষে মানুষে দূরত্ব থাকবেনা।

ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় এমনকি ক্ষুদ্র ক্ষদ্র জাতি স্বত্তার ক্ষেত্রেও, ধর্মীয় ভিন্ন মতাবলম্বিদের মাঝেও যথাক্রমেঃ ঠাকুর, পণ্ডিৎ, পীর-মাশায়েখদের নানান ছিলছিলার জন্ম দেয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মের একটি একক বক্তব্য থাকলেও এই ধর্মের মাঝেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পার্থক্য সৃষ্টি করে নানান ব্রাণ্ডের পণ্য স্বরূপ ট্যাগ মারা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে একেকজনের প্রাধান্য মান্য করার মীথ চালু করতঃ একেকজনের পৃথক পৃথক আধিপত্য জেঁকে বসার ফলে আমাদের নাগরিকগণের মাঝে পরস্পর অবিশ্বাস, হিংসা, বিদ্বেষ, প্রগাঢ় করা হয়েছে। একই ইসলাম ধর্মের মাঝে নানান ত্বরীকার চর্চা এবং ছবকের আমলে ভিন্নতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে বিচ্ছিনতাকে স্থায়ীরূপ দিতে মোটেও কসুর করেনি একটি পরাশক্তি।
হিন্দু ধর্মের অবস্থা আরো জটিল করে তুলেছে তাদের পুরোহিত সমাজ। সেই বিষয়ে বিশদ আলোচনার দরকার নেই। অনেক বিষদ আলোচনা এই উপমহাদেশের ইতিহাসেই আছে। হিন্দু বিজ্ঞজনেরা তাদের কাষ্ট বা বর্ণ বিভেদ মেটাবার বহু চেষ্টা করলেও কোনো ফল বয়ে আসেনি আজ অবধি এবং তা সম্ভব হয়নি উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসক, ধর্মরক্ষক, অবতাররূপী পুরোহিত, ঠাকুর, ব্রাহ্মন সম্প্রদায়ের জন্যে। তবে সেটাও একটা প্রতিক্রিয়াশীল কাউণ্টার রাজনীতি বলে আমি মনে করি। এই ধরণের রাজনীতি জনগণকে ঠকিয়েছে। ধর্মের নামে অধর্ম দিয়ে ঠকিয়েছে এবং রাজনীতির নামে স্বৈরাচারী শাসন দিয়ে ঠকিয়েছে।

ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, লিঙ্গ ভেদ-বিভেদ থাকলে দেশ-রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়ন করা যাবেনা। আলেমগণকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে রেখেছে অর্থ বিনিয়োগ করে। ধর্মকে ধর্মের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে অধার্মিকেরা। চিন্তাকে চিন্তার বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদী তকমায় ফায়দা নিচ্ছে স্বার্থবাদীরা। আদর্শবাদকে মতবাদকে দিয়ে গুলিয়ে বানাচ্ছে যৌগিক মিশ্রণ। সমাজ মস্তিষ্কে লেগেছে ভয়ঙ্কর উদরাময়।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা আঘাত হেনেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে। এই কঠিন দুঃসময়েও দলবাজদের উল্লম্ফন সহ্য করতে হয় এই জাতির চেয়ে হতভাগা আর কোন জাতি থাকতে পারে পৃথিবীতে! যারা দলবাজী করছে, চুরি-চামারি করছে, ত্রাণের খাদ্য লুট করছে! তাদের শোধরানো যাবেকি? না যাবেনা। তাহলে উপায় কী! সময় বলবে সময়ের দিকে চাপ রেখে দাঁড়াও হে নাগরিক, হে প্রজন্ম, হে বাংলাদেশ।
@@@@@@
লেখক-সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, সীতাকুণ্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *