আরিশা কানিজ,সীতাকুণ্ড টাইমস ঃ
যদি সুস্থভাবে বাঁচতে চান তাহলে আগে পরিবেশ বাঁচান, আমরা হলে সচেতন, আর হবে না পরিবেশ দূষণ
সীতাকুণ্ড, যেন এক প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের নাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উদার এবং মুক্ত প্রকৃতির ছন্দময় দিগন্ত বিস্তারী গগনের সরল সৌহার্দ্যে গরিয়ান সীতাকুণ্ড উপজেলা। দিন দিন এই বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে হৃদয় ছুয়ে যাই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের। প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার পর্যটক সীতাকুণ্ডের বৈচিত্র্য উপভোগ করতে আসে।
কিন্তু সীতাকুণ্ডের পরিবেশ কি আদোও দূষণ মুক্ত? সীতাকুণ্ড উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। যার বিষাক্ত ধোঁয়া প্রতি নিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। বিভিন্ন জায়গায় ময়লা আর্বজনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে।
পরিবেশ দূষণ মানবজাতির জন্য এক মারাত্মক হুমকি। তাই নিজেদের স্বার্থে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কিছু কাজ করতে পারি। প্রথমে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বাড়তি ট্যাক্স বসাতে হবে। আর এই ট্যাক্সের টাকা দিয়ে সোলার প্যানেল ও নবায়নযোগ্য শক্তিকে এগিয়ে নিতে হবে। সবরকম দূষণ কমাতে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে পানি ও বায়ু দূষণের ব্যাপারে। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর বদলে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। টু-স্টোক যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এসব যানবাহনের নির্গত ধোঁয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড, সিসা, কার্বন মনোক্সাইডসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একই কারণে, পরিবেশ দূষণ রোধে সিএনজি জ্বালানির ব্যবহার বেশি করে করতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন নিষিদ্ধ করতে হবে। বনায়ন কর্মসূচির ব্যাপক সম্প্রসারণ করতে হবে। শহর বা জনবসতির কাছাকাছি কল-কারখানার না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। কলকারখানা থেকে দূষিত পদার্থ নির্বিচারে নদীতে ফেলা যাবে না।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে রকেট নিক্ষেপ ও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ নিষিদ্ধ হওয়া চাই। অপরিকল্পিতভাবে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সে সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে হবে। অতিরিক্ত কয়লা ব্যবহার হ্রাস করে বায়ুমন্ডলের দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বন্ধ করতে পুরনো ইঞ্জিন চালিত গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে
সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন পর্যটক এলাকায় ঘুরতে গেলে দেখা যায় চারপাশে ময়লা আর্বজনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। শুধু যে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে তা নয় পরিবেশ দূষণের ফলে আশেপাশের এলাকায় বসবাসরত লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার যানবাহন থেকে নির্গত এগজোস্ট গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।বাতাসে অক্সিজেন ব্যতীত অন্যান্য গ্যাস ও ধূলিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ু দূষিত হয়। পৃথিবীর সব প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে।
শুধু যে বায়ু দূষিত হচ্ছে তা কিন্তু নয়, যেখানে সেখানে ময়লা আর্বজনা ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে পানি এবং মাটি। পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো সাধারণত জলাশয়ের সাথে যুক্ত থাকার কারণে শহর, হাট-বাজার, বাসাবাড়ির ময়লা-আর্বজনা, বিভিন্ন প্রাণীর মলমূত্র, খাল, বিল ও নদীতে পড়ে পানি দূিষত হচ্ছে।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যায় পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্পকারখানা সচল রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন— তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই দূষণের প্রধান উৎস। জনসংখ্যা বৃদ্ধি দূষণের আরও একটি বড় কারণ। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করছে। পরিবেশের বেশির ভাগ দূষণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফলেই হয়ে থাকে।
এতে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য। ইটভাটায় বেআইনিভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে পরিবেশ রয়েছে ঝুঁকিতে। অন্যদিকে বায়ু দূষিত হয়ে দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বায়ুদূষণ বন্ধ না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমবে না। এখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। সরকারের উচিত পরিবেশবান্ধব ইটভাটার ব্যবস্থায় সহযোগিতা করা। সরকার, জনগণ ও কর্তৃপক্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব।
অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণের ফলে যতই দিন যাচ্ছে, ততই যেন কঠিন হয়ে পড়ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন। পরিবেশের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত হয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পরিবেশের প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে মাটি, পানি ও বায়ু। মানবসৃষ্ট নানা কারণে পরিবেশের এই উপাদানগুলো দূষিত হচ্ছে।
পরিবেশকে বাঁচতে হলে নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পরিবেশদূষণের ফলে মানুষের অস্তিত্ব আজ সংকটে। সুস্থ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলাই হোক সবার অঙ্গীকার।
পরিবেশ দূষণ রোধে সর্ব প্রথম প্রয়োজন সচেতনতা। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন একটি সুন্দর পরিবেশ। পরিবেশ সুন্দর রাখলে স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত হবে।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় আমাদের আরোও সচেতন হতে হবে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। এসব ময়লা-আবর্জনা নিদিষ্ট স্থানে ফেলা। পরিবেশ সুরক্ষায় এলাকাবাসীকেও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে হলে পরিবেশসম্মত বাসস্থান অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। জনসচেতনতাই পারে পরিবেশ সুরক্ষা করতে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠলে মানুষের রোগবালাই লেগেই থাকে। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং সচেতন করতে হবে। সচেতনতাই সুরক্ষার মূল মাধ্যম হবে
লেখকঃ
আরিশা কানিজ
ফেলো, রেডিও সাগর গিরি,
সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম।