সিরাজ উদ্দীন বেলাল,সীতাকুণ্ড টাইমসঃ
খবরটা যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃষ্টিগোচর হলো, তখন গভীর রাত। প্রায় দেড়টা। অনেকক্ষণ ফেইসবুক দেখা হয়নি। একেতো কোভিড বন্দী অন্যদিকে বৃহস্পতিবার, স্ত্রীর দন্তচিকিৎসা শেষে ক্লিনিক থেকে ফিরে এসে ছেলে-মেয়ের সাথে খুনসুটি, টিভিতে নানা সংবাদ এবং কিছুটা ইবাদত শেষে সাহেরী খাবার আগে একটু বিশ্রাম নিতে গিয়ে ফেইসবুক খুলতেই দেখি সীতাকুন্ডের কৃতিসন্তান “ডাঃ মাসুদ পারভেজ আর নেই”।
ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”।
এই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক খবরটা দেখে আঁতকে উঠলাম। এ কিভাবে হলো ? স্বভাবসুলভ “আল্লাহ” বলে চিৎকার করে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ক্ষণকালের জন্য নিথর হয়ে রইলাম।
যিনি বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও বিভাগীয় প্রধান, চক্ষু বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
যিনি সীতাকুন্ডের গনমানুষের জনপ্রিয় চক্ষু ডাক্তার। আমার একমাত্র চাচা ডাঃ হুমায়ূন কবিরের বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী যাকে আমরা মাসুদ কাকা বলে ডাকতাম, আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ এখলাস উদ্দিনের একমাত্র ছেলে এশা ও তারাবী নামাজের সময় মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে অনন্তকালের অভিযাত্রায় সামিল হয়েছেন।
সহধর্মিণী আমার চিৎকার শুনে কি হয়েছে জানত চাইলে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে দুঃসংবাদটা জানাতেই সে নিজেও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই এই দুই পরিবারের একটি সুসম্পর্ক ছিল। আর আমার চাচার সহপাঠী ও বন্ধু হওয়ার সুবাদে সেই ছোটবেলা থেকেই উনাকে আমি জানতাম। অত্যন্ত সহজ সরল নিরেট ভদ্রলোক সর্বজন স্বীকৃত সজ্জন ব্যক্তিত্ব ডাঃ মাসুদ পারভেজ। যিনি নির্লোভ, নির্বিবাদী, নির্মোহ সাদামাঠা একজন ধার্মিক মানুষ। যার সাথে কারো কখনও কোন উচ্চবাচ্য হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। যিনি চক্ষু চিকিৎসার মাধ্যমে নিরলসভাবে মানবসেবা করে গেছেন, তিনি এই অসময়ে এত তাড়াতাড়ি না ফেরার দেশে পাড়ি জমাবেন ভাবতেই অবাক লাগছে। কিন্তু বিধির বিধান!!
কার কখন কিভাবে ডাক আসে একমাত্র তিনিই জানেন। তাই মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে উনার সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করে উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা হিসাবে কবুল করে নেওয়ার বিনীত ফরিয়াদ জানাই এবং আমাদের সকল ভুলত্রুটির জন্যও ক্ষমা চাই। উনার বিদেহী আত্নার চিরশান্তির জন্য সবার কাছে দোয়ার দরখাস্ত করছি।
হে আল্লাহ, আমাদের সকলের প্রিয় আপনার এই বান্দাকে জান্নাতের উচ্চতম আসনে স্থান করে দিয়েন। আমিন।।