কাইয়ুম চৌধুরী,২৯ডিসেম্বর(সীতাকুণ্ড টাইমস)-
নির্বাচন কমিশন পৌরসভা মেয়র-কাউন্সিলর নির্বাচনের ভোট গ্রহন করার সকল কার্যাদি সম্পন্ন করেছেন। সীতাকুন্ডের ৯টি কেন্দ্রে ৯০টি বুতের বেলেট পেপার, সীল, কালি ও বক্স পুলিং অফিসারদেরকে আজ বিকাল ২টা থেকে ৪টার মধ্যে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ভোট গ্রহনকারী কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সদস্যগণ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সীতাকুন্ড সহ জেলার ১০ পৌরসভাপর সব কেন্দ্রেই অবস্থান করছেন ভোট গ্রহনকারী কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সদস্যগণ।
গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়ে গেছে নির্বাচনী সকল প্রচার-প্রচারণা। চট্টগ্রামের দশ পৌরসভায় ভোটগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছে ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম। আজ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন ব্যালট পেপারসহ সকল নির্বাচনী সামগ্রী। এদিকে বিজিবি-পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে নিরাপত্তার প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু ভোট উৎসবের অপেক্ষায় আছেন পৌরসভার মানুষ।
চট্টগ্রামের যে ১০ পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে সেগুলো হল সীতাকুন্ড, মীরসরাই, বারইয়ারহাট, সন্দ্বীপ, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, রাউজান এবং রাঙ্গুনিয়া। গতকাল শেষ দিনের প্রচার-প্রচারণায় সাতকানিয়া ছাড়া চট্টগ্রামের আর কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রচার-প্রচারণায় শেষদিনে গতকাল সরগরম ছিল পৌর এলাকাগুলো। ভোটারদের মন জয়ের প্রাণান্তকর চেষ্টায় দুয়ারে দুয়ারে গেছেন প্রার্থীরা। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া এখনও পর্যন্ত মোটামুটি শান্তিপূর্ণই দেখা গেছে নির্বাচনী পরিবেশ। তবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাতেন জানান, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমাদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা পুলিশ প্রহরায় আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচন সামগ্রী নিয়ে যাবেন। ভোটকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত বলা যায়। এর আগে আমরা সকল নির্বাচনী সামগ্রী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৌছে দিয়েছি। আমরা আশা করছি ৩০ ডিসেম্বর সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) কাজী আব্দুল আউয়াল আজাদীকে জানান, অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি, র্যাব এবং আনসার পৌরসভাগুলোতে টহল শুরু করেছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে না ঘটে সেই ব্যাপারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ যাতে সুষ্ঠু হয় সেজন্য পূর্ণ প্রস্তুতি আমাদের আছে।
বিচ্ছিন্ন হামলা, সহিংসতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনের শেষদিন হিসেবে মিছিল-পাল্টা মিছিলে কিছুটা নির্বাচনী উত্তাপ ছিল। উৎসাহ-উদ্দীপনায়-নির্বাচনের ফ্লো বিরাজ করছিল।
চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী : চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মোট ৪৪৯জন মেয়র এবং কাউন্সিলর (সংরক্ষিত ওয়ার্ডসহ) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে মেয়র পদে ৩৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে সবচেয়ে বেশি ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সীতাকুন্ডে। এর মধ্যে দুই জন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নায়েক সফি ও ছুট্টু নিরাপত্তার কারণে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়িয়েছেন। এছাড়া মীরসরাইয়ে মেয়র পদে চারজন, বারইয়ারহাটে ৩ জন, সন্দ্বীপে ২ জন, রাউজানে ৩ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৪ জন, পটিয়ায় ৪ জন, চন্দনাইশে ৪ জন, সাতকানিয়ায় ৩ জন ও বাঁশখালীতে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা : চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলার ১৫ পৌরসভায় ভোট গ্রহণের জন্য ২০৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ২৪৩ জন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও ২ হাজার ৪৬৮ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু ভাবে ভোট গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে এদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৭ হাজার ২১৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২০৯ টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ১২৩৪টি, অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২টি, অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫০টি।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র : চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মোট ১৩৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১১৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) কাজী আব্দুল আউয়াল জানান, শুধুমাত্র চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন ৪ হাজারের মতো আনসার পুলিশ। ২১শ’ অস্ত্রধারী পুলিশ এবং ১৯শ’ আনসারের পাশাপাশি ১৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি পৌরসভায় এক প্লাটুন করে এবং তিনটি পৌরসভায় দুই প্লাটুন করে বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, মীরসরাই, সীতাকুন্ড, রাঙ্গুনিয়া এবং বাঁশখালীতে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে ১০ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ২০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তিনটি কেন্দ্র মিলে থাকবে একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ টহল টিম। পাঁচটি কেন্দ্র মিলে থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স। থানায় স্ট্যান্ডবাই ফোর্সও রাখা হবে। মোবাইল কোর্ট থাকবে। মোবাইল কোর্ট যে কাউকে জরিমানা করতে পারবে।
১০ পৌরসভায় ৪০ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন : চট্টগ্রামে যে ১০টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে সেই পৌর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নেমেছিলেন ১০ ম্যাজিস্ট্রেট। তাদের সাথে গত রোববার থেকে মাঠে নেমেছেন আরও ৩২ ম্যাজিস্ট্রেট। সবমিলিয়ে ১০ পৌরসভায় দায়িত্ব পালন করছেন ৪২ জন ম্যাজিস্ট্রেট।
গত রোববার রাত ১২টা থেকে চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মোটর সাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত। এদিকে আজ ২৯ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর (বুধবার) মধ্যরাত পর্যন্ত বেবি টেক্সি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, টেক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।