সংবাদ শিরোনাম
Home / ইউনিয়ন সংবাদ / কুমিরায় প্রায় পাঁচশত বছরের পুরানো মসজিদটির স্মৃতি ধরে রেখেই নির্মাণ হচ্ছে হাম্মাদিয়া মসজিদ

কুমিরায় প্রায় পাঁচশত বছরের পুরানো মসজিদটির স্মৃতি ধরে রেখেই নির্মাণ হচ্ছে হাম্মাদিয়া মসজিদ

ডেস্ক রিপোর্ট,২০এপ্রিল(সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম) 

সীতাকুন্ডের ছোট কুমিরায় সাড়ে পাঁচশত বছর পূর্বের হাম্মাদিয়া মসজিদটি ভেঙ্গে অত্যাধুনিক মসজিদ নির্মানের সংবাদটি জানার পর চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের নেতৃবৃন্দরা মসজিদটি রক্ষা করা জন্য আবেদন করেছে সীতাকুন্ড  উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর। সংবাদটি সিটিজি টাইমস সহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দাবী উঠেছে প্রাচীন এই মসজিটি রক্ষা করার। পরিশেষে মসজিদটি সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলেন সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীন ইমরান। তিনি জানায় মসজিদটির মূল গম্বজ অর্থ্যাৎ পুরাতন মসজিদটি না ভেঙ্গে কৃর্তপক্ষ পাশেই একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করবে। মসজিদ কমিটি প্রতিবেদককে জানায় তারা শুরুথেকেই পুরাতন এক গম্বুজের মসজিদটি টিক রেখেই নতুন মসজিদ নির্মাণ করার পরিকল্পনা করে।
তারা আরও জানায়  মুসল্লির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদের মূল গম্বুজটি রেখে বাকী অংশ ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণ করার কাজ শুরু করেছে। মসজিদ কমিটির সভাপতি ছালেহ আহমদ ও সেক্রেটারী আব্দুস ছুক্কুর জানায় ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটিতে ২২ মহল্লার মুসল্লী এবং দুরদুরান্ত থেকে মুসল্লীরা ছুটে আসে নামাজ আদায়করতে। ফলে জায়গার অভাবে আনেক সময় মুসল্লীরা নামজ আদায় করতে জটিলতা সৃষ্টি হয়।তাই এলাকাবাসীর পরামর্শক্রমে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ করার পরিকল্পনা করি। অর্থ কালেকশন কমিটির সদস্য জসিম জানায় প্রায় সাড়ে তিনকোটি ব্যায়ের এমসজিদটি নির্মিত হলে এটি হবে একটি দৃষ্টিনন্দক স্থাপনা। তিনি সমাজের সকলকে আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসার অনুরোধ জানায়। মসজিদ কমিটির প্রবীন সদস্য আনিছ জানায় এ মসজিদের একটি ঐতিহ্যরয়েছে। মসজিদকে ঘিরে রয়েছে এলকাবাসীর কবরস্থান। পর্যায়ক্রমে পুরো এলাকাটি সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হবে। মসজিদের প্রাথমিক আয়দিয়ে বর্তমান সম্প্রসারিত কাজের ১তলা কাজ সম্পন্ন করা যাবে। সাধারণ মুসল্লীরা দাবী করেছে একতলার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার। এদিকে এলাকার প্রবীন শিক্ষক মাওলানা নুরুন্নবী বলেন পুরাতন মসজিদটিতে বড়বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহুর্তেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি প্রতিবেদককে  বলেন কয়েকশ বছরের পুরাতন মসজিদটি ঝঁকিপূর্ণ বিধায় মসজিদটি পুরো ভেঙ্গে নতুন করে পূর্বের মত অবিকল করে নির্মাণ করারও দাবী জানান তিনি। কারন পুরাতন মসজিদটি আজকে না হলেও পরবর্তীতে ভাঙ্গতে হবে। পুরাতন মসজিদের ভিতরে নামাজ পড়া অব্যাহত রাখলে যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানি ঘটতে পারে।
চট্টগ্রামের এই হাম্মাদিয়া মসজিদটি ১৫শত শতাব্দিতে নির্মিত হয়েছে বলে জানাযায়। একগম্বুজ মসজিদ আর পাশে একটি বড়দিঘী খনন করে দ্বীন প্রচারের জন্য তখনকার ধর্মপ্রচারকরা এগুলো নির্মাণ করেছে। একই ভাবে সীতাকুন্ড পৌরসদরের মধ্যম মহাদেবপুর নীচতালুক এলাকায়ও একটি ছোট্ট মসজিদ ও বড় দিঘী করেছে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে মসজিদটি ভেঙ্গে নতুন মসজিদ তৈরী  করেছে।
স্থানীয় জয়নাল কমিশনার জানান মসজিদটি তারা প্রথমে ভাঙ্গতে চাইনি কিন্তু জায়গার অভাবে পুরাতন মসজিদটি ভেঙ্গে সকলের সহযোগীতায় নতুন মসজিদ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান বিগত চারশত বছর ধরে যারা মসজিদটির ইমামতি করেছেন তার হিসাব আছে তাদের কাছে। সীতাকুন্ড আলীয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাত মাওলানা ওবাইদুলহক,জামাল উল্লাহ হুজুর,হাবীবুল্লাহ এবং তার জেঠা মোঃ আব্দুল্লাহ এ মসজিদরে ইমামতি করেছে পর্যায়ক্রমে।
একই ভাবে মিরসরাই নয়দুয়ারিয়া মসজিদ প্রাচীন ইতিহাস ধারন করে আছে। এসব মসজিদগুলো দেখার জন্য প্রতিদিন লোকের সমাগম হয়। এপুরাতন এক গম্বুজের মসজিদগুলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রাচীন স্বাক্ষী।
বিশিষ্ট কবি সাহিত্যক সীতাকুন্ড উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান এডভোকেট মোস্তফানুর জানায় আটশত বছর মুসলিম শাসনের সময় এবং বখতিয়ার খলজির বঙ্গবিজয়ের পর ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসার করার জন্য এই স্থাপনা গুলো নির্মান করা হয়।  এর পর ইংরেজরা দুইশত বছর শাসন করার পর এসব স্থাপনা গুলোর আশে পাশে ঝোপঝাড় জঙ্গলে পরিণত হয়। পরবর্তীতে মুসলমানরা গভীর জঙ্গলে এসব মসজিদ দেখে এদেরকে গায়বী মসজিদ নামে আখ্যায়িত করতে থাকে।
আরও জানাযায় ১৫৩৩সাল থেকে ১৫৩৮ সালে হোসেন শাহী আমলে নবাব হামিদ খান চট্টগ্রামে পূর্ব অঞ্চলের গর্ভনর থাকা কালে এ মসজিদ গুলো নির্মিত হয়।
বর্তমানে প্রায় ইতিহাস অসচেতনার অভাবে  একের পর এক ইসলাম ধর্মের এই পুরানো নিশান গুলো ধ্বংস হয়ে গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা দেখতে পারবেন স্থাপনা গুলো। কুমিরার হাম্মাদিয়া মসজিদ, মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারিয়া মসজিদ অন্যতম। রাস্তার পাশে হওয়ায় এই মসজিদগুলো সবার নজর কেড়ে নেয় সহজেই।
ইসলাম ধর্মের প্রাচীন স্মৃতি স্থাপনা গুলো নষ্ট না করে সংরক্ষনের আন্দোলন করে আসছে প্রখ্যাত ইতিহাস বিদ প্রফেসর ড.মইনুদ্দিন আহমেদ খান,আহমেদ মমতাজ,প্রফেসর ড. আবুল কাশেম,ড. মোঃ সানাউল্লাহ, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সোহেল মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন.সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ গোলাম নবী,অধ্যাপক ওসমান জাহাঙ্গীর,মুহাম্মদ আশরাফ খান, কবি আরিফ চৌধুরী, মহিউদ্দিন কাদের,রেজাউল করিম তালুকদার ও ইঞ্জিনিয়ার নুর হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *