সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / বাঁশবাড়িয়া ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু হত্যা ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তি

বাঁশবাড়িয়া ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু হত্যা ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তি

জাহেদ চৌধুরী, সীতাকুণ্ড টাইমস ঃ

সীতাকুণ্ডে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা প্রথমে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে আগুনের নাটক সাজিয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার আসামিরা তাদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মোঃ তোফায়েল আহমেদ জানান,”গত ২৪/০৫/২৩ইং তারিখ আমি সীতাকুন্ড মডেল থানাধীন কুমিরা ঘাটে অবস্থানকালে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জানতে পারি যে, মডেল থানাধীন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের রহমতের পাড়া গ্রামস্থ মোঃ আনোয়ার হোসেন কিবরিয়ার বসত ঘরে তার স্ত্রী আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করেছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে থানা এলাকায় মোবাইল ডিউটিতে কর্তব্যরত এসআই মোঃ নাছরুল্লাহ রুবেলকে সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পাঠাই। পূর্বের নির্দেশ মোতাবেক এস.আই ঘটনাস্থলে পৌছে ঘটনাস্থলের পারিপার্শ্বিকতাসহ ভিকটিমের লাশের ছবি আমাকে প্রেরণ করেন। ভিকটিমের ছবি দেখে আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং প্রতিবেশি সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করি। ঘটনাস্থলে সাদা চোখে অদৃশ্য কিছু আলামত আমি ব্যক্তিগত হেফাজতে নেই। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মহিলা পুলিশ দিয়ে মৃত দেহটি উলট-পালট করে পর্যবেক্ষন করি। পর্যবেক্ষনকালে ভিকটিমের মাথায় ৩টি ক্ষত আছে যা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এছাড়াও ভিকটিমের মৃত দেহ খাটের উপরে পড়ে থাকার ধরণ দেখে আমি নিশ্চিত হই যে, এটি একটি পূর্ব্ পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা। পরবর্তীতে মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্টসহ অন্যান্য কার্যক্রম শেষে ভিকটিমের ভাশুর গোলাম মোস্তাফা (৪৫), পিতা-মৃত আবুল মনছুর, স্বপ্না আক্তার (৩০), নিহতের ঝা, স্বামী-গোলাম মোস্তফা, ৩। মোঃ আনোয়ার হোসন কিবরিয়া (নিহতের স্বামী), পিতা-মৃত আবুল মনছুর, সর্ব সাং- রহমতের পাড়া, সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম দেরকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসি।

ঘটনাস্থল হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমানাদি, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যাদি গুলো তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ন্যানো বিশ্লেষন করে হত্যা কান্ডে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে নিজেরা অবগত হই। জিজ্ঞাসাবাদের নিমিত্তে গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ও স্বপ্নার প্রদত্ত তথ্যাদি সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ায় এবং এলোমেলো ভাবে কথাবর্তা বলায় মোস্তফা ও স্বপ্নাকে সন্দিগ্ধ আসামী হিসাবে ট্রিট করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে উভয় দোষ স্বীকার করে যে, তাহাদের সাথে ভিকটিমের সাথে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘ দিন বিরোধ চলিয়া আসতে ছিল। বিরোধের জের ধরে ঘটনার ৫ দিন আগে বাড়ীর উঠান থেকে পানি নিস্কাশনের জন্য মোঃ মোস্তফা একটি ড্রেন করেছিল। কিন্তু ভিকটিম ড্রেনটি বন্ধ করে দেয়। বিষয় নিয়ে উভয়ের মধে্য ঝগড়া বিবাদ হয়। মোস্তফা ও স্বপ্না দুইজনেই ভিকটিম মৃত রোকসানাসহ তার স্বামীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। প্রথমে তারা সিদ্ধান্ত নেয় রোকসানাকে মারবে এর পরে সুযোগ বুঝে তার স্বামীকে মারবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন আসামী দুইজন পরিকল্পনা করে তার স্বামী যখন বাড়ীতে থাকবে না তখন ঘরের ভিতর মেরে ফেলবে এবং ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করবে। এই আলোকে আসামী মোস্তফা বাঁশবাড়িয়া বাজারস্থ ছুট্টু সওদাগরের মুদি দোকান থেকে ৯০ টাকার কেরোসিন তৈল এবং স্বপনের ফার্মেসী থেকে ৩০ টাকা দিয়ে হ্যান্ডগ্লাফস কিনে বাড়ীতে আসে। তখন দুপুর সাড়ে ১২ সময় মোস্তফা নিজ বসত ঘরে মধ্যেই হ্যান্ডগ্লাফস পরিধান করে এক হাতে একটি গাছের সাইজ কাঠ নেয় তার স্ত্রী কেরোসিন তৈলের বোতল নেয় তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। ভিকটিম নিহতের ঘরের দরজা হালকা খোলা দেখেতে পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ভিকটিমকে খাটের উপরে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে মাথার পিছনে কাঠ দিয়ে বারি মারলে ভিকটিম খাটের উপরে পড়ে যায়। তার পর লেপ কাথা মুড়িয়ে দিয়ে ঘরের ভিতর অবস্থান করে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হোসনে আরা সব দেখে ফেলায় তাকে তার বোবা মেয়েসহ মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং হোসনে আরকে তাহার বসত ঘরে ভিতর রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে।আসামীদ্বয় আবারও প্রায় ১টার দিকে নিহতের বসত ঘরে প্রবেশ করে কেরোসিন তৈল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে আসে। তারা মনে করেছিল যে, মানুষ দুপুর বেলা ভাত রান্না করে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে মর্মে চালিযে দিবে। কিন্তু গ্যাস সিলিন্ডার পর্যন্ত আগুন যাওয়ার আগেই ধোঁয়া দেখে প্রতিবেশীরা আসতে দেখে আগুন বন্ধ করে। এরপর কারেন্ট এর শর্ট বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষ সাক্ষীসহ ধৃত আসামীদ্বয় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। নিহতের পিতা বাদী হয়ে আসামী গোলাম মোস্তফা ও স্বপ্নার বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। সীতাকুন্ড মডেল থানার মামলা নং-৩৪ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *