সংবাদ শিরোনাম
Home / রাজনীতি / বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় হবে ছাত্রলীগ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় হবে ছাত্রলীগ

দেশের ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮৯টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন এমন ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে সম্প্রতি বেশ কিছু শিক্ষার্থীর জড়িয়ে পড়ার অভিযোগের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির দুয়ার খুলে দেয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বলা হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূল ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকার সুবিধাই নিচ্ছে কুচক্রি মহল। অবশ্য এর বিপরীত যুক্তিও রয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংস ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই ধরণের রাজনীতিমুক্তই দেখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্লেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন বলেছে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি করবে। বৈধ যে ছাত্র সংগঠনগুলো রয়েছে, তারা নিশ্চয়ই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অথবা মানুষ হত্যার মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে না। তারা যদি ছাত্রদের সঠিক দাবি চিহ্নিত করে, গণতন্ত্র চর্চা করে তাতে ক্ষতির কিছু দেখছি না।

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির নামে ক্ষমতা দখলের যে আধিপত্য চলছে, তাতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তবে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতির চর্চা। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতিবিমুখ হওয়ার একটা প্রবণতাও রয়েছে। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণেরও খুব একটা নজির নেই।

২০১২ সালে প্রথম সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটি গঠন কর হয়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তানভীর রহমান জয় এবং শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির ছাত্র সরকার মোহাম্মাদ রেফাত সঞ্জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ইউনিট মর্যাদায় এই কমিটি প্রকাশ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। সংগঠনের গঠনতন্ত্র মতে দেশের সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ও কার্যক্রম পরিচালনা করবে এই ইউনিট।

দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ইউনিটের অধিনে দেশের বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। যদিও এখন পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নি। এছাড়া ২০১৫ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা কমীরা।

গত বছরের ২১ অক্টোবর ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন এক জরুরি বৈঠকে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটিকে বিলুপ্তি ঘোষণা করেন এবং সেই সঙ্গে গত বছরের ২০ অক্টোবর সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যে কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে তা বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়।

দেশে সম্প্রতি জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের পেছনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে ছাত্রলীগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি না থাকাকে দায়ী করলেও বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বা প্রগতিশীল কোনো সংগঠনের কর্মকাণ্ড নেই। গত এক বছরের অধিক সময় কোনো কমিটি বা তদারকি না থাকায় থমকে পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কার্যক্রম।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংগঠনের কোনো সরব কাজ নেই এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা নেই, সেখানে নীরব কাজ চলছে। যারা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা কাজ করছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জানান, গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে যদি প্রগতীশীল ছাত্র সংগঠন থাকে তাহলে আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষের নানা অসঙ্গতির প্রতিবাদ জানাতে পারবো। কার্যত প্রতিবাদ করার জন্য শক্তিশালী কোনো সংগঠন আমাদের নেই।

সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ভার্সিটি মাঝে মাঝে আমাদের ওপর কিছু অযাচিত অর্থ চাপিয়ে দেয়। আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না। ছাত্ররাজনীতি করার সুযোগ থাকলে আমরা এর প্রতিবাদ করতে পারতাম।

ছাত্রলীগ নির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য ও সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুলতান মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি শুরু করি তার পথটুকু মোটেও সহজ ছিলো না। আমরা প্রতিনিয়ত ভার্সিটি প্রসাশনের নজরদারীতে থাকতাম। অনেক দিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি না থাকায় জঙ্গিবাদ ও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অপ ব্যবহারের চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আনন্দ সাহা পার্থ বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি সক্রিয় করতে কাজ করছে ছাত্রলীগ। দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে আলাপ করা হয়েছে। যে কোনো সময় সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি প্রকাশ হতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ছাত্রলীগের ডায়নামিক নেতৃত্ব আসা সম্ভব। ঢাকা মহানগরের র্শীষ ৪ ছাত্রলীগ নেতাদের তিনজনই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছাত্রীদের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিকে ছাত্রীরাও এগিয়ে এসেছে। অনেক নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন যার প্রতিনিয়ত ছাত্রলীগের সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর মোকাবেলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আগেও ছিলো আগামীতেও থাকবে। আমার যাচাই বাছাই করে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করবো।

তিনি আরো বলেন, সুস্থ মনন ও আদর্শ চর্চায় দেশের প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ওপর ১০০ নাম্বারের কোর্স চালুর দাবি আমরা সবসময়ই করে আসছি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা আছে কী না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অনেক নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ বিষয়ে তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ইউনিটের কোনো অপকর্মের অভিযোগ নেই। আদর্শ ও নৈতিকতা চর্চার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ইউনিট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *