সংবাদ শিরোনাম
Home / জাতীয় / সমঝোতার পরদিন এল আরও ১৩২০ রোহিঙ্গা

সমঝোতার পরদিন এল আরও ১৩২০ রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক সইয়ের পরদিন গতকাল শুক্রবার নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফে ঢুকেছে আরও ১ হাজার ৩২০ জন। গত এক সপ্তাহের মধ্যে টেকনাফে সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা প্রবেশের ঘটনা এটি। এদিকে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হওয়া নিয়ে খুশি হলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে তাঁরা তেমন আশাবাদী নন। মিয়ানমারকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা বোকামি হবে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বৈঠক হয়। এরপরই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা অনুযায়ী আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সমঝোতা সই হওয়ার দিনও ভেলা ও নৌকায় করে নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফে এসেছিল ১ হাজার ১১২ রোহিঙ্গা।

প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গতকাল পালিয়ে আসা ৩৬৩টি পরিবারের ১ হাজার ৩২০ রোহিঙ্গাকে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয় বলে জানান উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির। তিনি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের প্রথমে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ দিয়ে তাদের উপজেলার নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠান তাঁরা। এক সপ্তাহের মধ্যে টেকনাফে গতকাল সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা এসেছে।

অবশ্য উখিয়া সীমান্ত দিয়ে গতকাল রোহিঙ্গা প্রবেশ করেনি বলে জানান কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ। এর আগে ১৯ নভেম্বর উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে ৬৪৭ জন রোহিঙ্গা এসেছিল। উখিয়া সীমান্ত দিয়ে এখন রোহিঙ্গা আসা প্রায় বন্ধ বলে জানান তিনি।

সমঝোতা নিয়ে সন্দিহান রোহিঙ্গা নেতারা

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, অং সান সু চি শুরু থেকে বলে আসছিলেন রাখাইনে কোনো নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কারণ খুঁজে দেখবেন তিনি। চাপে পড়ে এখন সমঝোতা করেছেন তিনি। বালুখালী শিবিরে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। এই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, মিায়ানমার চালাচ্ছে আসলে সেনাবাহিনী। তারা না চাইলে কোনো রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরতে পারবে না।

বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপে পড়ে মিয়ানমার এই সমঝোতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের সি ব্লকের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, সমঝোতা সইয়ের অর্থ রাখাইনে অত্যাচার-নিপীড়নকে স্বীকার করে নেওয়া। তবে সমঝোতার মাধ্যমে মিয়ানমার কালক্ষেপণ করার কৌশল নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের সভাপতি আবদুল হাফেজ বলেন, ঘরবাড়ি, জায়গাজমি ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি সমঝোতায় থাকতে হবে। এই সমঝোতার বাস্তবায়ন দেখতে চান তাঁরা। তিনি বলেন, তাঁরা নিজ দেশে ফিরে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চান।

টেকনাফের লেদার অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আবদুল মতলব বলেন, এর আগেও অনেকবার তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিল মিয়ানমার। কিন্তু তারা কথা রাখেনি। এই রোহিঙ্গা নেতা ২০১২ সালে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু তাঁর পরিবার এসেছে গত অক্টোবর মাসে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার কবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। রাখাইনে গিয়ে নিজ ভিটেমাটি ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা চান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। নিজ দেশে যেতে পারলে তারা খুশি হবে।

লেদার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বলেন, মিয়ানমারে ফেরত গেলে রোহিঙ্গাদের ওপর আর নির্যাতন করা হবে না, সবার আগে এই নিশ্চয়তা চান তাঁরা। নির্যাতনের কারণে ১৯৯২ সালে প্রথম দেশ ছেড়ে মা-বাবার সঙ্গে যুবক বয়সে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর পর প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া শুরু হলে তাঁরা মিয়ানমারে ফিরে যান। দেশে তাঁদের ৮৩ একর জমি ছিল। কিন্তু ফিরে গিয়ে জমি ফেরত পাননি। এরপর নির্যাতনের মুখে ২০১২ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে যাওয়ার আগে জমি ফেরতের নিশ্চয়তা চান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *