সংবাদ শিরোনাম
Home / জাতীয় / সাভারে নিহত ২৪৫, ধ্বংসস্তূপে কতজন আটক কেউ জানে না

সাভারে নিহত ২৪৫, ধ্বংসস্তূপে কতজন আটক কেউ জানে না

২৫ এপ্রিল (সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম )
 সাভার: লাশ উদ্ধার ২৪৫। হস্তান্তর ১৮৩। আহত উদ্ধার ২০০০। তিনটি অংক। আশঙ্কা হলো প্রথম অংক দুটি কেবলই বাড়ছে। আসলে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। এর শেষ কোথায় কেউ জানে না। কখন শেষ লাশটি ‍উদ্ধার করা হবে তাও অজানা। অন্যদিকে ভেতরে আটকেপড়া জীবিতদের আহাজারি আর কান্না যে হাহাকারের জন্ম দিয়েছে তার শেষ পরিণতি কী- কেউ বলতে পারছে না। কত লোক চাপা পড়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। আহত উদ্ধার করা হয়েছে ১৫শ’রও বেশি। সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বিদেশী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখনো এক থেকে দেড় হাজার লোক নিখোঁজ রয়েছেন।

সাভারের রানা প্লাজা ধসের মতো মনুষ্যসৃষ্ট ভয়াবহতা এদেশবাসি আর দেখেনি। এর মধ্যে চলছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রসিকতা। দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভকেও তোয়াক্কা করছেন না তিনি। নিজের অনুমাননির্ভর মন্তব্যে অটুট তিনি। অনলাইনে একজন বলেছেন এটি রাষ্ট্রীয় রসিকতা।

সাধারণ মানুষের বক্তব্য হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রসিকতা করতেই পারেন। কিন্তু এই  লাশের মিছিলের শেষ পরিণতি কী তা কেবল জানে যারা স্বজন হারিয়েছেন।

উদ্ধার কাজ চলছে

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনার উদ্ধার কাজ চলছে। উদ্ধার কাজ শেষ হবে কবে কখন তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি, ভালোবাসা সবাই আছে চাপাপড়া হতভাগাদের সঙ্গে।

এদিকে বুধবার উদ্ধার করা মৃত্দেহ থেকে দুগন্ধ বের হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ গুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে নবীনগর থেকে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকে রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আটকে পড়া মানুষজনের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। অনেক মহিলা, পুরুষ তাদের বের করার জন্য আকুতি জানিয়ে চিৎকার করছেন।  অনেকে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টের কথা বলছেন।

কিন্তু ইট, লোহা আর কংক্রিটের স্তূপে এমনভাবে তারা আটকে রয়েছেন, উদ্ধারকর্মীরা কোনো নিরাপদ রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না।

সন্ধ্যার পর মূলত স্থানীয় মানুষজন আর আটকে পড়া মানুষজনের আত্মীয় স্বজনরাই বিভিন্নভাবে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিভিন্ন ফাঁক-ফোকর দিয়ে আটকে পড়া লোকজনদের খাবার, পানি, এমনকি অক্সিজেনও দেয়া হচ্ছে।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে দমকল বাহিনী প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটার দিকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ভবনটি থেকে ৮০টি মৃতদেহ বের করা হয়েছে।  মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

খান বলেন, ভেঙে পড়া ভবনের ভেতর এখনও অনেকে জীবিত রয়েছেন। “এই মূহুর্তে জীবিতদের বের করে আনার ওপরেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।”

তবে কত লোক ঠিক আটকে রয়েছেন, সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। যেহেতু ভবনটিতে তিনটি পোশাক কারখানা ছিল, তাই আটকে থাকা লোকজনের সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে বলে উদ্ধারকর্মীরা ধারনা করছেন।

বিবিসিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ইমারত নির্মাণের নিয়ম কানুন যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তবে একইসাথে মন্ত্রী বলেন, কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সাম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

মন্ত্রী জানান, তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দমকল বাহিনীর প্রধান বলেন, ভেঙে পড়া ভবনটির অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে বিভিন্ন দিক থেকে কেটে ভেতরে ঢুকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, উদ্ধারকাজ বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত গড়াতে পারে।

সন্ধ্যার পর ফ্লাড লাইট নিয়ে উদ্ধার চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলেও, ভবন কাটার জন্য ভারী কোনো যন্ত্র ব্যাবহারের তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। উদ্ধারকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন সেনা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আটকে পড়া মানুষজনের প্রাণহানির ভয় পাচ্ছেন তারা।

তিনি বলেন, তারা চেষ্টা করছেন ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া লোকজনকে যতটা সম্ভব নিরাপদে বের কর আনতে।

আবারো ট্রাজেডির শিকার পোশাক শ্রমিক
ধারণা করা হচ্ছে, আহত নিহতদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক, কারণ ভেঙে পড়া ভবনটিতে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা ছিল। দেশে ভবন ধসে অথবা অগ্নিকান্ডে কিছুদিন পরপরই পোশাক শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এর আগে ২০০৫ সালের এই মাসেই অর্থাৎ এপ্রিলে সাভারের কাছে স্পেকট্রাম নামে একটি পোশাক কারখানা ধসে ৬০ জনেরও বেশি শ্রমিক মারা গিয়েছিল।

ভবনটিতে ফাটল ছিল?
মঙ্গলবার রানা প্লাজা নামে ভবনটিতে ফাটল চোখে পড়ে, কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের নিষেধের পরেও বুধবার তা খোলা রাখা হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল নয়টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দ এবং কাঁপনে তারা ভূমিকম্পের আশঙ্কা করেন। পরে বেরিয়ে দেখেন বিরাট এলাকা ধুলা বলিতে ধোঁয়াটে হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *