চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের মানুষ কেন ভারতমূখী !
কামরুল ইসলাম দুলু ভারত থেকে,সীতাকুণ্ড টাইমসঃ
ভারতে কেন বাড়ছে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা ? অনেকের মতে, বিশ্বাস, ব্যবহার আর আচরণ- এ তিন গুণ বাংলাদেশি রোগীদের টেনে নেয় বিদেশে। আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার যে করুণ অবস্থা তা ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেই অনুমান করা যায়। একসময় খুব বড়লোক নাহলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতেন না। এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের অনেক গরীব মানুষ ভারতে যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এর একমাত্র কারন আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা নেই। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাচ্ছে। এছাড়া রোগীর সাথে ডাক্তারের দূর্ব্যহার, নিয়মের চেয়ে ডবল ফি, সময় নিয়ে রোগী না দেখা, এক্সেরের বিভিন্ন রির্পোট ভুলসহ নানাবিধ কারণে আমাদের দেশের চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের ডাক্তারদের মন-মানসিকতা খুবি উদার। রোগীর প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ অত্যন্ত পখর। রোগীর সাথে তাদের আচরণ দেখে, ব্যবহার দেখে রোগী অনেকটা সুস্থ্যতাবোধ করেন। খেয়াল করে দেখলাম ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব রোগী যায় তা বাংলাদেশের। অন্য কোন দেশের মানুষ ভারতে তেমন চিকিৎসা নিতে যায়না। ভারতের ভেলোর এ ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠাত ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতার সিএমসিতে গিয়ে যেটা উপলদ্ধি করলাম বাংলাদেশের রোগী ছাড়া আর কোন দেশের রোগী চোখে পড়েনি। তার আরো একটি প্রমাণ পেলাম, ভেলোর এর তামিল নাডুর যে জায়গায় হাসপাতাল সেই বিশাল এলাকার দোকানপাট, মার্কেটগুলোতে হিন্দি ও তামিল নাডুর ভাষার পর সাইনবোর্ডে বাংলাতে লিখা। হাসপাতালেও তাদের রাজ্যের নিজস্ব ভাষার পাশাপাশি বাংলাতে লিখা। এটাই প্রমাণ করে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া অন্যদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য কেউ যায়না। নিজে ভেলোর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যখন ডাক্তারের সাথে কথা বলছি, ডাক্তার যখন একের পর এক প্রশ্ন করছেন তখন নিজকে ছোট মনে হচ্ছিল। নিজের দেশে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে তাদের কাছে আসা, ভুল চিকিৎসার কারণে তাদের কাছে আসা একথাগুলো বলতে কেমন যেন নিজের দেশকে অন্য দেশের কাছে ছোট করে চলেছি ! ভারতের ডাক্তার আর আমাদের দেশের ডাক্তারদের মধ্যে কেন এত তপাৎ ? চিকিৎসা করতে আসা বেশ কজন রোগী জানান, চিকিৎসার নামে এইদেশে ( ভেলোরে) কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়নি। ভুল চিকিৎসার ঘটনাও কম। একই ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা একাধিকবার করানো, রোগীকে সময় কম দেয়া, বাড়তি আয়ের জন্য রোগীকে অতিরিক্ত সময় কেবিন বা বিছানায় রাখার প্রবণতা নেই এখানে। ভুল চিকিৎসার জন্য মাশুল গুনতে হয় দেশগুলোর ডাক্তারদের। অভিযুক্ত ডাক্তারের লাইসেন্স বাতিল বা
ফৌজদারি মামলা হয়। কঠোর আইনের
মধ্যেই থাকতে হয় ডাক্তারদের। কিন্তু
বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। ভুল চিকিৎসার জন্য রোগীর মৃত্যু ঘটলেও স্বজনরা অসহায়। ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। শুধুমাত্র চিকিৎসার বাবদ প্রতিদিন আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ টাকা চলে যাচ্ছে ভারতে । যদি আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো হতো তাহলে এত টাকা নিজের দেশেই থাকতো। ভারতে কেন চিকিৎসা-এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, সবচেয়ে বড় ব্যাপার চিকিৎসক ও নার্সদের সুন্দর আচরণ। এ আচরণ ও ব্যবহারের কারণে রোগীরা ৩০ শতাংশ সুস্থ হয়ে যান। তিনি বলেন, একই মানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এ দেশে ( ভারতে) পরীক্ষার সঠিক ফল পাওয়া যায়। দেশে একেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একই রোগীর পরীক্ষার একেক ধরনের ফল মিলে। থাকে টাকার ব্যবধানও। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে ভারতে চিকিৎসার ব্যাপক ফারাক। নিজের কাছে লজ্জা লাগে যখন ডাক্তারের কাছে পরিচয় দেয় বাংলাদেশ থেকে এসেছি। মনে হয় তখন আমার দেশকে ছোট করছি আমার দেশের ডাক্তারদের ছোট করছি। জানিনা তারা কি মনে করেন, যখন বলি আমাদের দেশে ভুল চিকিৎসার কারণে এখানে আসতে হয়েছে। সবদিক দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু চিকিৎসার দিক দিয়ে কেন উন্নতি করতে পারছি না ? আমাদের দেশ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ভারতে চলে যাচ্ছে শুধু চিকিৎসার ক্ষেত্রে। কবে পাবো আমরা মান সন্মত চিকিৎসা, কবে দেশের মানুষ অন্তত চিকিৎসার জন্য ভারতমুখী হতে হবে না। এজন্য প্রয়োজন সরকারী উদ্যেগ আর ডাক্তারদের মন মানসিকাতার আমুল পরিবর্তন আর
যতদিন মুনাফার উদগ্র লালসা না কমবে, যতদিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে মানবিকতার সৃষ্টি না হবে, ততদিন খাঁটি
বাংলাদেশি হওয়া সত্ত্বেও মানুষ ভারতে
চিকিৎসার জন্য যেতে বাধ্য হবে।