সংবাদ শিরোনাম
Home / উপজেলা সংবাদ / ৮ কোটিপতি সন্ত্রাসী বাহিনীর আস্তানা ছলিমপুর

৮ কোটিপতি সন্ত্রাসী বাহিনীর আস্তানা ছলিমপুর

ওমর ফারুক  crime০৭ জুন (সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম)- চট্টগ্রামের ছলিমপুর। নাম শুনলেই ভয়ে আঁতকে উঠে অনেকে। পাহাড়ি ভূমি দখল,অপরহণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, খুন-গুমসহ বিভিন্ন অপরাধের নিরাপদ আস্তানা এটি। চট্টগ্রামের বাঘা-বাঘা সন্ত্রাসীর আস্তানা রয়েছে ছলিমপুরে। শীর্ষ সন্ত্রাসীর ওই এলাকায় ছোটখাটো পাহাড়ে বস্তি রয়েছে। বস্তিগুলো ঘিরে চলে বিভিন্ন অপরাধ। দখল-বেদখল, বন্দুকযুদ্ধ। আর ওই এলাকার হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষকে নিয়ে যারা রাজনীতি বা ব্যবসায় করে তারা সবাই কোটিপতি সন্ত্রাসী। আট ধনাঢ্য সন্ত্রাসীর বাহিনী বর্তমানে ওই এলাকার মানুষের ভালোমন্দ দেখভাল করছে।

সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো হলো আক্কাস বাহিনী ( ক্রসফায়ারে নিহত), সিঙ্গাপুর নাছির বাহিনী, মশিউর রহমান বাহিনী, রোকন উদ্দিন বাহিনী, কসাই নাছির বাহিনী, পাহাড়ি লোকমান বাহিনী, জানে আলম বাহিনী, দেলোয়ারা বাহিনী। বিভিন্ন অপরাধের পাশাপাশি প্লট বিকিকিনিতে এরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ছলিমপুরসহ নগরীর বিভিন্ন জায়গায় তাদের রয়েছে গাড়ি, বাড়ি এবং মূল্যবান স্থাপনা। ওই সব সন্ত্রাসীর ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীতাকুন্ড ছলিমপুরে চলছে বিভিন্ন অপরাধের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সরকারি পাহাড়ি এলাকা কেটে প্লট বিকিকিনি। অপরাধীরা এ স্থানে ছিন্নমূলদের পুনর্বাসনের কথা বলা হলেও মূলত এখানে ১০ শতাংশ রয়েছে ছিন্নমূল। বাকিরা লাখপতি ও কোটিপতি। এ দুই হাজার একর পাহাড়ি ভূমি দখলে কয়েকটি গ্রুপ দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। সরকারি পাহাড় কেটে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে প্লট বিক্রি করে প্রতারিত করছে ওই গ্রুপগুলো। নগরী ও জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠা এ জঙ্গল ছলিমপুরে গত ৯ জানুয়ারি কিছু ভূমিদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোপন বৈঠক চলাকালে র‌্যাব-৭-এর সাতটি অপারেশন দল চারদিক থেকে ঘিরে সাত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে তাদের গোপন আস্তানা থেকে রিভলবার একটি, একনলা বন্দুক একটি, এলজি সাতটি, কার্তুজ ছয় রাউন্ড, লেদ মেশিন দু’টি, রামদা পাঁচটি, কিরিজ দু’টি, ছোরা-৭৮টি, ফায়ারিং পিন-১৭০টি উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ছাড়াও দেশী অস্ত্র তৈরির আরো অনেক সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাহিনী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সেখানে বসবাসকারী সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। এসব সন্ত্রাসী র‌্যাব-পুলিশের ভয় দেখিয়ে এলাকায় নিরীহ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আসছে বলে এমনই অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ পাহাড়ি এলাকা ছলিমপুরের ছিন্নমূল বস্তিবাসীদের নেতা, ভূমিসন্ত্রাসী আক্কাস বাহিনীর প্রধান আক্কাস আলী র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা গেলে কিছু দিন এসব অপরাধ বন্ধ ছিল। ওই সময় রোকন উদ্দিন, কাজী মশিউর রহমানসহ অন্য অপরাধীরা কিছু দিন গা ঢাকা দেয়। বর্তমানে তারা বিভিন্ন গ্রুপে ও বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে এ দুই হাজার একর পাহাড়ি এলাকাকে গড়ে তুলছে অপরাধের স্বর্গরাজ্য।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে এ বিশাল পাহাড়ি এলাকায় প্রতিনিয়ত অস্ত্রের মহাড়া চালিয়ে সাধারণ মানুষদের আতঙ্কিত করে আসছে তারা। সিঙ্গাপুর নাছির গ্রুপ, মশিউর রহমান গ্রুপ, রোকন উদ্দিন গ্রুপ, কসাই নাছির গ্রুপ, পাহাড়ি লোকমান গ্রুপ, জানে আলম গ্রুপ, দেলোয়ারা গ্রুপ বর্তমানে প্রকাশ্যে বিভিন্ন অপরাধের পাশাপাশি প্লট বিকিকিনিতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর নাছির গ্রুপে শাহাদাত হোসেন, মনজু, সোহেল, হাতিম, কালু ডাকাত, সোলেমান ডাকাত, হানিফ ডাকাত, ইসমাইল ও আইয়ুব সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া মশিউর রহমান গ্রুপের টিন চোর কামাল, গাজী সাদেক, মকবুল শেখ, সাইফুল সোহেল, জসিম, রাজীব বডুয়া, আমিনুল প্রকাশ সিলেটি, আলাউদ্দিন, ইসমাইল ড্রাইভার, মনির হোসেন, ছোরা হারুন, বাঁশখালী কালাম, কামাল পাশা, হানিফ, ডা: শাহীন লিটন, কসাই মকবুল, ড্রাইভার ইসমাইল, শাহ আলম, গোলাম গফুর, মীর আরমান (মেম্বার), সেলিম হাজারী, অনিল কুমার ধর, মাস্টার স্বপন, ডাকাত সাদেকুর রহমান, আবুল কাশেম, নুর ইসলাম, বাদশা মিয়া, মো: জসিম, আল আমিন, চন্দ্র নগরের মিজান, গিট্টু জাহাঙ্গীর, ডাকাত সাদেক প্রতিনিয়ত অশান্ত করে তুলছে এ অঞ্চলকে। এদের মধ্যে অবশ্য কয়েকজন জেলে রয়েছে। এ দিকে রোকন উদ্দিন গ্রুপে ফোরকান উদ্দিন, সাইদুল হক সাজু, জিয়া উদ্দিন প্রকাশ জেএমবি জিয়া, কালা বাচ্চু, ক্রেটি জাহাঙ্গীর, আশিক আরিফ, শাহীন, বশির উল্যাহ, পলাশ বাবু, মর্জিনা খসরু, নুরুল হক ভাণ্ডারি, দামা জাহাঙ্গীর, ঘড়ি চোর বাবুল, কোবরা শাহাজাহান, দেলোয়ার মাঝি, ওসমান, ডা: জামাল ওরফে মোল্লা জামাল, আইয়ুব রানা ওরফে ডাকাত রানা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অপকর্ম। অন্য দিকে কসাই নাছির গ্রুপে রেজাউল বাজহার, ইস্রাফিল, গিট্টু জাহাঙ্গীর, শেখ সিকদার, বোমা জাকির, নুর নবী, সাহাবুদ্দিন, সালেহা বেগম, গাল কাটা আলম, গনি সওদাগর, নুরুল হক ভাণ্ডারি, কোবরা শাহাজাহান এমনকি পাহাড়ি লোকমান গ্রুপের লোকমান ও অন্ধ জামাল জেলে থাকলেও সক্রিয়া রয়েছে সাইদুল, আলমগীর ও জিয়া। জানে আলম গ্রুপে রয়েছে আনোয়ারুল করিম ওরফে আনোয়ার মালি, জাহাঙ্গীর ও সাইফুল। আর দেলোয়ারা গ্রুপে নুর মোহাম্মদ চৌধুরী, সালেহা বেগম, দেলোয়ারা, মিজানুর রহমান ওরফে রিকশা মিজান, জামাল শেখ, আনোয়ার মাঝি, সিতরাজি বেগম, আবছার মাঝি, হাজেরা বেগম, আবদুল গফুর মানিক, সাদী বেগম ও নাছিমা বেগম। প্রতিনিয়ত সাধারণ লোকজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এক জায়গা তারা কয়েকজনের কাছে বিক্রি করছে। এ ছাড়া এ স্থানে সক্রিয় রয়েছে শাহ আলম ওরফে ড্রাইভার শাহ আলম, এম এ ছালাম ওরফে কবিরাজ ছালাম, শারমিন সুলতানা মিনু, মনিকা রানী ধর, অনিকা ধর, সাহাবুদ্দিন ওরফে লাদেন শাহাবুদ্দিন, লাল কাশেম, শেখ সিকদার, আবদুর রশিদ ও নুরুল হক চৌধুরী।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, নগরের বায়েজিদ থানা ও সীতাকুণ্ড উপজেলার মধ্যবর্তী গহিন পাহাড়ি অঞ্চলের নাম জঙ্গল ছলিমপুর। যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত কম। তাই দৃষ্টির আড়ালে থাকায় বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বড় বড় অপরাধ সংঘটিত করে এখানে আশ্রয় নেয়। যখন যে সরকার মতায় থাকে সেই দলের ছত্রছায়ায় এখানে চলে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, জবরদখলসহ সব রকম অপরাধ। এখানে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে তারা মরিয়া হয়ে উঠে। ফলে প্রত্যেকেই মজুদ করে অত্যাধুনিক ভয়াবহ সব আগ্নেয়াস্ত্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, আক্কাস মারা যাওয়ার পর এখানে সন্ত্রাসী তাণ্ডব অতীতের চেয়ে আরো বেড়ে গেছে। বর্তমানে রোকন উদ্দিন, গাজী সাদেকুর রহমান, নাছির আর লাল বাদশার অধীনে কমপে কয়েক ডজন সন্ত্রাসী এ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। একই সাথে সিঙ্গাপুর নাছির, মশিউর রহমান, রোকন উদ্দিন, কসাই নাছির, পাহাড়ি লোকমান, জানে আলম, দেলোয়ার এরা সবাই একেকটি গ্রুপ করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এরা এবং এদের গ্রুপের লোকজন খাস ভূমি দখল করে পাহাড়ের প্রাচীন বৃগুলো নিধন করে, পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে ভূমি বিক্রি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *