সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণ উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা

সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণ উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সীতাকুণ্ড টাইমস :
গত শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকু-ে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছয়জন নিহতের ঘটনায় কারখানার অভ্যন্তরে উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রবিবার বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে এসে এ সমাপ্তির কথা ঘোষণা করেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাকিব হাসান।

জানা যায়,শনিবার দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হলে রাতে বিরতি দিয়ে রবিবার ভোর ৬টা থেকে আবার উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। পরে সকাল ৯ টা থেকে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের আরো একটি দল তাদের সাথে যুক্ত হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত পুরো কারখানা সার্চ করে। তবে এতে কোন আহত বা নিহতের সন্ধান পায়নি ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।

বিভিন্ন সূত্রে আরও জানান, অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের ২য় দিনে কোন লাশ উদ্ধার হয়নি। তবে শনিবার বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন- সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারীর জাহানাবাদ কদমরসুল এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে শামছুল আলম (৫৬), বিএমএ গেট বানু বাজার এলাকার আবুল বাসার মিয়ার ছেলে ফরিদ (৩৬), নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার ছোট মনগড়া এলাকার চিকি রোঙ্গী লখরেটের ছেলে রতন লখরেট (৪৫), নোয়াখালীর মাইজদী থানার অলিপুর এলাকার মৃত মকবুল আহমেদের ছেলে মো. আবদুল কাদের (৫৮), লক্ষীপুরের কমল নগর থানার চরলরেব্জ এলাকার মহিদুল হকের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (৩৩) ও একজনের নাম পরিচয় জানা যায় নি।এছাড়া আহত ২৪ জনের মধ্যে পরিচয় মিলেছে ১৯ জনের। তারা হলেন— মো. ফোরকান (৩৩), মো. নুর হোসেন (৩০), আ. মোতালেব (৫২), মো. আরাফাত (২২), মাকসুদুল আলম (৬০), মো. ওসমান (৪৫), মো. সোলায়মান (৪০), মো. রিপন (৪০), মো. আজাদ (২২), রিপন (৬০), নারায়ন ধর (৬৪), মো. জসিম (৫০), ফেন্সী (২৬), মো. জাহেদ (৩০), মুবিবুল হক (৪৫), রোজি বেগম (২০), মাহিন শাহরিয়ার (২৬) এবং নওশাদ সেলিম (৭০)।

এদিকে বিস্ফোরণে আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে সাড়ে ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে এবং নিহতের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নিহতের পরিবারকে আরও ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।

এদিকে আহতদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২০ জনের মধ্যে একজনকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনজন অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে। তাদের অপারেশন চলছে। এরমধ্যে একজনের অবস্থা খারাপ তারও আইসিইউ লাগতে পারে। আরও তিনজন চোখে আঘাত পেয়েছে। এরমধ্যে একজনের বেশি খারাপ অবস্থা। বাকিরাও ছোটো খাটো আঘাত পেয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।’

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রবিবার বিকালে সাড়ে টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাামের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, বিস্ফোরণে পুরো অক্সিজেন কারখানাটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে অক্সিজেন সিলিন্ডার।

ঘটনার পর থেকে মালিকপক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে না আসলেও গতকাল রবিরবার দুপুর ১২ টার সময় ঘটনাস্থলে আসেন অক্সিজেন প্লান্টের ম্যানেজার আবদুল আলিম। তিনি বলেন, কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সাধারণত অক্সিজেন প্ল্যান্টের মূল বয়লারে এভাবে বিস্ফোরণ হয় না। এটি বিস্ফোরিত হওয়াতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। এ প্ল্যানটি ২০১৮ সালে চায়না প্রযুক্তিতে স্থাপন করা হয়। গত সপ্তাহেও চায়না বিশেষজ্ঞদের একটি টিম নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যান। তারা আমাদেরকে প্লান্টের কোন সমস্যার কথা জানান নি।

এদিকে সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতা সকাল থেকে ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য কারখানা ফটকে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা।কারখানার আশেপাশে আরো ৭টি কারখানার অভ্যন্তরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এইচ আর গ্রুপের একটি তিন তলা বিল্ডিংয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। কারখানার পশ্চিমাংশের দেয়ালটি হেলে পড়েছে। কারখানার অভ্যন্তরে ব্যাপক ধ্বংশযজ্ঞের চিহ্ন বিদ্ধমান। অক্সিজেনের বোতল নিতে আসা ৫টি ট্রাকও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *