সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দশ লেইনে উন্নিতকরণের সরকারী উদ্যোগ: সীতাকুণ্ডবাসীর তিন বিকল্প প্রস্তাব

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দশ লেইনে উন্নিতকরণের সরকারী উদ্যোগ: সীতাকুণ্ডবাসীর তিন বিকল্প প্রস্তাব

সীতাকুণ্ড টাইমস ডেস্কঃ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে বিদ্যমান চার লেইন থেকে দশ লেইনে উন্নীত না করে শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দারা উপকূলীয় এলাকায় মেরিন ড্রাইভ, উড়াল সড়কসহ তিনটি বিকল্প প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিস্ট দপ্তরের বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ডের জনগণের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ফসিউল আলম, সদস্য সচিব মাষ্টার আবুল কাশেম, বিজয় স্মরণী কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক লায়ন মো. গিয়াস উদ্দিনসহ বিশিস্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মাষ্টার আবুল কাশেম বলেন, স্বাধীনতার আগে তৎকালীন সরকার মানুষের বাড়িঘর অধিগ্রহণ করে বর্তমান মহাসড়ক নির্মাণের জন্য। একইভাবে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, বড় বড় মিল কারখানা স্থাপনের কারণেও সীতাকুণ্ডের মানুষকে বাপ-দাদার ভিটা হারাতে হয়। সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নিত করার কাজ শেষ হয়। বিশেষত এই মহাসড়কের পাশে চলাচলের জন্য সার্ভিস লেইন নির্মাণ না করে বন্ধ করে দেওয়া হয় যুগ যুগ ধরে চলা রিক্সা, অটোরিকশাসহ এলাকার মানুষের যোগযোগের প্রধান বাহন ধীর গতির যানবাহন। এতে বিপাকে পড়েন এখানকার লাখ লাখ মানুষ। নতুন করে দশ লেইন করা হলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, হাট-বাজার, বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানসহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসকি ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা চিরতরে হারিয়ে যাবে। এছাড়াও জমি অধিগ্রহণের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে হাজার হাজার বিরল প্রজাতির বৃক্ষ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ৫ লাখ মানুষের বসতি সীতাকুণ্ড পূর্বে পাহাড়, পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল বেষ্টিত উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সীতাকুণ্ড উপজেলার আয়তন প্রায় ৪৮৪ বর্গ কিলোমিটার। ছলিমপুর ভাটিয়ারী ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কোন কোন এলাকার ব্যাস সন্দ্বীপ চ্যানেল থেকে পাহাড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটারেরও কম। সমুদ্র ভাঙনের ফলে সীতাকুণ্ড উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ হাজার হাজার একর কৃষি জমি ও বসতভিটা হারিয়েছে।

দশ লেইন করা হলে সীতাকুণ্ডে শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন থাকবে না তেমনি পূর্ব থেকে পশ্চিম ও পশ্চিম থেকে পূর্ব কোন যোগাযোগ থাকবে না। কেননা এই দশ লেইনে কোন আন্ডারপাস বা সার্ভিস লেইন থাকবেনা। এমনিতেই এখনও এপার-ওপার বিচ্ছিন্ন। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার যাতায়াতের পর্যাপ্ত কোন সুযোগ সুবিধা না থাকায় প্রতিনিয়ত এখানে ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। দশ লেইন হলে এ প্রাণহানি আরও বাড়বে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দশ লেইন না করার বিষয়ে বিকল্প তিন প্রস্তা্ব হচ্ছে-

১. বর্তমানে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এবং ইকোনোমিক জোন থেকে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর উপকূল পর্যন্ত মেরিনড্রাইভ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এখনও বাকি আছে ফৌজদারহাট থেকে সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এলাকা। এই মেরিনড্রাইভ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কমবে সড়ক দূর্ঘটনা, সেইসাথে জনদূর্ভোগ কমে নির্বিঘ্নে চলাচল করবে যানবাহন।

২. দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাব হচ্ছে বিদ্যমান চারলেইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের সিটি গেইট থেকে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত চার লেইনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। এটি করতে দশ লেইনের চেয়ে কম খরচ হবে বলে সড়ক নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ মানুষের জমি ও বড় বড় স্থাপনা অধিগ্রহণের পেছনে ব্যয় হবেনা। সেই অর্থ বাঁচবে। তাছাড়া সার্ভিস লেইন বা আন্ডারপাস ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আট-দশ লেইনের মহাসড়ক করার কোন নজির বিশ্বে নেই। বরং জনসাধারণকে বাঁচাতে আছে ভিন্ন নজির। সংবাদ সম্মেলনে থাইল্যাণ্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে পাতায়া যেতে প্রায় ১৪৭ কিলোমিটার ব্যাপী ১২ লেইনের এক্সপ্রেসওয়ে আছে উল্লেখ করে বলা হয় এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ৯৪ কিলোমিটারই উড়াল সড়ক। এর্ দুই পাশে চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত সড়ক ও উড়ালপথ।

৩. তৃতীয় প্রস্তাব হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে রেললাইনের পূর্বে ফৌজদারহাট থেকে চিনকী আস্তানা পর্যন্ত পাহাড়ের পাশ দিয়ে মহাসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। এসব বিকল্প প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দুষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ফসিউল আলম ও নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মাষ্টার আবুল কাশেম।

সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ড সমিতি-চট্টগ্রাম এর সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন মানিক, এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার আবুল হাসনাত, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফোরকান আবু, এড. জহিরউদ্দিন মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শিল্পী, ননী গোপাল দেবনাথ, আবুল খায়ের মো. ওয়াহিদী, সাংবাদিক কামরুল ইসলাম দুলু, ফারুক মোনাদিন চৌধুরী, তুষার কান্তি চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মো. আলমগীর, শিমুল চৌধুরী সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।#

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *