সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / সীতাকুণ্ডে নারীরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কতটুকু নিরাপদ

সীতাকুণ্ডে নারীরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কতটুকু নিরাপদ

আরিশা কানিজ,সীতাকুণ্ড টাইমসঃ

দেশে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সীতাকুণ্ডের নারীরাও কিন্তু পিছিয়ে নয়। তারাও অনলাইনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে লেখাপড়া থেকে শুরু করে ব্যবসাও করছে।
তবে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তরুণ তরুণীরা, তারা না বুঝে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করছে। ফলে বেশিরভাগ তরুণী সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে।

সাইবার সিকিউরিটির (cyber security) মানে হলো, ইন্টারনেট এর মধ্যে আপনার ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক টিকে সুরক্ষা প্রদান করার একটি প্রক্রিয়া।
বর্তমানে পড়াশোনা থেকে শুরু করে, কাজ এবং বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেট।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেইসবুক, টুইটার, ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি।

আমার পরিচিত এক নারী উদ্যোগক্তা, যিনি অনলাইনে ব্যবসা করতে গিয়ে শিকার হয়েছেন সাইবার ক্রাইমে। তার ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধভাবে ব্যবহার করে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। এমনকি তাকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এর ফলে বুঝা যায় যখন আমরা ইন্টারনেটের ব্যবহার করে থাকি বা যেকোনো নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত হয়ে থাকি তখন বিভিন্ন রকমের বিপদ হওয়ার ভয় অবশই থেকে যায়।

কারণ, সাইবার অপরাধ এর সাথে সংযুক্ত থাকা ব্যক্তিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের সিস্টেম এর মধ্যে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে আমাদের ব্যক্তিগত ডাটা গুলোর অবৈধ বা ভুল ব্যবহার করতে পারে।

এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নারীরা। শুধুমাত্র কমিউনিটির নারীরা নয়, সারা দেশে অসংখ্য নারী প্রতিনিয়ত সাইবারক্রাইম অথবা সাইবার বুলিং-এর শিকার হচ্ছেন।
কারণ তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতন নয়। যেসব পন্থায় নারীদের সাইবার স্পেসে হয়রানি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো–
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন ও কথোপকথনের মাধ্যমে ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীর ব্যক্তিগত ছবি/ভিডিও বা পরিচিতি তথ্য প্রকাশ করে হয়রানি করা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে বা আপত্তিকর ভাষায় নারীকে মেসেজ পাঠিয়ে হয়রানি করা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইডি হ্যাক করে তাতে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ব্ল্যাকমেইল করা।
মোবাইল ফোনে কল করে হয়রানি।

এরমধ্যে মোট ১৬ শতাংশ ভুক্তভোগী ১৮ বছরের কম বয়সী। ৫৮ শতাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর। ২৪ বছর থেকে ৩০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী ২০ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ৩০ বছরের বেশি। জরিপে আরো দেখা গিয়েছে ১৮-২৪ বছর বয়সের নারীরই সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়।
২০২৩ সালের একটি হিসেবে দেখা যায় দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ৬ কোটি ৬৯ লাখের বেশি। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়মিত ব্যবহার করছেন ৪ কোটি ৪৭ লাখের বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারির মধ্যে ২১.২৫% নারী। এর ফলে সাইবার ক্রাইমে ৭০% ভুক্তভোগী নারীরা। ৮০ ভাগ নারী যৌন হয়রানি মূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন।
এ থেকে বুঝা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হলে সমাজ, অর্থনীতি, ডিজিটাল অগ্রযাত্রাসহ দেশের উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা দরকার।

বর্তামান সরকার অনলাইনে নারীর প্রতি সাইবার অপরাধ দমনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যেমনঃ- পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন, হ্যালো সিটি আপা, রিপোর্ট টু র‍্যাব আ্যপ,, খুব সহজেই এই মাধ্যম গুলোতে অভিযোগ জানানো যায়।

সাইবার অপরাধে প্রতিরোধে সবার আগে প্রয়োজন ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা ও সতর্কতা। দিনে দিনে পাল্লা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও আমাদের অনেক ব্যবহারকারীর নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা নেই। এ কারণে নিজের অজান্তেই অনেকেই অপরাধের শিকারে পরিণত হচ্ছেন। ইন্টারনেটে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে তথ্য বা ব্যক্তিগত কন্টেন্ট শেয়ার করার বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ঠিক তেমনিভাবে সমাজ তথা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। ইন্টারনেট ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাইবার অপরাধ দমনে বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলা সাইবার অপরাধ দমনে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন।
@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
লেখকঃ
আরিশা কানিজ
ফেলো, রেডিও সাগর গিরি,
সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *