মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সীতাকুণ্ড টাইমস::
সীতাকুণ্ডে হাট বাজার গুলো ভরে গেছে লাল টমেটোতে। প্রতিটি দোকালেন টমেটোর স্তুপ পরে আছে। সব ঘরে এখন টমেটোতে ভরা। প্রচণ্ড গরমে যখন অতিষ্ঠ মানুষ তখন সীতাকুণ্ডের সকল ঘরে ভাতের সাথে কমন হয়ে দাড়িছে টমেটো তরকারী। কেউ বর্তা কেউ চাটনী আবার কেউ তরকারী করে রান্না করছে টমেটো। রমজানে যেটা ৩০/৪০টাকা দামের ছিল এখন অনেকটা ফ্রি। বাজার থেকে কিনলে ৫/৬টাকা কেজি আর খেত থেকে তুলে আনলে ফ্রি। কুমিরার আলা উদ্দিন সেলিম জানান প্রচন্ড গরমে আমরা টমেটো দারুন উপকার দিচ্ছে। ভাতের সাথে কমন তরকারী হয়ে দাড়িয়েছে টমেটো। ধনী গরিব সবাই টমেটো নিয়ে ঘর ভর্তি করছে। ছোট কুমিরার সবজী ব্যবসায়ী জাবেদ জানায় সে সরাসরি খেত থেকে ৫/৬টাকা কেজি টমেটো ক্রয় করে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাচ্ছে প্রতি নিয়ত । সে আরও জানায় সে নিজেও টমেটোর চাষ করেছে।
সীতাকুণ্ড সরেজমিনে টমেটো খেত পরিদর্শন করে দেখা গেছে গাছ গুলো মরামরা হলেও টমেটোতে লালে লাল হয়ে আছে পুরো ক্ষেত। কিন্তু ক্ষেত থেকে কৃষকরা টমেটো তোলছেনা।
সঠিক দাম না পাওয়ায় সীতাকুণ্ডের অনেক কৃষক খেতেই ফেলে রেখেছেন টমেটো। লাভের আশায় তাঁরা টমেটোর চাষ করেছিলেন। কিন্তু বাজারে সঠিক দাম না পাওয়ায় খেতেই পড়ে আছে, পচছে টমেটো। অনেকে খেত থেকে কুড়িয়েও নিচ্ছেন। অনেক খেতের টমেটো খাচ্ছে গরু-ছাগল।
সীতাকুণ্ডে টমেটোর বাজারে ধস নেমেছে। বিক্রি করতে না পারায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে শ’ শ’ মন টমেটো। বাজারে ন্যাযমূল্য না পাওয়ায় বিক্রি করতে না পেরে নদীতে ও রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন বহু কষ্টে উৎপাদিত এসব টমেটো। সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর গুলিয়াখালী, বাড়বকুণ্ড শুকলাল হাট, ছোট দারোগারহাট, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জমির গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা টমেটো। বাজারে দাম না থাকায় উত্তোলনের আগ্রহ নেই কৃষকদের। প্রতিটি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে শ’ শ’ কেজি টমেটো।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, যারাই টমেটো উত্তোলন করে বাজারজাত করেছেন তাদের ৫০ থেকে ৬০ মণ ও চার থেকে পাঁচ টাকারও কম কেজি ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে মিলছে না উত্তোলন খরচও। সীতাকুণ্ডের কৃষক আরব আলী জানান, পড়াশোনা শেষে উদ্যোক্তা হওয়ার আশায় গ্রামে এসে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে চার বিঘা জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন তিনি। ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু বাজারে আশানুরূপ দাম না থাকায় জমিতে তার সব টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, টমেটোর ভালো ফলন দেখে আশা করছিলাম খরচ বাদে এবার দেড় থেকে দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করব। কিন্তু ২০ থেকে ৩০টাকা কেজির টমেটো এখনো ৫ টাকায় ও কিনছেন না ক্রেতারা। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাও উঠবে না।
কুমিরা এলাকার হারুন, বেলাল, আনু মেম্বার সহ কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদকৃত টমেটো বেশি দিন মজুদ রাখতে এ এলাকায় সরকারি কোল্ডস্টোর স্থাপনসহ সরকারি ঋণ ও সার বীজ সুবিধা দেয়া না হলে আগামীতে আর তারা টমেটো চাষ করবেন না।
উপজেলার অন্যতম প্রধান সবজি উৎপাদক অঞ্চল মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে টমেটোর চাষ হয়েছে। কৃষকরা জমি থেকে উৎপাদিত টমেটো তুলে তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখছেন। গ্রামের পথে, পুকুরপারে, জমির পাশে অসংখ্য টমেটোর স্তুপ ও ঝুড়িতে সাজানো টমেটো দেখা গেছে। কৃষকদের গলায় ছিল চরম হতাশার সুর। কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করেছি মাত্র ছয় টাকা করে। এখনতো কেউ কিনছেও না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, এ বছর সীতাকুণ্ডে ৫৯০ হেক্টর জমিতে চার হাজার ৫০০জন কৃষক টমেটো চাষ করেছেন। এখান থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। এখন প্রচুর টমেটো উঠছে। ফলে দাম একেবারেই কমে গেছে। কিন্তু কৃষকরা দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন।