সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / করোনা : চাই কোরবানি ব্যবস্থাপনায় সংবেদনশীল জীবন

করোনা : চাই কোরবানি ব্যবস্থাপনায় সংবেদনশীল জীবন

রাইসুল উদ্দিন সৈকত,সীতাকুণ্ড টাইমসঃ

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এখন বড় চ্যালেঞ্জ কোরবানির পশুর হাট। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় কোরবানির পশুর হাট বসানোর জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। দেখা যাবে, মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানানো অসম্ভব। এমনিতে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তার মধ্যে যদি পশুর হাট বসে তাহলে করোনার সংক্রমণ দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে সে কেবল ভবিষ্যৎই বলতে পারবে। এ পরিস্থিতিতে সব ক্ষেত্রে লাগাম টেনে ধরা দরকার।
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, গত রোজার ঈদেও দোকানপাট খোলার সময়ও কিন্তু সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধির মানার কথা বলা হয়েছিলো। ব্যক্তিগত পরিবহণের নামে মানুষকে শহর ছাড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এর কারণে ঈদের পরে করোনার প্রাদুর্ভাবও বাড়তে শুরু করে। এবার খোলা মাঠে গরুর হাট বসানো হলে আরো বড় সর্বনাশ হতে পারে। অবশ্য করোনার হটস্পট বলে বিবেচিত এলাকাগুলোতে পশুর হাট স্থাপন না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ প্রতিরোধে আসন্ন ঈদুল আজহার নামাজও ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজ আদায় করার ঘোষণা দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়। আমরা দেখছি, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সংক্রমণের মাত্রা একই রকম আছে। বাড়ছেও না, আবার কমছেও না। এ অবস্থা বজায় থাকলে আগামী একমাসের মধ্যে সংক্রমণের হার নিচের দিকে নেমে আসতে পারে। কিন্তু সে সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে যদি ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে কোরবানির পশুর হাট বসে। তবে পশুর হাট বসলেও সেখানে কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলতে সবাইকে বাধ্য করা উচিত। খোলা ময়দানে দূরে-দূরে করে বেপারিদের বসতে হবে। একটা গেট থাকতে হবে ঢোকার জন্য, আরেকটি গেট থাকতে হবে শুধু বের হবার জন্য। ফেসমাস্ক বাধ্যতামূলক। এমন সিস্টেম করতে হবে যাতে কেউ ফেসমাস্ক ছাড়া ঢুকতে না পারে। যাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি তারা যাতে পশুর হাটে না যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা জানি, গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে কোরাবানির পশুর হাটের একটা যোগ আছে। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পও অনেকটা নির্ভরশীল কোরাবানির ওপরে। তাই দুই দিক রক্ষা করতে এবার কোরাবনির পশুর হাটের জন্য অনলাইন হাট এবং ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। অবশ্য এরই মধ্যে আমরা খবরে জানতে পেরেছি, গবাদি পশু ক্রয়-বিক্রয়ের একটি বড় অংশ এ বছর অনলাইনে সম্পন্ন হতে পারে। ইতোমধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘ফুড ফর নেশন’ কোরবানির পশু বিক্রেতাদের নিবন্ধন শুরু করেছে। আমি মনে করি, অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রি করলে খামারি বা কৃষকরাও উপকৃত হবেন, কারণ এর মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের খরচ হ্রাস পাবে। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বিভিন্ন ঝামেলা এড়িয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই সময় সাশ্রয় হবে। কোরবানির হাটকে ঘিরে চলে বড় ধরনের বাণিজ্য। এরসাথে বিপুল মধ্যস্বত্বভোগী জড়িত। হাটের ইজারা, হাসিল, গরুর ট্রাক বা ট্রলার থেকে চাঁদা আদায়ে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকেন। হাট না বসলে বা কম বসলে তাদের আয়ে টান পড়বে। তাই হাট বসানোতে আগ্রহ অনেকের।
তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানি হয়। গত বছর এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। তবে এবার কম হতে পারে। গরুর ব্যাপারীদের পাশাপাশি চামড়ার ব্যবসায়ীরাও সংশয়ে আছেন। কারণ দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় গত বছর কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে নজিরবিহীন সংকট তৈরি হয়। চামড়া রাস্তায় ফেলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। অনেক চামড়া রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৩০০-৪০০ টাকায় কিনেও সেই চামড়া ৫০ টাকা বিক্রি করতে পারেননি। এবার করোনার কারণে চামড়া নিয়ে সেই সংকট আরও বাড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এতো কিছু বলার মূল কারণ হচ্ছে, করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তির উপায় বের করা। একটু চিন্তা করে দেখুন, মহামারি করোনাভাইরাস এবার অনেক কিছুরই স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি বদলে দিয়েছে। চাইলেই ইচ্ছেমতো কোনো কিছুই করা যাচ্ছে না। করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হচ্ছে, সরকারের তরফ থেকেও এ ব্যাপারে রয়েছে কঠোরতা। সরকার বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হিমশিম খাচ্ছে। নিজে এবং পরিবারকে নিরাপদ রাখতে ঘরে আবদ্ধ থাকা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা করোনা প্রতিরোধের একটি অন্যতম পদ্ধতি। কিন্তু জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এটি মানছে না।
বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সংবেদনশীল হয়ে পরিচালনা করতে ঈদুল আজহায় হোক আমাদের নিরাপদ জীবন। এটাই হোক দেশের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধের প্রতিশ্রুতি।

লেখক : চেয়ারম্যান, এলবিয়ন গ্রুপ।
সূত্র ঃ আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *