সংবাদ শিরোনাম
Home / উপজেলা সংবাদ / নৌপথে সন্দ্বীপবাসীর যত দুর্ভোগ!

নৌপথে সন্দ্বীপবাসীর যত দুর্ভোগ!

DSC_0080নিজস্ব প্রতিবেদক,২৪জুলাই(সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম)- উত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপবাসীর যাতায়াতের সমস্যা কিছুতেই কমছে না। সন্দ্বীপবাসীর আশা ছিল ঈদ উপলক্ষে অন্তত সমুদ্র পারাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ, কমানো হবে বৈধ নৌ-পথের ভাড়া। কিন্তু সে আশার আলো দেখতে না পেয়ে ঈদে সন্দীপবাসীর জন্য নৌ-যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সেই দাবিগুলোই আবার তারা নতুন করে তুলে ধরেছেন। নৌ-পথে দুর্ভোগের জন্য সন্দ্বীপবাসী ফেরিঘাট কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অব্যবস্থাপনা এবং উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন।

সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপবাসীর অতীত আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কুমিরা-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিসি’র স্টিমার সার্ভিস চালু হয়েছে। কিন্তু এরপরও অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া জেলা পরিষদের ইজারাদার নানা অপকৌশলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রীদের নৌরুটে চলাচলকে নিরুৎসাহিত করছে।

স্টিমারের মালিকানা বিআইডব্লিউটিসি’র হলেও তা পরিচালিত হচ্ছে জেলা পরিষদের মাধ্যমে। অভিযোগ আছে, অধিক মুনাফার লোভে জেলা পরিষদের ইজারাদার স্টিমারের পরিবর্তে অবৈধ মালবাহী বোট ও ঝুঁকিপূর্ণ স্পিড বোটে যাত্রী পারাপার করছে। যার ফলে প্রায় সময় যাত্রীদের সমুদ্রে পড়ে যাওয়া, যাত্রী নিয়ে মাঝপথে নৌযান অচল হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটছে। জুন-জুলাই মাসে সমুদ্র উত্তাল থাকে। তাই এ সময়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থাকে বেশি। গত নয় বছরে চট্টগ্রাম- সন্দ্বীপের সাতটি নৌপথে দুর্ঘটনায় ১৭০ জনের লোকের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানা গেছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, স্পিডবোটের ভাড়া ২০০ টাকা হলেও নেয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা। তাই অবৈধ নৌযানে যাত্রী পারাপারের পাশাপাশি যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে । কিন্তু নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্টিমার সার্ভিসের ১৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত হয়। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ার সাথে ইজারাদাররা দুই তীরে নিরাপদে উঠানামার নামে যাত্রী প্রতি ১০ টাকা করে অতিরিক্ত ২০ টাকা নেন। কিন্তু ঘাটের ইজারাদার উঠানামার জন্য পর্যাপ্ত ছোট নৌকা রাখেন না। যার ফলে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে অন্য নৌকা করে জাহাজ থেকে তীরে নেমে আসতে হয়।

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সন্দ্বীপে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে স্পিডবোটে যাত্রী প্রতি ভাড়া ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেই বৈঠকে নৌ পরিবহনমন্ত্রী অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বখশিশের নামে হয়রানিও করা হচ্ছে যাত্রীদেরকে। ঘাটের কর্মচারীরা বিশেষ করে জাহাজে উঠানামায় ব্যবহৃত ছোট নৌকার এসব কর্মচারী জোরপূর্বক এই বখশিশ আদায় করে থাকে। বখশিশ প্রদান না করলে যাত্রীদেরকে চরম হেনস্তা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও মালের ভাড়ার নামে রীতিমত নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন নৌযানে যাত্রীর সাথে থাকা ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মালামালের জন্য ভাড়া দিতে হয়না। কিন্তু কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটে পনের কেজি’র অতিরিক্ত মালামালের জন্য কেজি প্রতি তিন টাকা হারে মাশুল আদায় করা হয়।

তারপরও যাত্রীরা সময় সাশ্রয় এবং দ্রুত পারাপারের জন্য অনেক সময় স্পিড বোটে যাতায়াত করে থাকেন। সন্ধীপবাসীর অভিযোগ, কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট থেকে জেলা পরিষদ বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপদ উঠানামার জন্য কোনো উদ্যোগই তারা নেয়নি। দীর্ঘদিন জেলা পরিষদ দুই তীরে কোন যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করেনি। যার ফলে রোদ কিংবা বৃষ্টিতে যাত্রীদেরকে খোলা আকাশের নীচেই অপেক্ষা করতে হয়। বড় নৌযান থেকে নেমে কখনো কোমর, কখনো বুক সমান পানি ডিঙিয়ে জীবন বাজি রেখে সন্দ্বীপের যাত্রীদেরকে কূলে উঠতে হয়।

আমরা সন্দ্বীপবাসীর সমন্বয়ককারী ও বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সমন্বয়কারী ডা. মোহাম্মদ রফিকুল মাওলা জানান, এ অবস্থা আর বেশিদিন চলতে দেয়া যায়না।
Costal_Communication_4_jpg
সংবাদ সম্মেলনে আজ তিনি কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটে অনঅনুমোদিত ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান ও মালবাহী বোটে যাত্রী পারাপার বন্ধের দাবি জানান। এছাড়াও অন্যান্য দাবির মধ্যে প্রতিদিন দুই পাড় থেকে দৈনিক দুইবার করে মোট চারবার স্টিমার চলাচল, স্পিডবোটের যাত্রী প্রতি ভাড়া নৌ পরিবহনমন্ত্রী নির্দেশিত ২০০ টাকা করা, যাত্রীদের নিরাপদ উঠানামার ব্যবস্থা, দুই তীরে প্রয়োজনীয় টয়লেটসহ যাত্রী ছাউনীর ব্যবস্থা, যাত্রীদের সাথে থাকা ৩০ কেজি পর্যন্ত মালামালের ভাড়া আদায় না করা এবং বখশিশের নামে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান সন্দ্বীপবাসীর পক্ষে।

এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এমএ সালাম জানান, সময় সাশ্রয় করার জন্য সন্দ্বীপবাসীরা স্টিমারের বদলে স্পিটবোডকে প্রাধান্য দেয়। আর শিকার হয় নানা দুর্ভোগের। আমাদের যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে যাত্রীদের যাতে কোনভাবেই এই ঈদে হয়রানি না হয়।

তিনি আরও বলেন ঘাটে জেলা পরিষদের একটি টিম দিনরাত কাজ করছে। তাই যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের অভিযোগের আমি কোনো ভিত্তি দেখছিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *