সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রফিক উদ্দিনের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রফিক উদ্দিনের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

এডভোকেট নাছির উদ্দিন, সীতাকুণ্ড টাইমস ঃ
পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রফিক উদ্দিন ১৯৪৭ সালে সীতাকুণ্ড পৌরসভাস্থ ২ নং ওয়ার্ডের এয়াকুবনগর গ্রামের ফকিরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৫ সালের ১২ই মার্চ এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুকালে রফিক উদ্দিন স্ত্রী জোহরা বেগম ছাড়াও ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে রেখে যান। শিক্ষানুরাগী রফিক উদ্দিনের একান্ত উদ্যোগ ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রফিক উদ্দিন যে বিষয়টি অনুধাবন করেন তা হলো সীতাকুণ্ড সরকারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, সীতাকুণ্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জাফরনগর উচ্চ বিদ্যালয়, এবং টেরিয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ভৌগোলিক ভাবে পন্থিছিলা থেকে অনেকটা দুর-দুরান্তে অবস্থান করায় এলাকার দরিদ্র পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন ছিল। পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, খেলার মাঠের জন্য প্রতিষ্ঠাতা রফিক উদ্দিন নিজস্ব ১ একর জমি দান করা ছাড়াও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আরো বহু জায়গা স্কুলের নামে ক্রয় করেন। বর্তমানে একাডেমিক ভবন ও খেলার মাঠ এবং অন্যান্য মৌজায় রয়েছে বিদ্যালয়ের ২.৩৩ একর জায়গা। রফিক উদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৮৯ সালে অষ্টম শ্রেনির একাডেমিক স্বীকৃতি এবং ১৯৯০ সালে নবম শ্রেনীতে পাঠ দানের অনুমতি লাভ করে। একাডেমিক স্বীকৃতি ও অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক হারুন ভূঁইয়া এবং সভাপতি অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯২ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লার অধীনে পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয় সর্ব প্রথম এস,এস,সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। রফিক উদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি বর্তমানে পরিবার ও এলাকাবাসীর একান্ত সহযোগিতায় প্রায় ৬০০ জন ছাত্র-ছাত্রীসহ সীতাকুণ্ডের মনোরম পরিবেশে ধন্য কতেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষানুরাগী রফিক উদ্দিন পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং মেয়ে ফারজানা আক্তার বাবার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির খন্ডকালীন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। শিক্ষানুরাগী রফিক উদ্দিন পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়াও পন্থিছিলা দাখিল মাদ্রাসা, পন্থিছিলা জামে মসজিদ, পন্থিছিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চেতনা ক্লাবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রফিক উদ্দিনের বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ও ছোট ছেলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির বিজ্ঞ সদস্য এডভোকেট তৌফিক উদ্দিন পন্থিছিলা দাখিল বিজ্ঞান মাদ্রাসায় লেখা-পড়া করার ঘটনাই প্রমাণ করে শিক্ষানুরাগী রফিক উদ্দিনের ২ প্রতিষ্ঠানের সাথে ভারসাম্যের দৃষ্টান্ত। পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক ভূঁইয়া জবাবদিহিকে জানান বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রফিক উদ্দিনের মতো মহান ব্যক্তি বর্তমান সমাজে বিরল। অত্যন্ত সাদা মনের বিচক্ষন ও তাৎক্ষনিক সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম রফিক উদ্দিন পন্থিছিলা এলাকায় শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে সমাজকে করেছেন ধন্য। এই কৃর্তিমান ব্যক্তিত্ব মরেও অমর। প্রতি বছর ১২ই মার্চ পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে রফিক উদ্দিনের মৃত্যু বার্ষিকী আনুষ্ঠানিক ভাবে পালিত হয়। শোক সভায় বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র ছাত্রী, গন্য-মান্য ব্যক্তিবগর্, শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মচারীবৃন্দ এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকেন। শোক সভা ছাড়াও মিলাদ মাহফিল, কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাতের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পন্থিছিলা মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শহীদ উল্লাহ জানান রফিক উদ্দিনের অবদান পন্থিছিলা মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলে আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। মাদ্রাসা সংলগ্ন দক্ষিন পাশেই tরফিক উদ্দিনের বসতবাড়ী থাকায় নিয়মিত মাদ্রাসায় যাতায়াত এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে সহযোগিতা ছিল অতুলনীয়। রফিক উদ্দিনের ছোট ছেলে আমার মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সুবাধে এবং মাদ্রাসার নিকটম প্রতিবেশি হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির অন্য যে কোন সদস্যের চেয়ে তাহার সহযোগিতা ছিল ভিন্ন। আমার সাথে মরহুম রফিক উদ্দিনের অত্যন্ত সু-সম্পর্ক ছিল। রফিক উদ্দিনসহ মাদ্রাসার সাথে সংশিষ্ট মৃত্যূবরনকারী সকলের জন্য নামাজ শেষে নিয়মিত দোয়া করা হয়। বিশিষ্ট সমাজ সেবক সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ি ও দোকান মালিক সমিতির তিন বারের নির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম মোঃ ওয়াহিদী জানান ,মরহুম রফিক উদ্দিন ছিলেন আমার নিকটতম আত্বীয় ও বাল্য বন্ধু ,স্কুল প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে আমি নিজেও তাঁকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছি। তাছাড়া আমার বড় ভাই ডাঃ এ,কে,এম,ওয়াহিদী, শফকত পাশা চৌধুরী, ,শামছুল আলম শাহ ,আমিন উল্লাহ কন্ট্রাকটার ও কবির আহাম্মদ মাষ্টার সহ এলাকার আরো অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। উল্লেখিত সহযোগীদের কেউ বেঁচে না থাকলেও কর্মের মাঝে তারা আজও অমর।আমি তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। পরিবারের ছোট ছেলে এডভোকেট তৌফিক উদ্দিন জানান, ৫ বছর ধরে বাবা আমাদের মাঝে নেই। পরিবারে আমার বাবার শূন্যতা কোন দিন পূরণ হবার নয়। বাবার শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমে আমরা গর্বিত। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমতা দাও, আমি যেন পেশাগত কার্যক্রমের পাশাপাশি আমার বাবার স্বপ্নের অবশিষ্ট কার্যক্রম সমাধা করে মানুষের মাঝে অমর হয়ে বেঁচে থাকতে পারি। আমি এলাকাবাসীসহ পাঠক সমাজের কাছে আমার বাবার জন্য দোয়া কামনা করছি। পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয় ও পন্থিছিলা দাখিল বিজ্ঞান মাদ্রাসার সভাপতি সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৫ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন জানান, মরহুম রফিক উদ্দিনের অবদান এলাকাবাসী চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। শিক্ষা ও সমাজ সেবায় রফিক উদ্দিনের গৃহীত কার্যাবলীতে আমি অনুপ্রাণিত হই। রফিক উদ্দিনের সাথে আমার বয়সের ব্যবধান ১৫ বছর হলেও ওনার মনোভাব ছিলো এমন মনের দিক থেকে যে বার্ধক্য নয়, তার জীবনে বার্ধক্য আসেনা। রফিক সাহেবের অনুপ্রেরনায় আমিও গুরুত্বপূর্ণ ২টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে সম্পৃক্ততা ছাড়াও ২০১৭ সালে পন্থিছিলা এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করি। সম্পূর্ণ আবাসিক প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ছাত্র সংখ্যা ৫০ জন, তন্মধ্যে ১৩ জন এয়াতিম ছাত্র রয়েছে। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পন্থিছিলা নুরানী কিন্ডার গার্ডেন নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান চালু করি। যার বর্তমান ছাত্র সংখ্যা ২৫০ জন। এছাড়াও পন্থিছিলাস্থ চেতনা ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, আমার বাড়ী সংগল্ন কাদের ভূঁইয়া পাড়া জামে মসজিদের সভাপতি এবং বিভিন্ন সমাজ ও সংগঠনের দায়িত্ব পালনে মরহুম রফিক সাহেবের অবদান আমাকে অনুপ্রানীত করছে প্রতিনিয়ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *