সংবাদ শিরোনাম
Home / গ্রাম-গঞ্জ / যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদ

যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদ

sitakund kumira up pic 2
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বিএসসি, (সীতাকুণ্ড টাইমস)-
বায়ান্ন বছর আগের পুরাতন ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সীতাকু- কুমিরা ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোঃ মোরশেদুল আলম চৌধুরী প্রকাশ মোরশেদ চৌধুরী। নতুন কেউ পরিষদে আসলেই আঁতকে উঠে প্রাণের বয়ে বেরিয়ে যান। প্রতিনিয়ত মেম্বার চকিদার সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দায়িত্বের খাতিরে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে সকাল সন্ধ্যা কাজ করে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায় দ্বিতল ভবনটির দ্বিতীয় তলায় কেউ উঠেনা। নিচের তলার চারপাশে ফাটল। শ্যাওলা জমে কর্দমাক্ত রূপ। ছাদের প্লাষ্টার খসে পড়ছে। এমনই একটি নোংরা পরিবেশে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই চলছে সীতাকু-ের কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে জনগুরুত্ব সম্পন্ন এই দপ্তরসহ আরো কয়েকটি দপ্তরের কাজ। যে কোন মুহুর্তে ধ্বসে পড়ে প্রানহানীর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু কিছুই যেন করার নেই কর্তৃপক্ষের। বর্তমান ভবনটি সরকারী খাস জায়গায় হওয়ায় এখানে নতুন ভবন নির্মানে সরকারি বরাদ্দ না হওয়ায় এখানে গড়ে তোলা যাচ্ছে না নতুন ভবনও। ফলে এ দুরাবস্থা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন ভবনটিকে অকার্যকর ঘোষনা দিয়ে কার্যক্রমকে অন্যদিকে সড়িয়ে না নিলে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতে পারে যে কোন মুহুর্তেই।

কুমিরা ইউপি ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, অর্ধ শতাব্দী প্রাচীন দ্বিতল ভবনটির চারিদিকে ছোট বড় ফাটল ধরেছে। মাঝে মধ্যেই ছাদ থেকে খসে পড়ে প্লাষ্টার। বর্ষায় পড়া পানি ছাদ চুষে বিনষ্ট করে আলমারিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।
এলাকাবাসী জানান, ওই ভবনে গ্রাম্য আদালতের বিচার কার্য চলার সময় প্লাস্টার খসে পড়ে আহত হবার ঘটনাও ঘটেছে। যেকোন মুহূর্তে এই ভবনটি ভেঙে পড়ার আশংকা ভেতরে প্রবেশ করতে ভয় পান সেবা নিতে আসা লোকজন। আতংকের মধ্যে কাজ করেন পরিষদের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উপজেলার আর কোন ইউনিয়ন পরিষদের এই দূরাবস্থা নেই বলে দাবী করেন তারা। স্বাধীনতার অনেক আগে এই ইউপি ভবনটি নির্মাণ হয়েছিল। এতদিনে ভবনের ইট-বালি খসে পড়তে শুরু করেছে। ফাটল ধরেছে চারপাশেই। এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জন সম্পৃক্ত দপ্তর। তবুও এটি সংস্কার না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক।
পরিষদের দলিল পত্রে দেখা গেছে, বড়কুমিরা মৌজার বি.এস ১০৩৩দাগের ৬২ শতক ভূমি একজন দানশীল ব্যক্তি জনস্বার্থে ইউনিয়ন পরিষদকে দান করেছিলেন। কিন্তু জায়গাটি খাস হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে এখানে দ্বিতল ভবন নির্মিত হয়। সেই থেকে এই ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলে আসছে। এ ভবনেরই এক কক্ষে কয়েক বছর আগেও কুমিরা পুলিশ ফাঁড়ি ছিলো। কিন্তু এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পুলিশ সদস্যরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে ফাঁড়ি স্থানান্তর করে পালিয়ে বেঁচে গেছে। এছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, পরিষদের আরো ২৩শতক জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
কুমিরা ইউপির পরপর তিনবারের নির্বাচিত সাবেক মেম্বার আবু তাহের জানান, শুরুতেই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বড় কুমিরা বাজারের রহিম উল্লা সওদাগরের দোকানের পাশে একটি গুদাম ঘরে চলতো। এরপর ৬৩সালের ঘূর্ণিঝরের পর নির্মিত একটি সাইকেèান সেন্টারে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্থানান্তরিত করে তৎকালীন চেয়ারম্যান জহুর আহমদ চৌধুরী। সেই থেকে অদ্যাবদি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম ওই ভবনেই চালিয়ে আসছে।
সহকারী কমিশনার(ভুমি) মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, ইউনিয়ন পরিষদকে ৩৩শতক সরকারি খাস জমি বন্দোবস্তি প্রদানের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আমাকে একটি প্রস্তাবনা তৈরী করে পাঠাতে নির্দেশ দেন। সম্প্রতি প্রস্তাবনাটি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, জেলা প্রশাসক শীঘ্রই ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শোভন কান্তি ভৌমিক প্রতিবেদক জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে এখানে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জায়গাটি খাস হয়ে গেলেও ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ হয়নি। ফলে এখানে সরকারীভাবে কোন ভবনও নির্মাণ করা যায়নি।
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, অর্ধ শতাব্দী প্রাচীন দ্বিতল ভবনটির বহু বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে। অনেক চেয়ারম্যান এই ভবনে বসে কার্যক্রম চালিয়েছে অথচ কেউ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেননি। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এই ভবনটি নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ভবনটিতে বসে কাজ করতে আমারও ভয় করে। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই আমার সময়ে জনগণের জন্য নতুন ইউপি ভবন গড়ে তুলতে চাই। ইতিমধ্যে আমি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য জেলা পরিষদে আবেদন করেছি। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি ইউনিয়ন পরিষদের অনকুলে বরাদ্দ দেবেন বলে তিনি আশাবাদী। যদি বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে এখানে অত্যাধুনিক একটি ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে আবেদন করবো। এই পরিষদের কৃষি, প্রানী সম্পদ দপ্তরসহ ২২টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর গড়ে তুলবো, যাতে এলাকার বাসিন্দারা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। তিনি জন সাধারণের কথা চিন্তা করে এ জায়গাটি কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *