সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী বীচ হতে যাচ্ছে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র

সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী বীচ হতে যাচ্ছে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সীতাকুণ্ড টাইমস ঃ
বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হওয়ার খবর ফেসবুক ও গুগলে প্রচারিত হওয়ার সীতাকুণ্ডের সেই গুলিয়েখালী বীচটি আজ হতে যাচ্ছে বিশ^ মানের পর্যটন কেন্দ্র। গুলিয়াখালী সি বিচ দিগন্ত জুড়ে সোনালি রঙয়ের মাঝে, স্তব্ধ নিঃশ্বাস দূরে ঠেলে ফিরে আসি বারে বার। ছুঁয়ে যাই, আবার-ও হারাই। আমারি জন্যে সহস্র সূর্য দেবে একই আলো চিরকাল!! কবিতার মতই অপরূপ গুলিয়াখালী সৈকতের সোনালি গোধূলি। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরপুর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। বাহারী রঙের বৃক্ষ আর আর সবুজের সমারোহ পরিবেশকে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত করেছে।বিশাল আয়তনের এই পর্যটন স্থান দেখতে দূর দূরান্তর থেকে অধীর আগ্রহে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। একদিকে দিগন্তজোড়া জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন। আছে সবুজগালিচার বিস্তৃত ঘাস। তার মাঝে বয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা নালা। জোয়ারের পানিতে সবুজ ঘাসের ফাঁকে নালাগুলো কানায় কানায় ভরে ওঠে। জোয়ার চলে গেলে ফিরে যায় আগের অবস্থায়। মৃদু বাতাস আর গাছের পাতার ফিসফিসানিতে তপ্ত দুপুর, স্নিগ্ধ বিকেল কিংবা বিষণ্ণ সন্ধ্যাটি যে কাউকে রাঙিয়ে তুলবে বর্ণিল আলোকছটায়। খাল ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য উপভোগের এক অভাবনীয় মুহূর্ত। চোখের সামনে অনন্য সুন্দরের এক সৈকত। গুলিয়াখালী বিচকে সাজাতে কোনো কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। সবকিছু মিলে এ যেন প্রকৃতির অন্যরকম ‘আশীর্বাদ’। এই সৈকতের একপাশে রয়েছে সাগরের জলরাশি, অন্যপাশে কেওড়া বন। দেখা মিলবে সোয়াম্প ফরেস্ট আর ম্যানগ্রোভ বনের অন্যরকম মিলিত রূপ।

যদিও গুলিয়াখালী সৈকতটি এখনো সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। তবে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে সেখানে। যা স্থানীয় মানুষদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এর আগে সৈকতে নৌকা ভাড়া বা গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ তা বেঁধে দিয়েছেন। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় রাতে সৈকতটি নিরাপদ নয়। একদিনেই ঘুরে আসা যায় গুলিয়াখালী থেকে। সীতাকুণ্ডের এই জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানটি অতীতে এতোটা জমজমাট ছিল না। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কিছু ছাত্র ঘুরতে গিয়ে গুলিয়াখালী সি বিচের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। তারপর থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায় স্থানটিতে। মূল সড়ক থেকে বেড়িবাঁধ নেমে কিছুদূর মাটির রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে সমুদ্র পাড়ের দিকে। কিছুদূর এগিয়ে গেলেই হাতের ডানদিকে কয়েকটি ছোটো টং দোকান ও হোটেলের দেখা পাবেন। সামনে আরও কিছুক্ষণ এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে বিস্তৃত জলরাশি আর কেওড়া বন। দেখবেন আপনার সামনে অনেকগুলো নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। ইঞ্জিনচালিত এই নৌকাগুলোতে করেই সোয়াম্প ফরেস্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। যেখানে ছোট ছোট সবুজ ঘাসে মোড়ানো টিলাগুলো দেখতে পারবেন। শীতকালে অবশ্য সমুদ্র পাড়ের খালগুলোতে পানি কম থাকে। ওই সময় হেঁটেই পৌঁছানো যায় সেখানে। তবে বর্ষার এ সময় সমুদ্র থাকে উত্তাল। এ কারণে খালের পানিও বেড়ে যায়। নৌকায় চড়ে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াতে পারবেন সমুদের কিনারা ধরে। এরপর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে নেমে পড়ুন ঘাষের টিলার উপর। উপভোগ করুন গুলিয়াখালী সি বিচের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। অনেকেই সৈকতে গোসল সেরে নেন। তবে সাঁতার না জানলে পানিতে না নামাই ভালো।

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে পর্যটনের আওতায় আনতে নেয়া হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। রাস্তার উন্নয়ন, হোটেল-মোটেল, রির্সোট গড়ে তুলতে ভূমি জরিপের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে প্রস্তাবনা। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে বীচ উন্নয়নের মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়ীত হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন,‘ পর্যটনের অপার সম্ভবনা হয়ে উঠেছে সীতাকুন্ড। খুব কাছ থেকে পাহাড়ী ঝর্ণা ও সমূদ্রের উত্তর তরঙ্গ উপভোগ করতে পারে পর্যটকরা। সুন্দর্য্য উপভোগে পর্যটকের ভীড় জমতে থাকায় গুলিয়াখালী সমূদ্র সৈকতকে পর্যটনে রুপ দিতে নেয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা। ধীরে ধীরে নানা পরিকল্পনা গ্রহন করে গুলিয়াখালী বীচকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র রুপ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব ও সীতাকুণ্ড সমিতির সাবেক সভাপতি লায়ন গিয়াস উদ্দিন সরকার নিকট দাবী জানিয়ে বলেন দ্রুত গুলিয়াখালী বিচকে সরকারীভাবে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষনা দেওয়ার। স্থানীয়দের কাছে সৈকতটি মুরাদপুর সি-বিচ নামে পরিচিত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে। আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া না লাগলেও এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলবেঁধে অনেক দর্শনার্থী ছুটে আসছেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এই সৈকতে। সংশ্নিষ্টদের মতে, সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গুলিয়াখালী বিচ হতে পারে দেশের পর্যটনের অন্যতম একটি স্থান। আর তা সম্ভব হলে দেশের পর্যটন খাতে অনেক বড় অবদান রাখতে পারবে এটি।
স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ার কামরুদ্দোজা বলেন সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও এসিল্যান্ডসহ গুলিয়াখালী বীচটি পরিদর্শন করার পর ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার রিসোর্ট,ফুটব্রীজ ও একটি রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে যা ইতি মধ্যে নক্সা ও বাজেট প্রনয়ন করে এসিল্যান্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পৌছানো হয়েছে। প্রকল্পটি মন্ত্রনালয় অনুমোদন দিলে খুব দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে গুলিয়াখালী বিচটি সৌন্দয্য বিশ^বাসী দেখতে পাবে। তিনি আরও জানান গুলিয়াখালী বিচটিতে পর্যটকরা বর্তমানে সীতাকুণ্ড নামার বাজার রোড দিয়ে যাতায়াত করলেও আগামীতে গুলিয়াখালী বীচটির যাতায়াত হবে হাসপাতালের পশ্চিমে দোয়াজী পাড়া আব্দুস সত্তার রোড দিয়ে। রোডটির পাশ ২৫ বৃদ্ধি করে সাজানো হবে যাতায়াতের ব্যবস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *