সংবাদ শিরোনাম
Home / উপজেলা সংবাদ / সীতাকুণ্ডে জামায়াতের চ্যালেঞ্জের কাছে বিএনপির হার !

সীতাকুণ্ডে জামায়াতের চ্যালেঞ্জের কাছে বিএনপির হার !

জাফর আহমদ, ১৭ মার্চ (সীতাকুণ্ড টাইমস ডটকম)-
সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির ৩ প্রার্থী মাঠে থাকায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। এখন শুধু মাঠে একটি কথা বেশী শুনা যাচ্ছে বিএনপি কয়েকজন নেতার একক সিদ্ধান্তে জামায়াতের সাথে বৈঠক করে একক প্রার্থী দিতে পারেনি। জামায়াত তাদের জনশক্তি পরীক্ষা ও কর্মীদের সক্রিয় করতে এবং বিএনপি নেতাদের উদাসিনাতার জবাব দিতে সর্বোপরি জয়ের আশায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের কাছে হেরেছে বিএনপি। জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাড়ে ১৮ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান মাত্র তিন হাজার ১শত ৩৮।
আওয়ামী লীগেও বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। তবে পরাজয়ের জন্য বিএনপি প্রার্থী কাজী সালাহ উদ্দীন জামায়াত ফ্যাক্টরের পাশাপাশি পাঁচটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নজিরবিহীন কারচুপি করেছে বলে অভিযোগ করছেন। নির্বাচন চলাকালে শনিবার বেলা দুইটার মধ্যে তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চারটি কেন্দ্র স্থগিত চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এর ঘণ্টা খানেক পর জঙ্গল ছলিমপুর ছিন্নমূল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেন তিনি। জঙ্গল ছলিমপুর কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের এস এম আল মামুন পেয়েছেন চার হাজার ৪৫২ ভোট। বিপরীতে সালাহউদ্দিন পান মাত্র ১১৫ ভোট। পাহাড়ের ভেতরে এই কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৮৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। অথচ সবগুলো কেন্দ্র মিলে প্রদত্ত ভোট ৪৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি বিএনপির প্রার্থী কাজী সালাহ উদ্দীন বলেন, ‘সবকিছু অনুকূলে ছিল। কিন্তু কয়েকটি কেন্দ্রে তাদের ভোট চুরির কাছে হেরে গেলাম। জামায়াত ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও ভোট জালিয়াতি না করলে আমিই জিততাম। আমি দুপুরেই কেন্দ্র স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছি। ওসব কেন্দ্রে আমাকে সাত হাজার ভোটে পিছিয়ে দেওয়া হয়।’
তবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহম্মদ শাহীন ইমরান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে ভোট স্থগিত করার মতো কোনো ঘটনার সত্যতা আমরা পাইনি।’
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সালাহউদ্দিন ৩৬ হাজার ১৩৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। চেয়ারম্যান পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী দিদারুল ইসলাম মাহমুদ পান ছয় হাজার ৪০৭ ভোট। দুই বিএনপি প্রার্থী ও এক জামায়াত প্রার্থী সম্মিলিতভাবে ভোট পান ৬১ হাজার ৪৯।
অন্যদিকে, দলের দুই বিদ্রোহীসহ আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীর মোট ভোট দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ৪৭৪। কয়েকটি কেন্দ্রে কারচুপি না হলে বিএনপি আরও বেশি ভোট পেত বলে তাদের দাবি।
৮২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৭টিতে সর্বোচ্চ ভোট পান মামুন। সালাহউদ্দীন প্রথম হন ৩৭টিতে। এ ছাড়া জামায়াতের মোস্তফা নূর ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোস্তফা কামাল আটটি করে কেন্দ্রে প্রথম হন।
কারচুপির অভিযোগ প্রসঙ্গে এস এম আল মামুন বলেন, ‘আমাকে সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছে। এখন পরাজিত প্রার্থী যদি কোনো অভিযোগ দিয়ে থাকে, তাহলে তা নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে দেখবে।’
এদিকে, কারচুপির পাশাপাশি জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও সীতাকুণ্ডে বিএনপির পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। কারণ গত কয়েক বছরে সীতাকুণ্ডে জামায়াত নিজেদের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
জামায়াতের শক্ত অবস্থান এবং তৎপরতার কারণে নির্বাচনে তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা নূর এত বেশি ভোট পেয়ে তৃতীয় হন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সীতাকুণ্ডে জামায়াত নিজেদের শক্তির একটি পরীক্ষা নিল মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি সালাহ উদ্দীনকে ১৯ দলের প্রার্থী হিসেবে প্রচার করে আসছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে। এ কারণে জামায়াত ক্ষিপ্ত হয়ে আলাদা প্রার্থী দেয়। পরে প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হলেও জামায়াত তা মানেনি। এ বিষয়ে কাজী সালাহ উদ্দীন বলেন, ‘সব জায়গায় বিএনপি জামায়াতের প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচন করেছে। আর এখানে জামায়াত আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে নির্বাচন করেছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সুবিধা করে দেওয়ার জন্য তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি।’ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের আলাউদ্দিন ছাবেরী ও নাজমুন নাহার জিতেছেন। এদিকে জামায়াত কর্মীরা অভিযোগ করে বাঁশবাড়িয়া,বাড়বকুন্ড,পৌরসদরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বিএনপির নেতা কর্মীরা মোস্তফা নুর বসে গিয়ে টেলিফোনে ভোট দিতে অনুরুধ জানিয়েছে বলে অপপ্রচার করে। প্রায় কয়েক হাজার মোবাইলে এসএমএস দিয়ে এই অপপ্রচার করে বিএনপির বড়বড় নেতারা। শুধু তাইনা বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা বুলু ও নোমান বিএনপির প্রার্থীকে ১৯ দলের একক প্রার্থী হিসেবে মিথ্যা ঘোষনা দেয়। এতে জামায়াত নেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
তারা এ অপপ্রচার করার কারনে অনেক জামায়ত সমর্থক টেলিফোনে ভোট দিয়েছে। স্থানীয় জামায়াত শিবিরের নেতারা দাবী করছে আগামীতে পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ ও সংসদ নির্বাচনেও তারা প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সূত্র-প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *