সংবাদ শিরোনাম
Home / উপজেলা সংবাদ / সীতাকুন্ডে আইন শৃংখলার চরম অবনতি ঃ প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন, চাঁদাবাজী, ছিনতাই,ডাকাতি, জিম্মি করে টাকা আদায়, মারধর, নিজেদেরমধ্যে গুলি বিনিময়, রাতে বোমাবাজি, সাধারণ বাসিন্দারা আতংকে

সীতাকুন্ডে আইন শৃংখলার চরম অবনতি ঃ প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন, চাঁদাবাজী, ছিনতাই,ডাকাতি, জিম্মি করে টাকা আদায়, মারধর, নিজেদেরমধ্যে গুলি বিনিময়, রাতে বোমাবাজি, সাধারণ বাসিন্দারা আতংকে

কাইয়ুম চৌধুরী,৮মে (সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম)ঃ
বিরোধীদলের আন্দোলনে দেশ বিশেষ করে সীতাকুন্ড যখন অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল, তখন ৫জানুয়ারী সংসদ নির্বাচনের পর কিছুদিন সীতাকুন্ড ছিল অনেকটা শান্ত। এরপর হয়ে গেল উপজেলা নির্বাচন। এতেও আ.লীগ প্রার্থীর বিজয় হওয়ার পর উপজেলাবাসী পরিপূর্ণ শান্তি আশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটেগেল সম্পুর্ণ উল্টো। শান্তির স্থলে জায়গা করে নিয়েছে চাঁদাবাজ, ডাকাতি, ছিনতাই, মারামারি, অস্ত্র প্রদর্শন ও রাতে বোমাবাজি।
সীতাকুন্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনের পর আ.লীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কেউ এমপির সমর্থক, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থক। যুবলীগ-ছাত্রলীগও একই অবস্থা। এই সুবাদে স্বার্থবাজ কিছু যুবলীগ-ছাত্রলীগ নামধারী তাদের অপর্কম চালিয়ে যেতে স্ব স্ব এলাকায় গ্রুপ সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অপকর্মের মধ্যে রয়েছে এলাকায় কেউ ঘরবাড়ী বা রাস্তা নির্মান করলে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করা, ছিনতাই, ডাকাতি, প্রকাশ্যে যেকেউকে মারধর টাকা-পয়সা, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া আবার অনেককে জোরপূর্বক টেক্সীতে তোলে নিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রনে আটক রেখে অভিভাবক থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়। জোরপূর্বক কারো ভাড়াটিয়া সেজে জায়গা দখল, জামায়াত-শিবির প্রতিহত করার নামে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন, আবার অধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজেদের মধ্যে গুলি বিনিময়, সকল অপকর্মে লিপ্ত এই গ্রুপ গুলো। এরা কখনো উপজেলা চেয়ারম্যান কখনো এমপির সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের বীরত্বের বর্ণনা করে। এই গ্রুপ গুলো তাদের অপকর্মগুলো যখন করে থাকে তখন তারা নিজেদেরকে মহাবীর পুরুষ বলেও দাবী করে। এসব গ্রুপের সদস্য ১৪ বছর থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত যুবক রয়েছে। বয়স কম হওয়ায় অনেকে দেখলে বিশ্বাসই করা যায়না তারা অস্ত্রবাজী করে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। এসব উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক জহিরকে প্রকাশ্যে সীতাকুন্ড বাজারে মারধর করে। পরে অবশ্য আমির নামে এক সন্ত্রাসীকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরন করলে কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে আসে। সন্ত্রাসীরা প্রথমত বিএনপি জামায়াত-শিবির কর্মী সমর্থককে ধরে মারধর টাকা-পয়সা নিয়ে পুলিশে সোর্পদ করার কাজে নিয়োজিত ছিল। এই সুবাধে পুলিশের সাথেও তাদের রয়েছে কিছুটা সক্ষ্যতা। এখন জামায়াত-শিবির বিএনপি নেই তাই বেকার বলে করে যাচ্ছে নানান অপকর্ম। অনেকটা ক্ষোভের সাথে এই সব জানায় এক আওয়ামীলীগ নেতা। গত মঙ্গলবার বটতল এলাকায় মোস্তফা নামক এক যুবলীগ নেতার বাড়ীতে হামলা চালিয়ে বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটতরাজ করে একই দলের অপর আরেকটি গ্রুপ। এভাবে তাদের নিজেদের মধ্যে প্রায়ই গুলি বিনিময় ও মারামারি হয় ভাগাভাগি ও অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে।
পন্থিছিলা এলাকার এক সচেতন ব্যক্তি (সরকারী চাকুরী অবসরপ্রাপ্ত) জানায়, পন্থিছিলা এলাকায় সন্ত্রাসী গ্রুপ উপগ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এদেরকে এক স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাই আশ্রয় প্রশ্রয় নিয়ে আসছে। এরা কখনো চেয়ারম্যান সমর্থক, কখনো এমপি সমর্থক বলে দাবী করে।
তাছাড়া মুরাদপুর, বাড়বকুন্ডের কিছু অংশ, সৈয়দপুর, বহরপুর, মহানগর, বাঁকখালী, মহালংকা, সীতাকুন্ড সদর বাজার, নামার বাজার, প্রেমতলা, নিজ তালুক, ভূঁইয়াপাড়া, শেখপাড়া, কেদারখীল, বটতল, নোনাছড়া, ছোটদারোগারহাট, টেরিয়াইল, বারৈয়াঢালা, বড়দারোগারহ্টা বাজার তাদের বিস্তার। প্রতিটি এলাকায় একজন করে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। নাম প্রকাশে অনিহা অসংখ্য বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, এলাকার কেউ বিদেশ থেকে আসলে বাড়ীতে থাকতে পারে না। শুনলেই মোটা অংকের চাদা আদায় করতে বাড়ীতে চলে আসে। চাঁদা দিয়ে বাড়ীতে থাকলেও ঘর পাকা করতে তাদের কাছ থেকে ইট, বালি, সিমেন্ট, রড নিতে হবে টাকা নিয়ে তারা কিনে দেবে ইচ্ছেমত দরে। আবার ঘরের ফিস আলাদা দিতে হবে। এমনকি বিয়ে দিলে বা করলেও তাদেরকে না জানিয়ে করা বা দেয়া যাবে না। বাড়ীতে দুটি টিভি রয়েছে। এরা দেখলে একটা টিভি চেয়ে বসে। এমন ঘটনাও ঘটেছে ভূঁইয়া পাড়ায়। বিরোধী দল দমানোর নামে সীতাকুন্ড বাজারে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা যায় কিছু যুবককে।
আইন শৃংখলা অবনতির কথা স্বীকার করেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগন। তারা উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির বৈঠকে তাদের এলাকায় এসব অপকর্ম চলছে বলে অভিযোগ করেন এবং প্রতিকার চান। সলিমপুর চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ দাবী করেন, জঙ্গল সলিমপুর, লতিফপুর এলাকায় খুন অপহরন, ছিনতাই, অবৈধ দখল, সবই চলছে। তারা অস্ত্রসস্ত্র সজ্জিত তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। বাড়বকুন্ড চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লা, মুরাদপুর চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাহার, সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী, বারৈয়াঢালার চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রেহান বৈঠকে বলেন, তাদের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চাঁদাবাজী অবৈধ দখল, ছিনতাই মাদক বেচাকেনা ও ব্যবহার অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগীতা চেয়েছেন। তাদেরকে আইনের আওতার আনার দাবী জানান। সন্ত্রাসীরা উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপির পৃথক পৃথক সমর্থক দাবী করে এসব করছে বলে প্রচার রয়েছে উল্লেখ করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলম দু’জনই তাদের কোন গ্রুপ নেই এমনটি সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই এরা যখন যার কাছে যায় তখন তার বলে মন্তব্য করেন। তাদের অপকর্ম এই দুজনই বন্ধ করতে একমত। অনেক সন্ত্রাসীর মতামত জানতে গিয়ে জানা গেল, নেতাদেরকে নেতা বানিয়েছি এখন আমাদের কাজ কি? চাকুরী নেই ব্যবসা নেই দল থেকে কিছু দেয়না তাছাড়া জীবন বাজি রেখে শিবির-বিএনপিকে তাড়িয়েছি। তারা যেন এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেইজন্যও আমাদের পাহারা থাকতে হবে। পাহারা দিতে দেখলেই অনেকে মনে করে সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত রয়েছি। আসলে তা নয়। অনেক চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন নিরাপত্তার কারনে অনেক জায়গায় সন্ধ্যার পর দোকান বন্ধ করে চলে যায় দোকানদার। রাতে বাস থেকে কেউ নামলে হাতিয়ে নেয় সর্বস্থ। অনেকস্থানে নারী কেলেংকারীর ঘটনাও অহরহ হচ্ছে। গত এক বছর সীতাকুন্ডের কোথাও ডাকাতির তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ইতিমধ্যে জানা গেছে, বেশকয়েকটি চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটে সদরে। গত রবিবার ইদিলপুর এলাকায় এক বাড়ীতে দূর্ধষ চুরি, ঔষধ ব্যবসায়ী নান্টুর বাড়ীতে দূর্ধষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে এভাবে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সীতাকুন্ড সদর পূর্ব মহাদেবপুর (ভোলাগিরি, ভূঁইয়া পাড়া, প্রেমতলা) এলাকার বাসিন্দারা জানায়, রাত হলে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। কেন কে করে না জানলেও তবে বিরোধী দল যে এলাকায় নেই এটা নিশ্চিত বলে দাবী করে এলাকাবাসী। কেন ফাটায় তা তারা জানেনা। তবে শিশু কিশোররা মারাত্বক আতংকে রাত কাটে বলে জন প্রতিনিধিরাও অভিযোগ করেন। সীতাকুন্ডের উল্লেখিত স্থানগুলোতে আইন শৃংখলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে অপকর্মে লিপ্তদেরকে গ্রেফতার করার দাবী জানানো হয়। উপজেলা যুবলীগ ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা জানায়, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা তাদের কমিটির কেউ নয়। তারাও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রতি দাবী জানান।
সীতাকুন্ড থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের আসামী ধরতে এতদিন ব্যস্ত ছিলেন। এখন ঐসব মামলায় তদন্ত ও চাজসীট প্রদান করা হচ্ছে। তাই পুলিশ অনেকটা ব্যস্ত হলেও সীতাকুন্ডে প্রতিটি অঞ্চলে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। আইন শৃংখলা অবনতিকারকরা সরকার সমর্থক হওয়ায় পুলিশ একটু বেকায়দায় রয়েছে। তবে কিছু দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড পাহাড়তলী আকবরশাহ) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলম বলেন, সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই। অনেক ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্ব কর্মকান্ড বন্ধ হয়েছে। আমরা দেশের আর কোন ক্ষতি চাই না। দলের নাম বিক্রি করে যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায় তাদেরকে চিহ্নিত করে পুলিশে সোর্পদ করা হবে। একই কথা বললেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম আল মামুন। কিন্তু তাদের এসব বক্তব্যের বৃদ্ধাংগুল দেখাচ্ছেন যুবলীগ নামক সন্ত্রাসীরা। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক রবিউল হক রবি, ছাত্রলীগের সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাহেদ এদের কাছ সন্ত্রাসী গ্রুপের বিষয় জানতে চাইলে তারা এক যুগে বলেন, যারা এলাকায় যুবলীগ ছাত্রলীগের নাম বিক্রি করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চাঁদাবাজী দখলবাজী চালিয়ে আসছে তারা আসলে দলের তালিকা ভূক্ত কেউ নন। তবে তাদেরকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। চিহ্নিত হওয়ার পর তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *