সংবাদ শিরোনাম
Home / রাজনীতি / স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও সীতাকুন্ডের শহীদ নৌ-কমান্ডো মোজাম্মেল হক এর কবর সনাক্ত হয়নি

স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও সীতাকুন্ডের শহীদ নৌ-কমান্ডো মোজাম্মেল হক এর কবর সনাক্ত হয়নি

wwwwজামশেদ উদ্দিন,৯ডিসেম্বর(সীতাকুন্ড টাইমস)ঃ
স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরও সনাক্ত হয়নি শহিদ মুক্তিযোদ্ধা নৌ- কমান্ডো মোজাম্মেল হকের কবর। ১১ই ডিসেম্বর তিনি শহীদ হন। কিন্তু তার কবর এখনো সনাকক্ত হয়নি। শহীদের একমাত্র কন্যা রেহেনা বেগম ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘বাবার কবর সনাক্তে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, কল্যান ট্রাস্ট ও নৌ-সদর দপ্তরে আবেদন করেছি। আজ হবে, কাল হবে এ আশায় বুক বেধে শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছি।’ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি
প্রিয় মাতৃভূমি হানাদারমুক্ত হওয়ার মাত্র ৬দিন আগে শহিদ হন কমান্ডো মোজ্জাম্মেল হক। খুলনা রূপসা নদীতে পাক নৌ-ঘাটিতে তিনটি পাক যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস করে ফিরে আসার পথে তাদের গানবোট নিমজ্জিত হয়। ওই সময় বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমিন ১৬ জন নৌ-কমান্ডো নিয়ে বিধস্ত গান বোটটি তীরে ভিড়াতে সক্ষম হলেও পাক নৌ-সেনাদের হাতে ধরা পড়ে তারা। পরবর্তীতে ১৮ ডিসেম্বর নৌ-কমান্ডো বীর প্রতিক গাজি রহমত উল্লাহ’র উপস্থিতিতে ধ্বংস হওয়া ‘ পদ্মা-পলাশ’ থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করে। এ দুজনের মধ্যে একজন শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিবুল্লাহর লাশ বলে সনাক্ত করা হয়। অপর শহিদের লাশ সনাক্ত করা যায়নি।
শহিদ বীর প্রতীক মুহিবুল্লাহ পাকিস্তান নৌ-বাহিনীর ব্যাচনং-৬২০৭২৬ ও শহিদ মোজাম্মেল হকের (এম হক) ব্যাচনং-৬২০৭২০ ছিল। তারা দুজন এক সাথে পাকিস্তানি নৌ-বাহিনী থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন। এই দুই শহিদের লাশ বীরশ্রেষ্ট শহিদ রুহুল আমিনের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। শহিদের কন্যা দাবী করেন সনাক্ত ছাড়া যে শহিদের লাশ দাপন করা হয়েছে, সেটি তার বাবার নৌ-কমান্ডো মোজাম্মেল হকের।
মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডের বাংলাদেশ গেজেট তালিকায় ১৯ নম্বরে শহিদ মোজাম্মেল হকের নাম লেখা রয়েছে। ১৯৭২ সালে নৌ-বাহিনী তার পরিবারের কাছে পাঠানো এক পত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে শহিদ হিসেবে ঘোষনা দেন। নৌ-বাহিনী চট্টগ্রাম ঈশাখার কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে স্মৃতিপলকে তার নাম ৫ নম্বরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধের নৌ-কমান্ডো গ্রন্থের ২’শ ৫৮ পৃষ্ঠায় তার নাম উল্লেখ রয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ঃ সীতাকুন্ড অঞ্চল গ্রন্থের ১৩০-১৩৩ পৃষ্ঠায়ও সংক্ষিপভাবে তা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
শহিদ মোজাম্মেল হক সীতাকুন্ড উপজেলার ২নং বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের পূর্ব লালা নগর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবা হাজী বদিউজ্জামান ভূইয়া ও মাতা হাজেরা খাতুন। ১৯৬২ সালে একই গ্রামের হাজী ছন্নুমিয়ার কন্যা ছকিনা খাতুনের সাথে এই বীরের বিয়ে হয়। দেশে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, তখন তাদের একমাত্র কন্যা রেহেনার বয়স ছিল মাত্র এক বছর।
১৯৭১ সালে ৪ এপ্রিল তাদের যুদ্ধ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছলে তিনি ৬ ঘন্টার ছুটি নিয়ে নবজাতক সন্তানকে এক নজর দেখতে বাড়িতে ছুটে আসেন। অবশেষে সন্তানকে শেষ চুম্বন দিয়ে দেশ-মাতৃকাকে স্বাধীন করতে ভারতে চলে যান। তারপর ত্রিপুরারহরিনা ক্যাম্পে গিয়ে ১ নং সেক্টরের উপ-সেক্টর কমান্ডার ও আওয়ামিলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের সাথে দেখা করেন। সেখান থেকে তাকে সরাসরি দেরাদুন নৌ-ঘাটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ১০ সেক্টরের অধীনে মেজর জলিলের নেতৃত্বে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপন লড়ায়ে লিপ্ত হন। প্রিয় মাতৃ ভূমির বিজয়ের পতাকা উড়ার আগেই ঘাতকরা এ বীরের হৃদয়ের স্পন্দন থামিয়ে দেয়। শহীদের কন্যা রেহেনা বেগম বলেন, ‘বাবা শহিদ হওয়ার পরও শহিদ পরিবার হিসেবে সন্মান পাইনি। বাবার নামে নৌ-বাহিনীর পক্ষ হতে একটি যুদ্ধ জাহাজের নামকরন করবে বলে যে ঘোষনা দেয়া হয়েছিল, তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আমাদের জোর দাবী বাবার কবরটি সনাক্ত করে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় সম্মান দেয়া হোক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *