সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / কুমিরায় এক মাত্র ছেলে স্বাধীনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা

কুমিরায় এক মাত্র ছেলে স্বাধীনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বিএসসি, সীতাকুণ্ড টাইমস ঃ
নাম তার স্বাধীন। বাবা জাহাজে থাকার সুবাধে ৩বোনের ছোট ভাইটি সবসময় ছিল স্বাধীন। কুমিরা রোজ গার্ডেন একাডেমি থেকে এসএসসি,বিজয় স্বরনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে স্বাধীন জাহাজে চাকরির জন্য মার্স মেরিন থেকে সী ম্যানের প্রশিক্ষণ শেষ করে তার বড় মামার মাধ্যমে ব্রাজিলে জাহাজে যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। বাবার স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলেকে জাহাজে পাঠিয়ে একটা সুন্দর বাড়ি করে বিয়ে করাবে ছেলেকে। কিন্তু বাবা মায়ের সেই আশা আর পূরণ হলনা। বাবার চোখের সামনেই লাশ হল ছেলে আর জ্বলছে গেল বাবা। জলছে যাওয়া বাবা স্বাধীন বলে বলে হুশ হারাচ্ছে বারবার। এদিকে কুমিরা নিউরাজাপুর তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়া মা তাহমিনা আক্তার বাকরুদ্ধ। আত্মীয়রা আসছে মাকে সান্তনা দিতে।
স্বাধীন এর শোকাহত মামা নিয়াজ মোর্শেদ জানান আমাদের আদরের একমাত্র ভাগিনা গতকাল বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে জাহাজের মধ্যে বিস্ফোরণে নিহত হয়। আহত হয় স্বাধীন এর বাবা জাহাজের চীফ ড্রাইভার মোঃ কুতুবউদ্দিন (৬২)।।
তিনি আরও জানান ৩বোনের ছোট ভাই ছিল স্বাধীন। মা একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে চলেগেল না ফেরার পথে। শুক্রবার রাতে স্বাধীনের লাশ বাড়িতে পৌঁছবে এবং সব ঠিক থাকলে শনিবার সকালে কুমিরা ডাল-চাল মিঞা (রঃ) মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকাল ৫ টার দিকে বরিশাল কীর্তনখোলা নদীতে নোঙরকরে রাখা এমটি এবাদ-১ জাহাজে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় স্বাধীনসহ আরো দুইজন মারা গেছে। নিহতরা হলেন আনোয়ার উপজেলার বাসিন্দা জাহাজের গ্রিজারম্যান বাবুল কান্তি দাস ও চট্টগ্রামের বাসিন্দা ক্লিনার কাশেম।
জানা যায়, বরিশালে এমটি এবাদ-১ নামক একটি তেলবাহী জাহাজে চাকুরী করতেন কুমিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাজের চীপ ড্রাইভার মো.কুতুব উদ্দীন। একমাত্র ছেলে ফারদিন আরাফাত স্বাধীন তার বাবার কর্মস্থলে বেড়াতে গিয়েছিল। নিহত স্বাধীন তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট। বোনেরা সবাই বিবাহিত। স্বাধীন উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং ছালামত মাস্টারের বাড়ির কুতুব উদ্দীনের ছেলে।

কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক এক তেলের ট্রাংক বিষ্পোরণে ঘটনাস্থলে মারা যান ছেলে স্বাধীন। এ ঘটনায় কুতুব উদ্দীনও গুরুতরু আহত হন। তার হাত-পা জ্বলসে গেছে।বর্তমানে তিনি ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি আছেন।

এই পরিস্থিতিতে ফারদিন আরাফাত স্বাধীনের মৃত্যুর খবরে ছড়িয়ে পড়লে তার মা তাহমিনা আক্তার বাকরুদ্ধ হয়ে যান। একমাত্র ছেলের মৃত্যু সইতে না পেরে শোকে কাতর হয়ে যান স্বাধীনের মমতাময়ী মা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য স্বাধীন আর নেই এমন কথা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে স্বাধীনের সহপাঠী বন্ধু-বান্ধব, স্কুলের শিক্ষকদের। স্বাধীনের মৃত্যুতে কুমিরার রাজাপুর এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।
স্বাধীন এর মৃত্যুর সংবাদ জানার পরপরই তার বন্ধু বান্ধবরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শোক প্রকাশ করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোজগার্ডেন একাডেমির খুরশেদ আলম লিখেন-
শোকার্ত শিক্ষকের আহাজারিঃ
স্বাধীন, অনেক বেশি স্নেহ করতাম তোমাকে। রোজ গার্ডেন একাডেমিতে অষ্টম শ্রেণিতে পা রাখার সাথেসাথে তোমার অনেক বন্ধু জুটে গেলো। তিন বোনের একমাত্র ছোটভাই তুমি।ঘরেবাইরে স্নেহাদরের কমতি ছিলোনা। চাকরির সুবাদে বাবা বাইরে থাকায় তোমার আধিপত্য ছিলো বেশি।ক্লাসে কম আসতে।পড়াশোনায় হয়ে ওঠলে উদাসীন।বন্ধুস্বজন,খেলাধূলা নিয়ে ব্যস্ত হলে । বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে তোমার মা সাবধানে মৃদুস্বরে অভিযোগ লুকাতো।তোমার বাবাও আমার ছাত্র। বাড়িতে এলে সে আমার কাছে তোমার বিষয়ে খোঁজখবর নিতো।
মনে আছে আমার। একদিন দেরিতে ক্লাসে ঢুকতে চাইলে আমি দরজায় দাঁড় করিয়ে রাখলাম। তোমার দুচোখ জলে ভিজে গেলো। আমি আঁড়চোখে তা দেখেছি।টিচার নুর নবী এসে তোমার হয়ে অনুরোধ করায় ক্লাসে ঢুকতে দিলাম।পরে অফিসে ডেকে নিয়ে তোমাকে পড়ালেখার গুরুত্ব নিয়ে ঘন্টাখানেক বুঝালাম। সে-ই দিন থেকে তুমি অন্য মানুষ। মনোযোগী ছাত্র।


তোমার সুন্দর আচরণ ও ভদ্রতা সব শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মোহিত করলো।সবাই তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করলেন।তুমি যথারীতি এসএসসি পাশ করে গেলে।শিক্ষকদের প্রতি তোমার অগাধ শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেশিদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সবকিছু ছেড়ে,সবাইকে কাঁদিয়ে তুমি চলে গেলে না ফেরার দেশে। তোমার বাবাও আজ হাসপাতালে। শেষ যাত্রায় তোমাকে দেখবে না। তুমি তার একমাত্র পুত্রসন্তান।পর্বতসম দুঃখভার কাকে দেবে সে!
মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান করুন -এ দোয়া করছি। বি.দ্র. বরিশাল থেকে কফিন আনার পর স্বাধীনের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হবে – কুমিরা ডাল-চাল মিঞা (রঃ) মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *