সংবাদ শিরোনাম
Home / উপজেলা সংবাদ / বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এলকে সিদ্দিকী আর নেই ঃ সীতাকুন্ডে শোকের ছায়া

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এলকে সিদ্দিকী আর নেই ঃ সীতাকুন্ডে শোকের ছায়া

L,K Siddiqiনিজস্ব প্রতিবেদক,১ আগষ্ট(সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম)-
বাংলাদেশ সরকারের সাবেক ডেপুটি স্পিকার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রি ইঞ্জিনিয়ার এলকে সিদ্দিকী(৭৬) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে একটি হাসপাতালে আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে … … …রাজউন)। তার মৃত্যুতে সীতাকুন্ডে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এল.কে সিদ্দিকী সীতাকুন্ড মুরাদপুর দক্ষিণ রহমতনগর গ্রামের আবুল মনছুর লুৎফা আহমদ সিদ্দিকীর পুত্র। তিনি মৃত্যু কালে ৩ ছেলে ১ মেয়েসহ অনেক নেতাকর্মী ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
এলকে সিদ্দিকী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খুব ঘনিষ্ট ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ ও পানি সম্পদ
মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব এবং গত বিএনপির আমলে তিনি ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছে। সীতাকুন্ড বিএনপি নেতাদের মধ্যে বয়োজৈষ্ঠ্য নেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম বাচ্চু,চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ,সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এড. মোস্তফা নুর,সীতাকুন্ড প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বিএসসি,উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তফাজ্জল হোসেন,যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম জহুর,উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা শফিকুল মাওলা,সীতাকুন্ড পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ,পৌর বিএনপির সভাপতি ইউছুপ নিজামী,সেক্রেটারী সামছুল ইসলাম আজাদ,ব্যবসায়ী নেতা মোঃ আশরাফ। নেতৃবৃন্দরা শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার এল. কে সিদ্দিকী ১৯৩৯ সালের ১৫ই এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ডের দক্ষিণ রহমতনগর গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম আবুল মনসুর লুতফে আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি সীতাকুন্ড উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে প্রমথ বিভাগে ম্যাট্রিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে ঢাকার আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৬০-৬১ সালে আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৬১-৬৬ সাল পর্যন্ত গ্যামনস ইষ্ট পাকিস্তান লিমিটেড- এ কাজ করেন। এছাড়া, জনাব এল কে সিদ্দিকী ১৯৬৬-৭০ সাল পর্যন্ত (স্বল্পমূল্যে গৃহায়ন) বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী হিসেবে লিবিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালে দেশে ফিরে প্রকৌশলী উপদেষ্ঠা পেশায় জড়িত হন। তিনি বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশনের আজীবন সদস্য। এছাড়া জনাব এল কে সিদ্দিকী ১৯৭৩-৭৫ সালে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন,চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনারারী সাধারণ সম্পাদক ও ৭৫-৭৬ সালে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশনের ঊনবিংশতম বার্ষিক কনভেনশনে কনভেনশন সেক্রেটারী ছিলেন।
জনাব ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকী ১৯৭৩ সালে কমনওয়েলথ ইঞ্জিনিয়ার্স কনফারেন্স( সিইসি) লন্ডন,আমেরিকার নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অরগানাইজেশনের চতুর্থ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ভারতের মাদ্রাজে ইনষ্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়ার ৫৩তম বার্ষিক কনভেনশনে ও ৭৫ সালে ভারতের লক্ষ্যেতে ইনষ্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া ৫৫তম বার্ষিক কনভেনশনে যোগদান করেন।
এল কে সিদ্দিকীর রাজনৈতিক কর্মকান্ডঃ তিনি ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন। একইবছর তিনি জাতিসংঘের ৩৪তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবংআন্তর্জাতিক শিশুবর্ষের উপর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দানসহ ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের বিশেষ অধিবেশনে বাংলােেশর প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ১৯৮০ সালে বিদ্যুৎ,পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮১ সালে সেচ,পানি সম্পদ উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮০-৮২ সালে ভারতের সাথে যৌথ নদী কমিশনের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪-৯০ সালে তিনি চট্টগ্রাম শতনাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১-৯৬ সালে জাতীয় সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৯১-৯৬ সালে জাতীয় সংসদের পিটিশন কমিটির সদস্য ছিলেন। একই সময়ে তিনি সেচ মন্তণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯২-৯৪ সালে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ডেপুটি স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালে ৮তম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং একইবছরে ১০ অক্টোবর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালের মে মাসে তিনি মন্ত্রী সভার সদস্য পদত্যাগ করেন।
বিভিন্ন সময়ে বিএনপির দায়িত্ব ঃ ১৯৭৯-৮৪ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ১৯৮৪-৮৬ সালে কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি ১৯৮৬-৮৮ সালে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক,৮৮-৯৩ সালে পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ পযর্ন্ত ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে দলের মখপাত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সফর করেন এবং স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করেন। তিনি ফেলে আসা দিনগুলি ও অন্যান্য নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
তার পরিবারঃ তার স্ত্রী মাহমুদা সিদ্দিকী একজন সমাজসেবী এবং আন্তর্জাতিক ইনার হুইলের ডিরেক্টর ছিলেন(২০০৩-২০০৪)
তার ১ কন্যা ইবতেসাম সিদ্দিকী ,এম.কম(একাউন্টিং) জাপানে বসবাসরত।
৩ পুত্রঃ ব্যারিষ্টার আফফান আহমেদ সিদ্দিকী, আর্কিটেক্ট আকসিন আহমেদ সিদ্দিকী,কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এইলান আহমেদ সিদ্দিকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *