সংবাদ শিরোনাম
Home / উপজেলা সংবাদ / সীতাকুণ্ডের ২০ স্পটে মাদকের হাট

সীতাকুণ্ডের ২০ স্পটে মাদকের হাট

এম সেকান্দর হোসাইন,২৫আগষ্ট(সীতাকুণ্ড টাইমস ডটকম)-
সীতাকুণ্ডের ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন এলাকার ২০টি স্পটে চলে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। রেল পুলিশ ও স্টেশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় গভীর রাতে এ ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয়দের মতে, সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় চলন্ত ট্রেনে মাদকসেবীদের নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে প্রকৌশলী প্রীতি দাশের করুণ মৃত্যু হতে পারে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত রেলওয়ের পরিত্যক্ত জায়গাগুলো মাদকসেবীদের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে সহায়তা করছেন রেল পুলিশ ও স্টেশন মাস্টাররা। তবে মাদকসেবীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা তারা অস্বীকার করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের কৈবল্যধাম থেকে চিমকি আস্তানা পর্যন্ত প্রায় ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন রয়েছে। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ের সাতটি স্টেশন রয়েছে। এসব এলাকার রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে হাজারো অবৈধ স্থাপনা। স্থানীয় স্টেশন মাস্টারসহ রেলওয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এসব অবৈধ স্থাপনা থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নেন। ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সম্প্রতি কুমিরা রেল স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রেললাইনের পাশে যেসব স্পটে মাদক ও ফেনসিডিল ব্যবসা হয় সেগুলো হলো ভাটিয়ারী ভাঙা পুল, রেল স্টেশনের পাশে বস্তি, পোর্টলিঙ্ক গেট সংলগ্ন সেতু, সীমা অটো রি-রোলিং মিল গেট, ফৌজদারহাট রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকা, বাংলা বাজার, কেশবপুর সানম্যান টেক্সটাইল গেট, শীতলপুর, কুমিরা, গুল আহমদ জুট মিল গেট, সুলতানা মন্দির, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, এসকেএম জুট মিল গেট, সীতাকুণ্ড ঢেবার পাড়, সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকা, দারোগারহাট ও চিমকি আস্তানা এলাকা।
ভাটিয়ারী এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম জানান, এ এলাকার তিনটি স্পটে সন্ধ্যার পর থেকে মদের ব্যবসা শুরু হয়। মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকের ১০/১২টি ছোট ছোট প্যাকেট নিয়ে এসে ব্যবসা শুরু করে। এগুলো বিক্রি শেষ হলে আবার নিয়ে আসে। প্রতি প্যাকেট ৫০ থেকে ১শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। রাত যত বেশি হয় মাদকসেবীদের উৎপাত তত বাড়ে। রেল পুলিশ ও স্টেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের অর্থিক ফায়দা পেয়ে থাকেন। অনেক সময় মাদকসেবীরা মাতাল অবস্থায় চলন্ত ট্রেনে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। সম্প্রতি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় চলন্ত ট্রেনে মাদকসেবীদের নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে প্রকৌশলী প্রীতি দাশের মৃত্যু হতে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।
ভাটিয়ারী ইউপি মেম্বার মো. শফি জানান, তার এলাকায় রেললাইনের ওপর মাদক ব্যবসা হয়। তিনি বিষয়টি কয়েকবার রেল পুলিশ ও স্টেশন মাস্টারকে জানালেও কোনো প্রতিকার হয়নি। তিনি রেললাইন নিরাপদ রাখতে রাতে অবস্থানকারী মাদকসেবীদের আটক করার দাবি জানান।
এদিকে ফৌজদারহাট রেল স্টেশনের মাস্টার শাহ আলম তার আওতাধীন রেলওয়ের জমিতে কোনো অবৈধ স্থাপনা নেই বলে দাবি করেন। তবে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষকে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন। অন্যথায় অল্পসংখ্যক রেলকর্মী নিয়ে বিশাল রেল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
একই প্রসঙ্গে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কৈবল্যধাম থেকে কুমিরা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রেললাইন তাদের দেখাশোনা করতে হয়। এ ফাঁড়িতে মাত্র ৯ জন পুলিশ রয়েছে। তাদের পক্ষে এত বড় এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবুও তারা এ এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।’ তিনি মদ ও ফেনসিডিল ব্যবসায়ীদের উৎপাতের কথা স্বীকার করলেও এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রেল পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় চলন্ত ট্রেনে নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে চট্টগ্রাম সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রকৌশলী প্রীতি দাশ নামে এক যাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ রুবেল নামে একজনকে আটক করে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের টিম গঠন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *