সংবাদ শিরোনাম
Home / প্রথম পাতা / সীতাকুণ্ড এক টুকরো ভালবাসার নাম ঃ বিদায়ী ইউএনও শাহাদাত হোসেন

সীতাকুণ্ড এক টুকরো ভালবাসার নাম ঃ বিদায়ী ইউএনও শাহাদাত হোসেন

সীতাকুণ্ড এক টুকরো ভালবাসার নাম ঃ বিদায়ী ইউএনও শাহাদাত হোসেন

২০২১ সালে যখন সারাদেশ করোনার প্রাদুর্ভাবে পর্যুদস্ত, তখন সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমার পোস্টিং হয়। ছোটবেলা থেকে নানা কারনে সীতাকুণ্ডের নাম জানি। তাই সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েই সত্যিই আপ্লুত হয়েছিলাম।

কাজ শুরু করে এক দারুণ ভালবাসার জালে আটকে পড়লাম। সকল দিক থেকেই সীতাকুণ্ড একজন অফিসারের কাজ করার জন্য আদর্শ জায়গা। সীতাকুণ্ডের প্রায় ৯৯ ভাগ মানুষ অত্যন্ত ভাল মনের অধিকারী, সহজ-সরল, বন্ধুবৎসল। রাজনৈতিক তেমন কোন হানাহানি নাই। এমপি মহোদয়, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়ের মাঝে রাজনৈতিক দুরত্ব থাকলেও তার প্রভাব কখনো প্রশাসনে পড়েনি। দুজনেরই পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। পৌরসভার মেয়র মহোদয় আমার একজন প্রিয় ব্যক্তি। উনাকে মন থেকেই সব সময় সম্মান করেছি। পৌরসভার কাউন্সিলরগণও সবাই অসাধারণ। আমার ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ ছিলেন ভাইয়েই মতো। সকল কাজে তাদের প্রাণখোলা সহযোগিতা পেয়েছি। ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে তাদেরকেও সর্বোত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথেও একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

সীতাকুণ্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানসম স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। সাংবাদিক বন্ধুদের কথা আলাদা করে বলতে হবে। সাংবাদিকদের সাথে প্রশাসনের কাজের এতো চমৎকার সুসমন্বয় বাংলাদেশের আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই। মিস করবো আপনাদের। সীতাকুণ্ডের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষকগণের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। কী চমৎকার একটা টিমওয়ার্ক ছিল আমাদের।

সীতাকুণ্ডের ক্রীড়া সংস্থা ও শিল্পকলা একাডেমির সকল সদস্যদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। মুখে শুধু বলেছি- একটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে চাই। কিভাবে যেন সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। প্রদ্বীপ বাবু ও তার পুরো টিমকে সারা জীবন মনে থাকবে।

সীতাকুণ্ডে অনেকগুলো সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে। আপনারা আপনাদের উদার মানুষিকতা দিয়ে সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন এই আমার বিশ্বাস। বিএনসিসি, স্কাউটসদের সাথে আমার একটা প্রাণের সম্পর্ক আছে। এই সংগঠনগুলোকে আমি ভালবাসি। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে একটা সুসম্পর্ক সব সময় বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। সীতাকুণ্ডের সবার প্রতি ভালবাসা রইল।

আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই আমার অফিসারদের কথা। যোগদানের প্রথম দিনই আমি একটা টিম-বিল্ডিং এর কথা বলেছিলাম। আমার বিশ্বাস আমি ব্যর্থ হইনি। এতো ভাল টিম বাংলাদেশের আর কোথাও নেই- এতো আমার কোন সন্দেহ নেই। সীতাকুণ্ডের ৯০% অফিসার অত্যন্ত কর্মতৎপর, দায়িত্বশীল, ভাল অফিসার। কারো নাম উল্লেখ করলাম না। নাম লিখলে এই তালিকা অনেক লম্বা হয়ে যাবে। আমার এই টিমের জন্য আমি সত্যিই গর্বিত।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবার সাথে সুসমন্বয় করার চেষ্টা করেছি। আগের এডিশনাল এসপি, ওসি সাহেব, সেকেন্ড অফিসারকে মিস করি। বর্তমান এডিশনাল এসপি, ওসি সাহেবের নেতৃত্বেও একটি ভাল টিম কাজ করছে। কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিপিপি সবার সহযোগিতা পেয়েছি। সীতাকুণ্ডের ফায়ার সার্ভিস তাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে সবার মন জয় করেছে। এই টিমটি আমার হৃদয়ের কাছাকাছি অবস্থান করেছে। বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ফায়ার ফাইটারদের কথা মনে হলে এখনো আমার মন কেঁদে উঠে।

উপজেলায় এসি (ল্যান্ড)- ইউএনও এর ডান হাত হিসেবে কাজ করে। আমিও এসি (ল্যান্ড)কে ছোট ভাই হিসেবেই দেখেছি। তাদের পূর্ণ সহযোগিতা, সম্মান পেয়েছি। আস্থা রেখেছি, নির্ভর করেছি। এই দুই বছর তিন মাস সময়ে ৩ জন এসি (ল্যান্ড) আমার সাথে কাজ করেছে। ভালবাসা তোমাদের প্রতি…।

আমার অফিসের সকল স্টাফ আমার শরীরের অংশের মতো। পরিচ্ছন্নতা কর্মী, অফিস সহায়ক, নাইটগার্ড, ড্রাইভার, আনসার, সকল সহকারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা- সবাই ছিল আমার এক একটি অঙ্গ। এরা সবাই মিলে আমি ইউএনও। ভালবাসা রইল…

সাধারণ মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেছি। অসহায় এর সহায় হওয়ার চেষ্টা করেছি। সকল মানুষকে যথাযথ সম্মান দেখানো আমার পারিবারিক শিক্ষা। চেষ্টা করেছি হেসে কথা বলতে। চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষের সাথে, সীতাকুণ্ডের সাথে মিশে যেতে। সব সময় হয়তো সফল হইনি, তবে চেষ্টার ত্রুটি করেনি।

আমার অত্যন্ত সম্মানিত সীতাকুণ্ডের একজন সচিব স্যার, চট্টগ্রামের ডিসি স্যার, এমপি স্যার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়সহ আরো অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী চেয়েছিলেন আমি যেন অন্তত নির্বাচন পর্যন্ত সীতাকুণ্ডে থেকে যাই। আমিও মনে মনে সেটিই পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ পারিবারিক প্রয়োজনে আমার ঢাকা যাওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত কত মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। নিজের পরিবারের সমস্যার সময় তা অবহেলা করার অর্থ নিজেকে ঠকানো। তাই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চেয়েছিলাম কাজ কম এমন একটা জায়গায় গিয়ে কিছুদিন রিলাক্স করবো। কিন্তু শুভাকাঙ্ক্ষী সিনিয়রগণ “পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়” এর সচিব স্যারের পিএস এর গুরু দায়িত্ব ঘাড়ে তুলে দিয়েছেন। সবার দোয়া থাকলে ব্যর্থ হবো না ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে, সীতাকুণ্ডের সকলের প্রতি একরাশ ভালবাসা রেখে বলতে চাই-

মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক
আমি তোমাদেরই লোক

ভালবাসার সীতাকুণ্ড
ভালবাসি সীতাকুণ্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *