সৌমিত্র চক্রবর্তী, ২০সেপ্টেম্বর(সীতাকুন্ড টাইমস )
সীতাকুন্ডের দক্ষিণ শীতলপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম শিল্প প্রযুক্তি কারখানা। কম্পিউটারাইজ পদ্ধতিতে এই কারখানায় মার্বেল পাথর, টাইলস, ষ্টিল, লোহাসহ সবরকম ধাতব বস্তুর উপর তৈরি করা হচ্ছে অসাধারণ সব শিল্প কর্ম। যা যেকোন স্থাপনাকে করে তুলছে অভিজাত।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আমেরিকা ও ইতালির কম্পিউটারাইজ পদ্ধতিতে এই প্রতিষ্ঠানে মার্বেল পাথর, গ্লাস, স্টেইনলেস ষ্টিল, লোহা, কাঠ, টাইলসসহ বিভিন্ন রকম ধাতব পদার্থের উপর অনন্য সব শিল্পকর্ম গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া কেউ পছন্দের ডিজাইনের কথা জানালে কারখানার কর্মীরা অতি অল্প সময়েই তা নির্মাণ করে সাপ্লাই দেয়। দেখা যায়, গ্লাস, ষ্টিল, কাঠ, লোহা বা অন্যান্য ধাতব স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে কেটে রুচিশীল শিল্পকর্ম তৈরি করলেও কোন কিছুতে একটি ওয়েল্ডিং বা হাতের ছোঁয়া নেই। ধাতব পদার্থটি যত বড় বা ছোট হোক না কেন শুধুমাত্র শিল্পকর্মের ডিজাইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অংশ কেটে নেওয়া হয়। কারখানার অপর অংশে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম কম্পিউটারাইজ সিএনসি ওয়াটার জেট এবং সিএনসি প্লাজমা কাটিং ওয়াকশপ। এখানেও হাতের স্পর্শ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যেকোন পদার্থ ০.১% পর্যন্ত নিখুঁতভাবে কাটা যায়। এতে কাজগুলি দারুন টেকসই থাকছে।
কারখানার কর্মীরা জানান, সীতাকু- থানাধীন দক্ষিণ শীতলপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপার্শ্বে এস.এল এডভান্স টেকনোলজি লিমিটেড নামক দেশের একমাত্র শিল্প প্রযুক্তি কারখানাটি স্থাপিত হয় ২০১৩ সালে। শিল্পপতি মোঃ লোকমানের মালিকানাধীন এ শিল্প প্রযুক্তি কারখানায় ইতালি ও আমেরিকান প্রযুক্তির সমন্বয়ে প্রায় সবরকম ধাতব পদার্থের উপর চোখ জুড়ানো শিল্পকর্ম গড়ে তোলা হয়। যা যেকোন প্রতিষ্ঠানের মানকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় এস.এল শিল্প গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এই এস.এল এডভান্স টেকনোলজি। দেশের সব শ্রেণীর মানুষ যেন এই শিল্প সহজেই ব্যবহার করে নিজের বাসস্থানসহ আশপাশের পরিবেশকে সুন্দর ও মনোগ্রাহী করে তুলতে পারেন সেই লক্ষে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক শিল্পপতি মোঃ লোকমান বলেন, আমাদের দেশের মানুষ নিজের রুচি অনুযায়ী ঘর-বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সাজিয়ে তোলেন ঠিকই কিন্তু সেসব শিল্পকর্ম মোটেও টেকসই নয়। কারণ, এখানে লোহা, ষ্টিল, কাঠ বা অন্যান্য যেসব ধাতবের উপর কাজ করা হয় তা হচ্ছে জোড়াতালির। মূলত ওয়েল্ডিংয়ের মাধ্যমেই শিল্প গড়ে তোলায় সেগুলি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এছাড়া হাতে তৈরি হওয়ায় সেগুলির ফিনিশিংও ভালো না। কিন্তু এখানে কম্পিউটার সফট ওয়ারের মাধ্যমে শিল্পকর্ম এঁকে মেশিনে যে ধাতব পদার্থটি রাখা হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই শিল্প নির্মিত হয়ে যায়। তিনি বলেন, যেকোন বাসা-বাড়ি, অভিজাত হোটেল অথবা স্থাপনার সোন্দর্য্য বৃদ্ধিতে আমাদের এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে অদ্বিতীয়। অল্পসময়েই এ শিল্প সবশ্রেণীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি ও মাদামবিবির হাট নৌ-বাহিনী কার্যালয়ের একাধিক টিম সরেজমিনে এই কারখানা পরিদর্শন করে কিছু কাজের ব্যাপারে আলাপ করেছেন। তিনি বলেন, দেশে বহু শিল্প কারখানায় এমন কিছু যন্ত্র আছে যা কোনভাবে বিকল হলে কেবলমাত্র এই প্রযুক্তিতে তৈরি করার জন্য আবার বিদেশে পাঠাতে হতো। আর এ কারণে অনেক সময় বেশ কয়েকদিন প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতেও হয়েছে। কিন্তু এ কারখানা স্থাপন হওয়ায় সেই সমস্যাও সমাধান হয়েছে। এখন সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।