সংবাদ শিরোনাম
Home / ইউনিয়ন সংবাদ / মহানগর গ্রামে হত্যার ভয়ে লুকিয়ে থেকেও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ফাহিমা

মহানগর গ্রামে হত্যার ভয়ে লুকিয়ে থেকেও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ফাহিমা

fahima-fileminimizer-fileminimizer-fileminimizer.jpgমহানগর প্রতিনিধি,১৩মে (সীতাকুন্ড টাইমস ডটকম)- কেউ তাকে মিষ্টি খাওয়ায় নি ; নিজেদেরও সামর্থ ছিলনা মিষ্টি কিনে খাওয়ার! পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার দিনেও ঘরে খাবার কিছু ছিলনা। মা আনোয়ারা বেগম পরের ঘরে বুয়া-ঝিয়ের কাজ করে আনলেই তাদের প্রতিদিনের খাওয়া জুটে। বাবা হেলাল উদ্দীন মানসিক রোগী। এখানে-সেখানে ঘুরে ফিরে দিন কাটায়। নিজের খাবারও নিজে যোগাড় করতে পারে না। তার মধ্যে তারা নিজেদের বাড়ী ছাড়া। জেঠা থানায় মামল করে ঘর ছাড়া করেছে। এক দিকে পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়। অন্যদেিক মা-মেয়েকে হত্যা করার তাড়া করছিল এসব দুর্বৃত্তরা। লুকিয়ে লুকিয়ে অর্থকষ্টে অর্ধহারে-অনাহারে থেকেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ফামিদা আক্তার।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পত্যান্তাঞ্চলে অবস্থিত ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়নের মীর সিরাজুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ফাহিমা। বিদ্যালয়ের লাগওয়া মহানগরে অজয়পাড়া গ্রামে তাদের বাড়ী। চলাচলের কোন পথ নেই বাড়ীর। বাড়ীর চর্তুরদিকে ফসরের জমিতে বৃষ্টির পানি থৈথৈ করছে। এ অবস্থায় সেখানে গিয়েও তার দেখা মিললো না। তার এক সহপাঠি জানালো, তারা বাড়ীতে থাকে না। এমনকি কেউ তাদের খোঁজ পর্যন্ত দিতে পারছিলো না। তাদের বাড়ী থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে নানাবাড়ী। সেখানে গিয়েও তার সন্ধান পাওয়া গেল না। তার মামী বললেন, ‘একটু আগেই তারা এখান থেকে মা-মেয়ে চলে গেছে।’ এর বেশি খোঁজ দিতে পারেন নি তিনি। অবশ্য পরক্ষণে তিনি একটি মোবাইল ফোনে এক ঘণ্টার মধ্যে ডেকে আনলো ফাহিমাকে।
চোখে-মুখে বিষন্নতা আর চরম হতাশা আক্রান্ত ফাহিমা। গত দুই মাসে আগে মায়ের চাকুরীটা চলে যায়। একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থায় দুই হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করতেন তিনি। মায়ের চাকুরী চলে যাওয়ায় চলতি মাস থেকে তিনটি টিউশনিতে সে ছাত্র পড়াচ্ছে। অবশ্য সেখান থেকে কত টাকা পাবে তা এখোনো জানেনা। ইউনিয়নের মীরের হাট এলাকায় একটি ঘরভাড়া নিয়ে তারা থাকে। পাঁচশত টাকায় ঘর ভাড়া।
নিজেদের বাড়ীর প্রসঙ্গে বলে, ‘সাতান্ন শতক জায়গার উপর তাদের বাড়ী। বাড়ীর কিছু অংশ জেঠা দখল করে নিয়েছে। টেস্ট পরীক্ষা চলাকালে তাদের মা-মেয়ে ও বাবার বিরুদ্ধে থানায় মামলা টুকে দেয়। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়ী ছেড়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। অনেক শালিসী বৈঠকও হয়েছিল। জেঠারা জোরদার। বাড়ীতে গেলে হত্যা করবে হুমকিও দিচ্ছিল। ভয়ে এখনো বাড়ী যেতে পারছেন তারা।
ফাহিমা বলে, ‘আমি জিপিএ ৫ পাব তা কখনো কল্পনাও করিনি। সকলের দোয়া আর আমার মা-বাবা ও শিক্ষকের সহযোগীতায় আমার এ সফলতা। বহু দুঃখ-কষ্ট সহে লেখাপড়া করতে হয়েছে। পরের বাড়ীতে কাজে গেলে সেদিন আর লেখাপড়া করা সম্ভব হতো না। যখন সময়-সুযোগ পেতাম পড়তাম। বিশেষ করে, সন্ধ্যা থেকে রাত দুটা পর্যন্ত লেখাপড়া করতাম। স্কুলের অজিত স্যারের কাছে উচ্চতর গণিত বিষয়ে প্রাইভেট পড়েছি। তিনি কখনো আমার কাছ থেকে প্রাইভেটের টাকা নেননি। পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় পড়ে যাই। ফরম ফিলাপের টাকা এসেছিল ৩১’শ টাকা। আমাদের এলাকার মামুন মেম্বার চাঁদা তুলে দিয়েছিলেন ১৫’শ টাকা। ডা. মানিক লাল দিয়েছেন ৫’শ টাকা। আমার মামী সুলতানা কাউছার দিয়েছেন ৫’শ টাকা। এলাকার ‘প্রতিবাদী কণ্ঠ’ নামে একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিয়েছে ৫’শ টাকা। আর স্কুল কর্তৃক পক্ষ ১’শ টাকা মাপ করায় ফরম ফিলাপ করার সুযোগ পাই।’
তার লেখাপড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছার কথা জানালেন এলাকার অবসর প্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা আকবর হোসেন। তিনি বললেন, ‘এমনও দেখা গেছে, তারা অন্য কৃষকের বাড়ীতে ধান নিতে গিয়ে রাত কেটে যায়। সেখান থেকে পরের দিন ঠিকই সকালে স্কুলে যেতে দেখতে পেয়েছি তাকে ।’
স্থানীয় ডাক্তার মহিউদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,ফাহিমা পরিবারের একমাত্র সন্তান। তার বড়ই ইচ্ছে ডাক্তার হওয়া। এজন্য তাকে শহরের ভালো কলেজে ভর্তি হতে হবে। চট্টগ্রাম কলেজ অথবা হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজে পড়তে ইচ্ছুক সে। শহরে শিক্ষাব্যায় বহন করবে কি করে জানতে চাইলে সে বলে, ‘প্রয়োজন হলে বাসায় বাসায় গিয়ে ছাত্র পড়াবো। দেশবাসীর সহযোগীতা নিয়ে ডাক্তার হয়ে আত্ম মানবতার সেবা ও মায়ের ইচ্ছে পূরণ করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *